‘ভোলে বাবার’ গাড়ির ধুলা সংগ্রহে দুর্ঘটনার সূত্রপাত, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১২১ হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২৮ জন। গতকাল মঙ্গলবার রাজ্যের হাথরস জেলায় প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে।
আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার হাথরসের একটি গ্রামে 'সৎসঙ্গ' (প্রার্থনাসভা) নামে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন স্ব-ঘোষিত ধর্মগুরু 'ভোলে বাবা'। তার আসল নাম সুরজ পাল ওরফে নারায়ণ শাকর হরি। তিনি শাকর বিশ্ব হরি বা ভোলে বাবা নামেই বেশি পরিচিত।
সৎসঙ্গ শেষে ভোলে বাবা যখন ঘটনাস্থল ছেড়ে যেতে উদ্যত হন, তখন তার ভক্ত-অনুসারীরা তার গাড়ির চাকার দাগ থেকে ধুলা সংগ্রহের জন্য হুড়াহুড়ি শুরু করলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। পদদলিত হয়ে মারা যান অসংখ্য মানুষ, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও অন্তর্ভুক্ত।
এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, সেবাদার নামে পরিচিত সুরজ পালের সহযোগীরা লাঠি বহন করছিলেন। অনুসারীরা ভোলে বাবার গাড়ির দিকে আগাতে শুরু করলে তারা বাধা দেয়। যার ফলে দৌড়ে আসা মানুষ একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যেতে শুরু করে। এ সময় অনেকেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান।
পুলিশের এফআইআর অনুযায়ী, আয়োজকরা ৮০ হাজার মানুষের জন্য এই প্রার্থনাসভার অনুমতি চাইলেও এতে জমায়েত হন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই বিশাল জনসমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাত্র ৪০ জন পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। গোলযোগ ছড়িয়ে পড়লে তারা বিপাকে পড়ে যান।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী এ ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছেন। আগ্রার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক এবং আলীগড়ের কমিশনার এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি বলেছেন, ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই দুর্ঘটনা সূত্রে দায়ের করা মামলা আসামি হিসেবে সুরজ পাল বা 'ভোলে বাবার' নাম উল্লেখ করা হয়নি। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ আছেন তিনি।
এফআইআরে অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক দেবপ্রকাশ মাধুকর ও অন্যান্য অজ্ঞাত ব্যক্তিদের কথা বলা হয়েছে।
এফআইআরে বলা হয়েছে, আয়োজকরা এ অনুষ্ঠানে কতজন যোগ দিতে পারেন, সে বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছিল এবং সেখানকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার শর্তও মানা হয়নি। আয়োজকদের গাফিলতির কারণে পদদলিত হয়ে ১২১ জন মারা গেছেন এবং তারা ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, যেমন হতাহতদের কাপড় ও জুতা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
আজ বুধবার হাথরাস সফর করতে পারেন যোগী আদিত্যনাথ। পিটিআইকে এই তথ্য জানিয়েছেন একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'রাজ্য সরকার এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছে। ষড়যন্ত্রকারী ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হবে। আমরা খুঁজে বের করব এটা ষড়যন্ত্র ছিল না নিছক দুর্ঘটনা।'
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী দলের সভাপতি অখিলেশ যাদব জানান, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পেছনে কী কী ভুল রয়েছে, তা চিহ্নিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা পাওয়া যায়।
'সুষ্ঠু তদন্ত ও সে অনুযায়ী শাস্তিমূলক পদক্ষেপ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি থামাবে', যোগ করেন তিনি।
ভোলে বাবাকে গ্রেপ্তার করা হবে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান প্রশান্ত কুমার গতকাল জানান, 'এ মুহূর্তে এ ধরনের সিদ্ধান্ত তদন্তের ওপর নির্ভর করছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে তদন্তকে প্রভাবিত করতে চাই না।'
Comments