আনিসুজ্জামান ভীষণ চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন
'আনিসুজ্জামান নেই কিন্তু তার ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগটা আছে। তারা আজও আমাদের অনেক ভালোবাসেন। কারণ আনিসুজ্জামান নিজেই মানুষের আপন ছিলেন। অনেকের প্রিয় মানুষ সঙ্গে বন্ধুবৎসল শিক্ষক । তবে ছিলেন ভীষণ চাপা স্বভাবের। চারপাশের অনেক কিছু দেখতেন, অনেক সহ্য করে বলতেন কম। ভালবাসতো দেশ ও দেশের সাহিত্য সংস্কৃতিকে'
আজ রোববার জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলেন তার সহধর্মিণী সিদ্দিকা জামান। ২০২০ সালের এই দিনে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান অধ্যাপক রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। তিনি ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে তিনি তৎকালীন পূর্ব বাংলায় চলে আসেন।
মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন কিনা কিংবা আজ কোন বিশেষ আয়োজন আছে তাকে নিয়ে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকা জামান বলেন, আমরা ঠিক সেভাবে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি না । কারণ আনিসুজ্জামান বলে গেছেন, আমরা পরিবার যেন মৃত্যুবার্ষিকী পালন বা সরাসরি আয়োজন না করি। কেউ যদি তার জীবন ও কর্ম নিয়ে কোন আয়োজন করেন তাহলে তাতে যেন আমরা পাশে থাকি কিন্তু সরাসরি আয়োজন নিয়ে তার না ছিল।
আনিসুজ্জামান ২০১৭ সালে ৮০তম জন্মবার্ষিকীর অভিভাষণে বলেন, 'অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক আফসোস করতেন, "আপনি তো আর লেখাপড়া করলেন না!" তার মতো মানুষের প্রত্যাশা যে আমি পূরণ করতে পারিনি, তা আমার জন্য দুঃখের বিষয়। ভেবে দেখেছি, আশানুরূপ কিছু করতে না পারার তিনটে কারণ আছে আমার— সামাজিক অঙ্গীকার পূরণের চেষ্টা, স্বাভাবিক আলস্য ও অস্বাভাবিক আড্ডাপ্রিয়তা। সামাজিক কর্তব্যবোধ আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেজন্য সময় দেওয়াটা আমি কখনোই সময়ের অপচয় মনে করতে পারিনি। নিজের আলস্য অবশ্য ক্ষমার অযোগ্য।'
উল্লেখ্য আনিসুজ্জামান শিক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মভূষণ পেয়েছেন।
২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট. ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
Comments