আধুনিক ফেনী ও বাংলা সাহিত্যের রূপকার নবীনচন্দ্র সেন
![নবীনচন্দ্র সেন নবীনচন্দ্র সেন](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/02/10/pm_4.jpg?itok=R4A6AoqZ×tamp=1676029378)
'বেহারে যখন তিন বৎসর শেষ হইয়া বদলি আসন্ন হইল, তখন স্বামী স্ত্রী দুজনেই ভাবিলাম যে বহু বরস বিদেশে উড়িষ্যা বাঙ্গালা বেহার ঘুরিয়া কাটাইলাম। যদি বাড়ির নিকটে ফেণী সাব-ডিভিসনটি পাইতে পারি বড় সুবিধা হয়। শ্রীভগবান সেই আশা আজ পূর্ণ করিলেন। মনে কত আনন্দই হইয়াছে। আমি পার্শনেল এসিসটেন্ট থাকিতে ১৮৭৫ সালে এ সাবডিভিসন খোলা হইয়াছিল। এই স্থানটি চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লা হইতে বহুদূরে, অথচ তিন জেলার রাস্তার সঙ্গম স্থলে অবস্থিত। এখানে দিনে ডাকাতি হইত। আমার চেষ্টায় সাব-ডিভিসন খোলা হয়, এবং এই স্থানটি নির্বাচিত হয়। এ কারণে এ স্থানটির উপর আমার একটুক আন্তরিক স্নেহ ছিল।'
'আমার জীবন স্মৃতিকথা'র একাংশে মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন এমনভাবেই লিখেছিলেন ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার কর্মরত সময়ের স্মৃতি। নবীনচন্দ্র সেন দুই দফায় প্রায় ৯ বছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আধুনিক ফেনীর গোড়াপত্তন মূলত হয়েছিল তার হাত ধরেই।
নবীনচন্দ্র সেনের ভূমিকা একদিকে যেমন বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম কবি হিসেবে, তেমনি তার ভূমিকা প্রশাসক হিসেবে, আবার সংগঠক হিসেবেও তার ভূমিকা অনেক।
কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্যে তার সব সৃষ্টি যেমন প্রমাণ, সংগঠক হিসেবে প্রমাণ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, দক্ষ প্রশাসক হিসেবে প্রমাণ জঙ্গলাকীর্ণ স্থান থেকে আজকের আধুনিক ফেনী শহর।
কবি নবীনচন্দ্রের প্রথম কবিতা 'কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি' তৎকালীন সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকা এডুকেশন গেজেটে যখন প্রকাশ হয়েছিল, তখন তিনি এফ এ শ্রেণী বা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। প্রথম গ্রন্থ 'অবকাশরঞ্জিনী' প্রকাশিত হয়েছিল ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখের দিনে। এটি ছিল 'অবকাশরঞ্জিনী'র প্রথম খণ্ড। দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল আরও ছয় বছর পর।
বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন পরবর্তী কাব্য রচয়িতাদের মধ্যে দুজন ছিলেন সবচেয়ে খ্যাতিমান। প্রথমজন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যজন নবীনচন্দ্র সেন। বাংলা মহাকাব্যের ধারায় হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেন এই দুজনের অবদান হলো স্বদেশ প্রেমের উত্তেজনা সঞ্চার।
ডেপুটি কালেক্টর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নবীনচন্দ্র সেনের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল যশোর জেলায়। এরপর তাকে পাঠানো হয়েছিল বিহারে। সেখান থেকে উড়িষ্যা হয়ে তিনি ফের ফিরেছিলেন পূর্ববঙ্গে। মাগুরাতে কিছুদিন এসডিও থাকার পর তাকে পাঠানো হয়েছিল নোয়াখালীতে। সেখানে পাঁচ মাস এসডিও ছিলেন তিনি। এ সময় নোয়াখালীরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। বিশেষ করে নোয়াখালীর স্টিমার সার্ভিস তিনিই চালু করেছিলেন।
হেমচন্দ্র তার 'বৃত্রসংহার' কাব্যে যেমন পৌরাণিক কাহিনীর মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ঠিক তেমনি নবীনচন্দ্র সেন 'পলাশীর যুদ্ধ' মহাকাব্য দিয়ে তুলে ধরেছেন অনন্য এক স্বদেশপ্রেমী জাগরণ। 'পলাশীর যুদ্ধ' মহাকাব্য প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭৫ সালে।
মহাকাব্যের ধারায় এক নতুন বিস্তৃতি দেখিয়েছেন নবীনচন্দ্র সেন। যেমন তার তিন খণ্ডে রচিত মহাকাব্য রৈবতক, কুরুক্ষেত্র এবং প্রভাস ছিল মহাকাব্যের তিনটি স্বতন্ত্র অংশ। এই কাব্য তিনটির মধ্য দিয়ে কৃষ্ণ চরিত্রকে নবীনচন্দ্র সেন বিচিত্র কল্পনায় ফুটিয়ে তুলেছেন। যার তুলনা বাংলা ভাষায় আর পাওয়া যায় না।
নবীনচন্দ্র সেনের মতে, আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির সংঘর্ষের ফলেই মূলত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হয়েছিল। আর্য ও অনার্য দুই সম্প্রদায়কে মিলিত করেই শ্রীকৃষ্ণ প্রেমরাজ্য স্থাপন করেছিলেন।
নবীনচন্দ্র সেন মহাকাব্য যেমন রচনা করেছেন, তেমনি ভগবদগীতা ও মার্কণ্ডেয়-চণ্ডীরও পদ্যানুবাদ করেছেন। যিশুখ্রিস্টের জীবন অবলম্বনে তিনি যেমন লিখেছিলেন কাব্যগ্রন্থ 'খ্রিস্ট', তেমনি বুদ্ধদেবের জীবন অবলম্বনে লিখেছেন 'অমিতাভ', কিংবা শ্রী চৈতন্যের জীবন অবলম্বনে 'অমৃতাভ'। কেবল পদ্যেই নয়, গদ্যেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তার আত্মজীবনী 'আমার জীবন' খুবই সুখপাঠ্য। সেখানে নবীনচন্দ্র সেন তার বাল্যজীবন, ছাত্রজীবন ও পিতৃহীন জীবন অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন নিজের জীবনের নানা অধ্যায়, ভারতবর্ষের তৎকালীন সময়কালসহ বহুদিক।
শৈশবে নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন দেবদেবী ভক্ত। স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষক আনন্দবাবু তার হৃদয়ে এক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন, চিনিয়েছিলেন ব্রাহ্মধর্মের ইতিবৃত্ত। যা শুনে ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন নবীনচন্দ্র। তিনি তার আত্মকথায় লিখেছিলেন, 'খ্রিস্টান ও মুসলমানেরা হিন্দুদিগকে ঠাট্টা করিয়া বলিত,
'আসিলে আশ্বিন হিন্দু হয় পাগল।
গিড়ার কড়ি দিয়ে কেনে ছাগল।
কায়স্থে কাটে, বামনে খায়।
মাটির ঠাকুর হাঁ করে চায়।'
এতদিন উহা হাসিয়া উড়াইতাম। কিন্তু আনন্দবাবু বুঝাইয়া দিলেন এই মহা বাক্যের মধ্যে গভীর তত্ত্ব আছে। খড় মাটির দ্বারা মানুষের গঠিত ঠাকুর কি প্রকারে ঈশ্বর হইতে পারে? এরূপ পুতুল পূজা 'পৌত্তলিকতা', - কুসংস্কার- ঈশ্বরের অবজ্ঞা। আর বুঝাইতেন যে গোপনে লাড়ু- গোপাল-সন্নিভ বিস্ফারিতাধর পাঁওরুটি ভক্ষন করা যায়। ব্রাহ্মধর্মের মাহাত্ম্য ও সত্যতা হৃদয়াঙ্গম বা উদরস্থ করিতে, আমি পেটুকের জন্য আর অন্য যুক্তির আবশ্যক হইল না।'
পরবর্তীতে অবশ্য ব্রাহ্মধর্ম ত্যাগ করেছিলেন নবীনচন্দ্র সেন। আত্মকথা বা আত্মজীবনীর প্রতিটি পদে পদে নবীনচন্দ্র সেন অতুলনীয় সুখপাঠ্যের মধ্য দিয়ে লিখেছেন তার জীবনের নানা দিক। এখানে খাবার লোভের কথা উঠে এলেও, নবীনচন্দ্র সেন জন্মেছিলেন চট্টগ্রামের রাউজানের পশ্চিম গুজরার নোয়াপাড়ার বিখ্যাত জমিদার রায় পরিবারে। তার বাবা বিখ্যাত জমিদার গোপীমোহন রায় নিজেও ছিলেন প্রজাদরদী। তার পূর্বপুরুষরা মহারাষ্ট্র বিপ্লবের সময় রাঢ়বঙ্গ থেকে চট্টগ্রামে এসে ভূপত্তন করেছিলেন।
নবীনচন্দ্র সেনের পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছিল চট্টগ্রামে নিজ গ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতায় গমন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ এ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি এ পাশ করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজে থাকার সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ সাটিক্লফের সুনজরে পড়েছিলেন তিনি। তারই সুপারিশে কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল নবীনচন্দ্র সেনের।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হলে তাকে বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েটের অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরের বছরই তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন পূর্ব বাংলায়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে কয়েকজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন তাদের মধ্যে লেখক ছিলেন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গৌরদাস বসাক, পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নওয়াব আবদুল লতিফের বিখ্যাত লেখকরাও ছিলেন।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/02/10/phenii_shhr.jpg?itok=EVFzVwLx×tamp=1676029466)
এই লেখকদের ক্ষেত্রে অনেকটা সহজ হলেও, নবীনচন্দ্র সেনের সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল বেশ কঠিন। কারণ সে বছরই বাংলার গভর্নর লর্ড গ্রে প্রবর্তন করেছিলেন নিয়োগ পরীক্ষা। তাও আবার দুই দফায়। চাকরিতে ঢোকার আগে দিতে হতো লোয়ার স্ট্যান্ডার্ড এবং চাকরিতে ঢোকার পর ৬ মাসের মধ্যে হায়ার স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষা। কেউ যদি কোনো এক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পারতেন, তবে সাঙ্গ হতো সাধের চাকরি। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চাকরিতে থাকা অবস্থায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণে চাকরি চলে যাওয়া।
প্রথমদিকে এই নিয়োগ পরীক্ষার আগে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা, বংশমর্যাদা ও সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে সরকার প্রত্যক্ষ নিয়োগ দিত বলে সেভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। যার কারণে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নওয়াব আবদুল লতিফ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ পেয়েছিলেন পরীক্ষা ছাড়াই অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সুপারিশের ভিত্তিতে। নিয়োগপ্রার্থীরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হওয়ায় তাদের সুপারিশ জোগাড় করতে কখনোই সমস্যা হতো না। যার ফলে তারাই বরাবর ম্যাজিস্ট্রেট হতেন।
ডেপুটি কালেক্টর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নবীনচন্দ্র সেনের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল যশোর জেলায়। এরপর তাকে পাঠানো হয়েছিল বিহারে। সেখান থেকে উড়িষ্যা হয়ে তিনি ফের ফিরেছিলেন পূর্ববঙ্গে। মাগুরাতে কিছুদিন এসডিও থাকার পর তাকে পাঠানো হয়েছিল নোয়াখালীতে। সেখানে পাঁচ মাস এসডিও ছিলেন তিনি। এ সময় নোয়াখালীরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। বিশেষ করে নোয়াখালীর স্টিমার সার্ভিস তিনিই চালু করেছিলেন।
এরপরই ১৮৮৪ সালের নভেম্বরে নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমাতে বদলি হন নবীনচন্দ্র সেন। ১৮৭৫ সালে যখন ফেনী মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত। মূলত নবীনচন্দ্র সেনের আন্তরিক পদক্ষেপের কারণেই মহকুমার মর্যাদা লাভ করেছিল ফেনী।
নবীনচন্দ্র সেন ফেনীতে গিয়ে দেখলেন তাকে জঙ্গলাকীর্ণ অজপাড়াগাঁয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপরই তার প্রশাসনিক দক্ষতায় ফেনীতে সর্বপ্রথম এন্ট্রান্স বা হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সেই ফেনী সরকারি পাইলট হাইস্কুল দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। কেবল তাই নয়, ফেনীতে প্রথম হাসপাতাল, ফেনী বাজার স্থাপন, ফেনী স্টেশন, জেলখানা, ট্রেজারিসহ আধুনিক শহরের যাবতীয় ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন তিনি। ফেনী শহরের মাঝামাঝি ছিল একটি সুপ্রাচীন দিঘি। এই দিঘির চতুর্দিকে পাড় উঁচু করে তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন সাপ্তাহিক দুদিন হাট-বাজারের।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/02/10/pheniir_raajaajhir_dighike_kendr_krei_nbiincndr_sen_grre_tulechilen_phenii_shhr_.jpg?itok=43fKH1WR×tamp=1676029426)
ফেনীতে নতুন শহর সৃষ্টি যে তার জন্য কতটা কঠিন ছিল, তা কিছুটা বোঝা যায় তার আত্মস্মৃতি 'আমার জীবন' পড়লে। আত্মস্মৃতিতে নবীনচন্দ্র সেন শুধু ১১৭ পৃষ্ঠা লিখেছেন তৎকালীন ফেনীর নানা বিষয় ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে, যাকে অনেকটা ফেনীর ইতিহাস হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়।
সেখানে একাংশে তিনি লিখেছিলেন, 'ভাবিলাম রামচন্দ্র চৌদ্দ বৎসর এবং পাণ্ডবেরা বারো বৎসর বনবাস করিতে পারিয়াছিলেন। তাহারা রাজা ছিলেন। আর আমি দরিদ্র তিন চারিটি বৎসর কি তাহা পারিব না? হরি বলিয়া কার্য আরম্ভ করিলাম।'
মূলত আধুনিক ফেনী শহরের মূল গোড়াপত্তন করেছেন নবীনচন্দ্র সেনই। প্রশাসক হিসেবে নবীনচন্দ্র সেনের সৃষ্টি বলা চলে আজকের ফেনী শহর।
সংগঠক হিসেবে নবীনচন্দ্র সেনের অবদান বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের আগে কলকাতার শোভাবাজারের রাজপরিবারের সদস্য বিনয়কৃষ্ণ দেব ১৮৯৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন 'বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ লিটারেচার'। সভাপতি হলেন বিনয়কৃষ্ণ নিজেই। মূলত সংস্কৃতি সাহিত্যের সাহায্য থেকে বাংলা সাহিত্যের উন্নতি সাধন করা হবে, এমনই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু কার্যবিবরণী লেখা থাকত ইংরেজিতে।
বাংলা ভাষার সাহিত্যচর্চার প্রতিষ্ঠানের নাম ইংরেজি দেখে আপত্তি তুলেছিলেন নবীনচন্দ্র সেন, রবীন্দ্রনাথসহ সাহিত্যিকরা। তখন ১৩০১ বঙ্গাব্দের ১৭ বৈশাখ এ সভা পাল্টে নামকরণ করা হয়েছিল 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ'। যেখানে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল রমেশচন্দ্র দত্তকে। আর সহ-সভাপতি হন নবীনচন্দ্র সেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ বাংলা সাহিত্য গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলে স্বীকৃত।
আজ নবীনচন্দ্র সেনের ১৭৬তম জন্মবার্ষিকী। নবীনচন্দ্র সেন চিরকাল থাকবেন বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্টির মাঝেই। একই সঙ্গে থাকবেন তিনি দক্ষ প্রশাসক হিসেবে ফেনীর সাধারণ মানুষের হৃদয়েও।
তথ্যসূত্র-
আমার জীবন/ নবীনচন্দ্র সেন
বাঙ্গালা সাহিত্যের কথা/ শ্রী সুকুমার সেন
নবীনচন্দ্র রচনাবলী
ahmadistiak1952@gmail.com
Comments