দুর্ঘটনার জন্য ভোলে বাবা দায়ী নন এবং তিনি পলাতকও নন: আইনজীবী
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে ১২১ জন নিহত হয়। মঙ্গলবার রাজ্যের হাথরস জেলায় প্রাণহানির এ ঘটনার পর থেকে 'নিখোঁজ' ছিলেন ভোলে বাবা। তবে তার আইনজীবী বলেছেন, এ ঘটনায় ভোলে বাবার দায় নেই এবং তিনি পলাতক নন।
আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলার একটি গ্রামে 'সৎসঙ্গ' (প্রার্থনাসভা) নামে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন স্ব-ঘোষিত ধর্মগুরু 'ভোলে বাবা'। তার আসল নাম সুরজ পাল ওরফে নারায়ণ শাকর হরি। তিনি শাকর বিশ্ব হরি বা ভোলে বাবা নামেই বেশি পরিচিত।
সৎসঙ্গ শেষে ভোলে বাবা যখন ঘটনাস্থল ছেড়ে যেতে উদ্যত হন, তখন তার ভক্ত-অনুসারীরা তার গাড়ির চাকার দাগ থেকে ধুলা সংগ্রহের জন্য হুড়াহুড়ি শুরু করলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। পদদলিত হয়ে মারা যান অসংখ্য মানুষ, যাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।
আড়াই লাখ মানুষ তার বক্তব্য শোনার জন্য সৎসঙ্গে উপস্থিত হন।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সুরজ পালকে এই দুর্ঘটনার পর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। গুঞ্জন রটে, পালিয়ে গেছেন এই তথাকথিত ধর্মগুরু। তবে পরবর্তীতে স্থানীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়, তিনি তার নিকটবর্তী আশ্রমেই আছেন। তবে এই আশ্রমের দরজাগুলো চেইন দিয়ে আটকে রেখেছে তার সমর্থকরা, যাতে বাইরের মানুষ সেখানে যেতে না পারেন।
ভোলে বাবার আইনজীবী এ.পি.সিং এএফপিকে জানান, 'ভোলে বাবা মঙ্গলবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী নন এবং তিনি পলাতকও নন।'
'তার লুকিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। তিনি জীবনেও কখনো লুকিয়ে থাকেননি', যোগ করেন সিং।
ভোলে বাবার আইনজীবী আরও বলেন, 'তিনি (ভোলে বাবা) আইনের শাসনে বিশ্বাসী। তিনি পুলিশের নির্দেশনা অনুসরণ করছেন।'
সিং বলেন, জনতার মধ্যে কিছু 'সমাজবিরোধী' মানুষ লুকিয়ে ছিল, যারা পদদলনের ঘটনার জন্য দায়ী। এই ঘটনার পুলিশি তদন্তে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন ভোলে বাবা।
'তদন্ত চলছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা এতে অংশগ্রহণ করব', যোগ করেন তিনি।
উত্তর প্রদেশের মৈনপুরী জেলার জেলা সদর মৈনপুরীতে ভোলে বাবার একটি আশ্রম রয়েছে। এই আশ্রমটি হাথরসের সমাবেশস্থল থেকে খুব একটা দূরে না।
এএফপি ভোলে বাবার অবস্থান জানতে চাইলে এ প্রশ্নের জবাব দেননি এ.পি. সিং। তবে তিনি জানান, উত্তর প্রদেশেই আছেন এই ধর্মগুরু।
মামলার চার্জশিটে অনুষ্ঠানের আয়োজকসহ একাধিক ব্যক্তির নাম থাকলেও ভোলে বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার আগে ভারতে তেমন একটি পরিচিত ছিলেন না ভোলে বাবা। তবে উত্তর প্রদেশে তিনি খুবই জনপ্রিয়। সেখানে লাখো মানুষ তার ভক্ত-অনুসারী, যার বড় একটি অংশ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী সদস্যরা।
১৭ বছর আগে পুলিশের উপ-পরিদর্শকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ধর্মগুরু হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন ভোলে বাবা। একাধিক প্রতিবেদন মতে, পুলিশে থাকতেই তিনি ধর্মীয় বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে অনুসারীর সংখ্যা বাড়ার পর পুলিশের চাকরি ছাড়েন এসপি সিং/সুরজ পাল ওরফে নারায়ণ শাকর হরি।
Comments