সুলতানের শিল্পসত্তা আমাদের জাতীয় গৌরব
সুলতান নয় কারো মতো। একেবারে অন্যরকম এবং একমাত্র। নেই কোন তার পূর্বসূরি। উত্তরসূরীও নেই, হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। সুলতানরা একবারই আসে। ঠিক যেন জীবনানন্দর কবিতা, 'এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায়নাকো আর।'
রাঙা রাজকন্যাকে যেমন পৃথিবী ভুলেনি। সুলতানকেও ভোলা যাবে না। বিশেষ করে বাঙালির কাছে সুলতানতো রাঙা রাজকন্যাই। যিনি একদা শিল্পের সব রঙ ধারণ করে, শিল্পের ভেতরের শক্তি-সাহস-সৌন্দর্য ও শেকড়ের গুঢ় রহস্য উন্মোচন করে হাজির হয়েছিলেন বাংলায়, বাঙালির চিত্রকলা ভুবনে। সেই রাজকন্যারূপী সুলতানকে যদি ভোলা হয়, সেটা হবে এ জাতির জন্য আত্মবিস্মৃতির শামিল। আত্মবিস্মৃত মানুষ, আত্মবিস্মৃত জাতির গর্ব ও গৌরবের জায়গা প্রশস্ত না হয়ে কেবলই সংকীর্ণ হতে থাকে। বিশ্বসভায় বিশেষ কোন সম্মান কিংবা মর্যাদা প্রাপ্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হয় না।
সুলতান বাঙালিকে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ন্যায়সঙ্গত সুযোগ করে দিয়েছেন রঙ ও রেখায়, ক্যানভাসে। বাঙালির সাহস, শক্তি, উদ্যমের গুঢ় রহস্যকে করেছেন উন্মোচন। নৃতত্ব যা পারেনি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য যেখানে ফেলেনি আলো, সেখানে নতুন আলো ফেলেছেন সুলতান। সে আলোয় বাংলার কৃষক, ঘর-গেরস্থালী পেয়েছে নবতর প্রাণ। পৃথিবীর কৃষকেরা পেয়েছেন জীবনের নতুন অভিজ্ঞান। যে অভিজ্ঞানের জন্য এ গ্রহের কৃষককুলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে একজন এস. এম সুলতান পর্যন্ত।
সুলতানের মূল নাম শেখ মুহম্মদ সুলতান। পরিচিত হন এস এম সুলতান নামে। স্বভাবে বোহেমিয়ান। পায়ের তলায় ছিল সর্ষে। হেথা নয়, হোথা নয় অন্য কোনখানে। প্রীতি ছিল এই মন্ত্রে, হয়তো প্রতীতিও ছিল। জন্মেছিলেন নড়াইলে চিত্রা নদীর পাড়ে। তারপর কলকাতা, ভারতবর্ষ, করাচী, লাহোর, ঢাকা, ইউরোপ, পাশ্চাত্য; কোথায় যাননি তিনি? গিয়েছেন, আবার ফিরেও এসেছেন। আমাদের জানামতে, পৃথিবীতে আর কোন শিল্পী নেই, যিনি হেঁটেছেন এতোটা পথ। দেখেছেন এতো এতো মানুষের মুখ। বুঝেছেন অগণন সব জনপদের প্রকৃতি ও পরিবেশকে।
শ্বেতাঙ্গ আর কৃষ্ণাঙ্গদের লড়াই, একে অপরের প্রতি সর্বক্ষণ যুদ্ধংদেহী আচরণ দেখে। প্রাণ হিসেবে প্রাণের মর্যাদা রক্ষিত না হওয়ায় ব্যথিত হয়েছেন। ক্ষরণ ঘটেছে ভেতরে, গোপনে, নিঃসঙ্গতায়। তারপর ডারউইন এসব দূরীকরনার্থে বিগল জাহাজে চেপে বেরিয়ে পড়েছেন অজানায়, জানতে-প্রত্যক্ষ করার নিরিখে। আবিষ্কারের পথ ধরে মানবতার প্রতি অপমান আর প্রাণের প্রতি বৈরিতা দূর করার উপাদান ও উপকরণ নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। তার পর বলেছেন বিবর্তনের কথা। শুনিয়েছেন সারভাইভাল ফর দ্যা ফিটেস্টের অমোঘ বাণী।
ডারউইন আমাদের সেই সত্য ও সূত্রের সুলুকসন্ধান দিয়েছেন এভাবে; পৃথিবীর সকল প্রাণ মূলত এক জায়গা থেকে এসেছে। অর্থাৎ আজ যে, আমরা চারিদিকে এত প্রাণের উপস্থিতি দেখি, সবার আদি শেকড় একই জায়গায়। এখন আলাদা বৈশিষ্ট্য ও বিশিষ্টতা নিয়ে নিজ নিজ অস্তিত্ব হাজির করলেও আদিতে সবাই এক ছিল। 'এক' সময়ের বিবর্তনে লক্ষ কোটি বছর ধরে 'বহু'তে রূপান্তরিত হয়েছে। এ কারণে সকলের জীবন-ধারণ অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত, গভীরভাবে যুক্ত। প্রাণীর যে খাদ্যশৃঙ্খলা তার দিকে নজর দিলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়, পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করা যায় এ সম্পর্কিত বোঝাপড়াকে। সুলতানের ছবিকে যদি আমরা গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করি তা হলে ডারউইনকে বুঝতে আরও সহজ হয়।
নড়াইল থেকে কলকাতাবাস, আর্ট স্কুলের অভিজ্ঞতা সবকিছুতেই জারি রয়েছে উনার বোহেমিয়ান জীবনের স্বর ও সুর। যা আরও উচ্চকিত হয়ে ওঠে কলকাতা ছেড়ে ভারতবর্ষ পরিভ্রমণে বেরিয়ে। সুলতান বৃহৎ ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটেছেন আর দেখেছেন মানুষ, প্রকৃতি, পরিবেশ আর তার বিচিত্র সংস্কৃতিকে। জীবনের এই পর্বে এঁকেছেন অজস্র ছবি। জীবিকার জন্য তুলির আঁচড়ে ফুটিয়েছেন মানুষের প্রতিকৃতি, বিশেষ করে ব্রিটিশ সৈন্যর। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। সন্ত্রস্ত ভারত। জনপদে জনপদে জেঁকে বসেছে ভয়, শঙ্কা আর উদ্বিগ্নতার বহর। এসবের মধ্যেও সুলতান থিতু হননি, হেঁটেছেন কেবলই। এই পর্বে আঁকা ছবিগুলোর কিছুই-কারও কাছেই সংগ্রহে নেই। হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে।
এরই মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ভারত ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটো পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। সুলতানের জন্মভূমি পূর্ববঙ্গ যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে। সুলতান ভারত ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন পাকিস্তানে। চলে যান করাচী। লাহোর করাচী মিলিয়ে কাটিয়ে দেন অনেকটা সময়। পরিবার-পরিজন কিছুই নেই সুলতানের। দ্বার গ্রহণ করেননি। দ্বারস্থও হননি কারও। ঘর, বাড়ি, বারামখানা কিছুই নেই উনার। কেবল ছিল তুলি, কালি, কাগজ, ক্যানভাস, ইজেল ইত্যাকার সব জিনিস। যা ইহজাগতিকতার সঙ্গে ঠিক যায় না। কিন্তু ইহজাগতিকতাকে সুন্দর-সৌন্দর্যময় করে তুলতে এর বিকল্পও নেই। এভাবেই কেটে যায় দীর্ঘ সময়। ততদিনে পাকিস্তান বাঙালির কাছে হয়ে উঠেছে যুক্তরাজ্য। পাকিস্তানীরা ব্রিটিশ। বাঙালি জেগে উঠেছে তার আপন শক্তিতে। স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় হয়ে উঠেছে লক্ষ্যভেদী। অনিবার্য এক যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। সুলতান দেশে ফেরেন। ঢাকা-নড়াইল মিলিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে স্থির করেন ঈমান ও নিশান, নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে।
সুলতানের জীবন যেন পক্ষিসদৃশ, মন যেন পাখির মতো। ডানাও ছিল হয়তো, আমরা পায়নি দেখতে। সব পাখি যেমন নীড়ে ফেরে। সুলতানও ফিরেছিলেন স্বগৃহে। জীবনের শেষ ধাপে থিতু হয়েছিলেন নড়াইলে, শেকড়ে। ডারউইন যেমন ফিরেছিলেন বিগল জাহাজের পরিভ্রমণ শেষে।
স্বাধীন বাংলাদেশে সুলতান একে-একে আঁকেন জীবনের শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্মরাজি। যে শিল্পীসত্তায় সুলতান আমাদের কাছে স্মরণীয়-বরণীয়, সেই সত্তাকে মেলে ধরলেন আমাদের সম্মুখে। বাংলার কৃষককে, পৃথিবীর কৃষককুলকে তিনি আবিস্কার করলেন নতুন রূপে, উদ্ভাসিত করলেন নতুন আলোয়। উন্মোচন করলেন কৃষক ও কৃষি সভ্যতার নিগূঢ় সত্য, যা আড়ালে পড়েছিল কয়েক হাজার বছর। কৃষির আবিষ্কার যদি দশ হাজার বছরের হয়। বাংলার কৃষকের বয়সও যদি হয় একই সমান্তরালে, তাহলে বলতেই হয় সুলতান দশ হাজার বছর ধরে আড়ালে থাকা সত্যকে শিল্পের তুলিতে শনাক্ত করেছেন, মহিমা ও গৌরব দান করেছেন। যা অভাবিত, অভূতপূর্বও বটে। কী সেই সত্য?
সেই সত্য হল, সুলতান কৃষকের ভেতরের শক্তিকে চিহ্নিত করেছেন। যে শক্তির বলে আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে কৃষি সভ্যতাকে। আগুনের আবিষ্কার, চাকার আবিষ্কার, তারও আগে হাতের ব্যবহার যেভাবে সভ্যতাকে এগিয়ে দেয়, মানুষকে-মানুষ হয়ে ওঠার শক্তি-সাহস ও মন্ত্র যোগায় ঠিক তেমনই কৃষির আবিষ্কার এই ধারাকে-এই পথকে অনির্বচনীয় এক পাথেয় যোগায়। কৃষির আবিস্কারই মানুষের গুহাচারী, অরণ্যচারী, যাযাবর জীবনের অবসান ঘটায়। মানুষের পক্ষে শেকড় গেঁড়ে বসা সম্ভব হয়, জানা সম্ভব হয়ে ওঠে শেকড়কে চেনার ধারাপাত।
আমরা জানি, কীভাবে কৃষির আবিষ্কার হল, কীভাবে কৃষক শিখে গেল হাল-চাষ করার পদ্ধতি। ভূমিকে কর্ষণ করে বীজ রোপণের কায়দা। এ-এক কঠিন কায়দা বটে ! যার ওপরে আর কোন কায়দা বা বিদ্যা থাকতে পারে কি-না জানা যায়নি আজও। মানুষ চাঁদ জয় করল, মঙ্গল গ্রহে গেল, কিন্তু কৃষকের আবিষ্কার করা জ্ঞানের চেয়ে অধিক কোন জ্ঞান বা বিদ্যা আবিষ্কার করা সম্ভব হল না তার পক্ষে, হয়তো হবে না কোনোদিন। কৃষকের উৎপাদিত খাদ্যসম্ভারই এ গ্রহের মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন, যার কোন বিকল্প আজও আবিষ্কৃত হয়নি। অথচ সেই কৃষককে আমরা যখন সাধারণ দৃষ্টিতে দেখি কত শাদামাটাই না লাগে !
এই দৃষ্টির বাইরে কৃষককে আলাদা করে দেখি কি আমরা? সেই ফুরসৎ মিলেছি কি কখনো? বরং সর্বজনের চোখে কৃষক মাত্রই যেন সাধারণের মধ্যেও অতিশয় সাধারণ। অথচ কৃষকমাত্রই অসম্ভব এক শক্তির অধিকারী, সীমাহীন এক জ্ঞানের ভাণ্ডার, লড়াকু এক প্রাণের প্রতিনিধি। এই কৃষকই জানে কীভাবে বন্যা থেকে, বজ্র-বৃষ্টি-তুফান থেকে ফসল রক্ষা করতে হয়। কোন ঋতুতে-কোন সময়ে ফসল ফলালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়। প্রকৃতির পাঠশালা থেকে সে বিদ্যা রপ্ত করে সভ্যতাকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি প্রধানত কৃষিজাত ও কৃষি সংলগ্ন সংস্কৃতির আধার। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান । কৃষি ও কৃষকের কাছে আমাদের ঋণ অশেষ। সুলতান কৃষি ও কৃষকের সেই শক্তিকে আবিষ্কার করে ঋণের পাল্লা লাঘব করার কোশেশ করেছেন।
সুলতান দেখিয়েছেন আমরা যে কৃষকে চিনি, বিশেষ করে শহুরে নাগরিকেরা, সেই চেনা প্রকৃত চেনা নয়। সেই চেনা কেবলই উপরিতলের পাঠ, জলের বুদবুদ দেখার নামান্তর। আমরা দেখি, কৃষক মাত্রই রোগা-জীর্ণ-কৃশকায়-শীর্নরূপের অধিকারী এক মানব সম্প্রদায়। একহারা তার গড়ন, কখনওবা দোহারা, কিন্তু তাতে মেদ নেই, চক্ষু কোটরাগত, হাত-পা ফাটাফাটা। প্রকৃত সত্য হল, এই রূপ কেবলই তার উপরের আদল। কৃষকের মূল শক্তি তার দেহের উপরে নয়, অভ্যন্তরে। এ কারণেই সুলতানের কৃষকেরা পেশীবহুল, শক্তিতে মদমত্ত। চর দখলের লড়াইয়ে বৈরীর মুখোমুখি যে কৃষককে আমরা দেখি তার ভেতরের রূপ দুর্বার, লাগামহীন, অমিততেজি, অধিকার ছাড়তে কিংবা হারাতে নারাজ একগুঁয়ে এক সত্তা।
যে কৃষাণী কৃষককে সঙ্গ দেয় সর্বদায়, তিনিও শক্তির এক আধাররূপে হাজির হন সুলতানের ছবিতে। তিনি দেখিয়েছেন কৃষকের যে শক্তিকে আমরা অবলোকন করি না সাধারণত সেই শক্তির স্বরূপ ও সামর্থ্য। এখানেই সুলতান অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, যামিনী রায়, জয়নুল থেকে আলাদা এবং বাংলার চারুশিল্পে উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী বিরলপ্রজ এক শিল্পী।
জয়নুলও এঁকেছেন কৃষকের ছবি, সেই ছবি কৃষকের সংগ্রামের কথা বলে। যে সংগ্রামের কথা আমরা জানি-আদ্যোপান্ত পরিচিত, শিল্পী কেবল তুলির আঁচড়ে তাকে চিত্রায়িত করেছেন। কিন্তু সুলতানের কৃষক কেবলই সংগ্রামের কৃষক নয়, কেবলই চিত্রায়নের মধ্যেই সুলতান সীমাবদ্ধ থাকেননি। কৃষককে তিনি উদ্ভাবন করেছেন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, কৃষি ও কৃষকের হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিরিখে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, সুলতানের এই কৃষককে আমরা পেয়েছে স্বাধীনতার পর, সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পরবর্তীতে। বাংলাদেশ নামক বাঙালির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে আমাদের কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, কামার, কুমোর, মাঝি, কুলি, মুটে ও মজুরেরা। আপাতদৃষ্টিতে এরা সবাই-ই জীর্ণশীর্ণ, রোগা, কৃশকায়, দুর্বল, রোগা, ভুখা নাঙ্গা। কিন্তু এদের মনের শক্তি ওসবের একেবারেই বিপরীত। ওরা সাহসী, ওরা পেশীবহুল, ওরা সিংহহৃদয়ের অধিকারী। একারণেই ওরা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে ভয় করে না,যার সাক্ষী ১৯৭১।
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল এই কৃষক ও কৃষকের মতো মানুষেরা সেদিন অমিতবিক্রমে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হয়েছিলেন বলে। সেদিন কৃষককুলের প্রতিনিধিত্বে জেগে উঠেছিল বাঙালির সমাজ, যার শক্তিকে শনাক্ত করে চিত্রকলায় ঠাঁই দিয়েছেন সুলতান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আঁকা ছবিসমূহে।
সুলতানের উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার, তাত্ত্বিকভাবে চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন এই শিল্পসৃজন, শিল্পের ভুবনে কীভাবে ও কীরূপে যোগ করেছেন বিশেষমাত্রা। আমরা জানি, শিল্পের ভুবনে যত ইজম বা মতবাদ হাজির রয়েছে, তার বেশীরভাগ চিত্রকলা থেকেই উদ্ভাবিত, উৎসারিত। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, পরে এবং মধ্যবর্তী সময়ে যেসব ইজম বা মতবাদ শিল্পের ভুবনকে নাড়িয়ে দিয়েছে গভীরভাবে, তার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী।
আমরা কমবেশি সেসবের কথা জানি এবং অধ্যয়নেও রাখি। কিন্তু আমাদের সুলতানের কথা কি জানে অন্যেরা, সুলতানের উদ্ভাবিত কৃষককে কি দেখেছে-জেনেছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিল্পকলাবিদরা? তার উদ্যোগ কি আদতে নেয়া হয়েছে কখনো? অথচ আমাদের একজন সুলতান রয়েছেন। যিনি উদ্ভাবন করেছেন কৃষকের শক্তিকে। যে কৃষকের কাছে রয়েছে আমাদের জন্মের ঋণ। যে কৃষক রেখেছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত অবদান।
কৃষকই বাঙালি সংস্কৃতির আদি ও অকৃত্রিম আধার। কৃষকই বিশ্বসভ্যতাকে এনেছে আজকের পর্যায়ে। সেই কৃষককে শিল্পের উদ্ভাবন ক্ষমতায় সুলতান দিয়েছেন নবজীবন, যেভাবে নবজীবন দেন রেনেসাঁ বা নবজাগরণের শিল্পীরা। কিংবা রেনেসাঁ বা নবজাগরণ থেকে রসদ সংগ্রহ করে আধুনিকতায় যুক্ত করেন নবতর মাত্রা। যোগান বহুমাত্রিক ভাবনার খোরাক। নতুন ইজম বা মতবাদে শিল্পের ভুবনকে করেন আরও বেশি গতিময় ও নন্দনমুখর। সুলতান সেই কাজটি করেছেন, যা অভিনন্দনযোগ্য, কুর্নিশপ্রাপ্তির দাবিদার।
Comments