৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ঝুলন্ত ক্যাবল কারে আটকে ৬ শিশুসহ ৮ জন

এই ক্যাবল কারেই আটকে আছে ৬ শিশুসহ ৮ জন। ছবি: এএফপি
এই ক্যাবল কারেই আটকে আছে ৬ শিশুসহ ৮ জন। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বাট্টাগ্রাম নামের জায়গায় একটি ঝুলন্ত ক্যাবল কারে প্রায় ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে আছে ৬ স্কুলগামী শিশু সহ মোট ৮ জন। তাদেরকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে একাধিক নিরাপত্তা সংস্থা।

আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ক্যাবল কারের ২টি তার ছিঁড়ে গেলে এই দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।

ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত কুইক রেসপন্স দলকে আটকে পড়াদের উদ্ধারের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে।

প্রায় ১৫ মিনিট ধরে একটি সামরিক হেলিকপ্টার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানান প্রশাসনিক এলাকা আলাই'র সহকারী কমিশনার জাওয়াদ হোসেন। 

তিনি ডনকে জানান, প্রাদেশিকে সরকারের উদ্ধারকারী বাহিনী 'রেসকিউ ১১২২' এর সদস্যরা ইতোমধ্যে ক্যাবল কারের নিচে জাল বিছানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে এবং আরও একটি সামরিক হেলিকপ্টার উদ্ধার কাজে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, 'যদি দ্বিতীয় হেলিকপ্টারটি যাত্রীদের উদ্ধারে ব্যর্থ হয়, তবে রেসকিউ ১১২২ দলের সদস্যরা মাটি থেকে স্নরকেল ব্যবহার করে তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাব। আমরা শাংলা জেলার বেশাম শহরের স্থানীয়দের খবর দিয়েছি, কারণ তাদের দিয়ামার ভাষা বাঁধের কাছাকাছি জায়গায় এ ধরনের উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।''

এছাড়াও, সামরিক বাহিনীর র‍্যাপিড রেসপন্স ফোর্স ও স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের (এসএসজি) কমান্ডোদের এ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।

আজ সকালে আলাই তেহসিলে (প্রশাসনিক এলাকা) আনুমানিক সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ৬ শিক্ষার্থী ও ২ স্থানীয় ব্যক্তি ক্যাবল কারে করে স্কুলে যাচ্ছিল। সহকারী কমিশনার জাওয়াদ জানান, ক্যাবল কারের ২টি তার ছিঁড়ে গেলে তারা আটকা পড়েন।

তিনি আরও জানান, পাহাড়ি এলাকায় নদীর ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য নির্মিত এই ক্যাবল কার সেবা ১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। সেতু বা সড়ক না থাকায় নদী পারাপারের জন্য এই সেবা ব্যবহার করেন স্থানীয়রা।

ক্যাবল কার যেখানে আটকে আছে, তার চারপাশে উঁচু পাহাড় ও পাথুরে ভূপৃষ্ঠ দেখা যায়। এর নিচ দিয়ে ঝাংরি নদী বইছে।

পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) প্রাক্কলন অনুযায়ী, ক্যাবল কারটি ১ থেকে ২ হাজার ফুট উঁচুতে আটকে আছে।

সহকারী কমিশনার জাওয়াদ দাবি করেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়েই প্রাদেশিক চিফ সেক্রেটারির কাছে উদ্ধারকাজের জন্য হেলিকপ্টার চান।

কিন্তু প্রায় ৪ ঘণ্টার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার এসে পৌছায়। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জাফর ইকবাল বিষয়টি জিও নিউজকে নিশ্চিত করেন।

ক্যাবল কারে আটকে থাকা যাত্রী গুলফারাজ জিও নিউজকে জানান, ২ শিক্ষার্থী বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছে।

গুলফারাজ (২০) জানান, আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।

তিনি প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন, 'মানবিক দৃষ্টিকোণ' থেকে চিন্তা করে দ্রুত তাদেরকে উদ্ধারের উদ্যোগ নিতে। 'আমাদের এলাকার মানুষজন এখানে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছেন', যোগ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খাবার আছে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাদের কাছে এমন কী পান করার জন্য পানিও নেই।

'খাবার কোথা থেকে আসবে? এ মুহূর্তে আমাদের পানির খুবই প্রয়োজন', যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, তার মোবাইলের ব্যাটারি ফুরিয়ে আসছে আর বাকিদের কাছে 'সাধারণ মোবাইল ফোন' আছে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার কর্তৃপক্ষকে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর পাশাপাশি তিনি পার্বত্য এলাকায় এ ধরনের সব সেবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষার নির্দেশ দেন। যেসব ক্যাবল কার সেবা জীর্ণ দশায় রয়েছে বা নিরাপত্তার মানদণ্ড মেনে চলছে না, সেগুলোকে শিগগির বন্ধ করে দেওয়ারও নির্দেশ দেন কাকার।

স্কুল শিক্ষক জাফর ইকবাল ব্যাখ্যা করেন, এলাকায় প্রয়োজনীয় সড়কের অভাবে প্রতিদিন অন্তত ১৫০ শিক্ষার্থী ক্যাবল কারের এই বিপদজনক যাত্রায় অংশ নিতে বাধ্য হয়।

'(স্কুলে যাওয়ার) আর কোনো বন্দোবস্ত নেই', যোগ করেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।

জাফর ইকবাল জানান, ৮ বছর আগে এই ক্যাবল কার চালু হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

55m ago