শীতকালে পথের কুকুর-বিড়ালকে উষ্ণ রাখার উপায়

শীতে কুকুরের যত্ন
ছবি: জয়িতা তৃষা

দেশজুড়ে নেমেছে শীত। অনেক মানুষের জন্য শীত আরামদায়ক ঋতু হলেও এই সময় পথে বেড়ে ওঠা প্রাণীদের দুর্দশা হয় তীব্র। আমরা যখন বাড়িতে লেপ-কমফোর্টারের নিচে উষ্ণতা খুঁজি, ঠিক তখন অগণিত কুকুর, বিড়াল আর পাখি মুখোমুখি হয় তীব্র ঠান্ডার। যাদের কাছে থাকে না সামান্য আশ্রয়স্থলও। তো এই মৌসুমটিই হতে পারে সহানুভূতির চাদর প্রসারিত করার। যখন নিরীহ এসব প্রাণীদের কষ্ট দূর করার পদক্ষেপ নিতে পারি আমরা।

সাধারণ আশ্রয়স্থল বাঁচাতে পারে একটি জীবন

যখন তাপমাত্রা কমে যায়, প্রাণীদের জন্য একটি উষ্ণ স্থান তৈরি করে দিলে তা হতে পারে ভীষণ উপকারী। পথের অনেক প্রাণীই দেখবেন শীতকাল কোনো বাড়ির দরজার সামনের পাপোষে, গাড়ির নিচে কিংবা নির্মাণাধীন বাড়ির বালু-সিমেন্টের ঢিবিতে আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু এসব জায়গায় পর্যপ্ত উষ্ণতা পাওয়া যায় না। তবে সামান্য প্রচেষ্টায় আমরা এতে পরিবর্তন আনতে পারি।

আপনার বাড়ির সামনে যদি সামান্য খোলা জায়গাও থাকে, সেখানে আপনি একটি আশ্রয়স্থল স্থাপন করতে পারেন। একটি পুরোনো কার্ডবোর্ডের বক্স নিন, তাতে ভেতর জুড়ে দিন কিছু উষ্ণ কাপড় যেমন পুরোনো তোয়ালে বা কম্বল। এটি পথের প্রাণীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। কার্ডবোর্ড না পেলে প্লাস্টিকের বা কাঠের ফলের বাক্স এবং এর ভেতর খড় দিয়েও কাজ চালানো যেতে পারে।

বাক্সটি শুষ্ক স্থানে রাখুন। এমন সুরক্ষিত স্থানে এটি রাখুন যেন বাতাস এসে তা উড়িয়ে না নেয় বা নষ্ট না করে দিতে পারে। হতে পারে আপনার বাড়ির ফটকের এক কোনে বা সিঁড়ির নিচের সুরক্ষিত কোনো স্থান। এমনকি বাড়ির গ্যারেজে বা সিঁড়িতে একটি পথের কুকুর-বিড়ালকে ঘুমাতে দেওয়াও তাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।

কল্পনা করুন, শীতে জবুথবু একটি মা বিড়াল আর তার ছানাদের যদি আপনি আশ্রয় দেন, তারা কতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ করবে আপনার প্রতি। প্রচেষ্টাটি হয়তো আপনার জন্য খুবই ছোট, কিন্তু সেটাই হবে পথের প্রাণীদের জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ।

পুষ্টি সরবরাহ : বেঁচে থাকার রসদের জোগান

শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখতে প্রাণীদের শরীরের বেশি শক্তি ক্ষয় করতে হয়। ফলে অন্য সময়ের চেয়ে এ সময় তাদের খাবারের প্রয়োজন বেশি হয়। তাই শীতের সময় নিয়মিত খাবার সরবরাহ করেও কুকুর-বিড়াল বা পাখিদের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করা যায়।

এই ছোট ছোট পদক্ষেপের জন্য আপনাকে খুব বেশি খরচ করতে হবে না। বাড়ির সবার খাওয়া শেষে অবশিষ্ট যে ভাত, মাছ বা মাংস থাকবে তা মাখিয়ে কুকুর বা বিড়ালের জন্য মজাদার খাবার তৈরি করে দিতে পারেন। শুকনো বিস্কুট বা সাধারণ একটি রুটির টুকরোও এসব প্রাণীকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারে।

আপনার বাড়ির বাইরে একটি পরিষ্কার স্থানে খাবার রাখুন। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন এক সময়েই খাবার রাখুন। তাহলে প্রাণীরাও বুঝতে পারবে যে কখন সেখানে খাবার খেতে আসতে হবে।

পাখিদের জন্য শীতকালে খাবার বেশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। একে মুঠো শস্য, বীজ বা ভাঙ্গা চাল ছড়িয়ে দিন আপনার ব্যালকনি বা ছাদের এক কোনায়। এই খাবার চড়ুই, কবুতরসজ অন্যান্য প্রাণীদের আকৃষ্ট করবে এবং তাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করবে। সেইসঙ্গে ছাদের কোনায় বা ব্যালকনির বাইরের দিকে একটি পাত্রে পানি রাখুন। এই পানি শীতে পাখিদের পানির চাহিদা পূরণ করবে। প্রতিদিন পাত্রটি পূর্ণ করতে ভুলবেন না!

নিজের পাশাপাশি অন্যদের খাবার, পানি সরবরাহের সঙ্গে আশ্রয়স্থল গড়ে দিতেও উৎসাহিত করুন। সাধারণত, মানুষ যখন তার আশপাশের কাউকে কোনো সহানুভূতিশীল কাজ করতে দেখে তখন নিজেও উৎসাহ পায়। তাই একটি এলাকার প্রতিবেশীরা মিলে চাইলেই প্রাণীদের জন্য নিরাপদ ও উষ্ণ পরিবেশ বা আশ্রয়স্থল তৈরি করতে পারেন।

ছোট ছোট মানবিক কাজের শক্তি

যেমন প্রাণীরা কথা বলতে পারে না, যাদের আমরা বলি বোবা প্রাণী, তাদের সঙ্গে আমরা কেমন আচরণ করি তা দিয়ে দিনশেষে আমাদের মানবিকতা পরিমাপ করা যায়। পথের প্রাণীদের চাহিদা খুব কম-কিছু মৌলিক চাহিদা যেমন খাবার, পানি আর বিশ্রামের জন্য উষ্ণ স্থান; এটুকুতেই তারা খুশি।

শীতকাল কঠোর হতে পারে, কিন্তু আমাদের হৃদয় নিশ্চয়ই তা নয়। তাই পথের এসব প্রাণীর জন্য সামান্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে, কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে এবং তাদের জন্য কিছুটা মায়া দেখিয়ে আমরা নিজেদের মনে করিয়ে দিতে পারি যে, এই প্রকৃতির সব সৃষ্টিই একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত।

তাই এই শীতে পথের ধারে বেড়ে ওঠা প্রাণীগুলোর করুণ চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেবেন না। আপনার সামান্য একটু প্রচেষ্টায় একটি প্রাণীর জীবন রক্ষা পেতে পারে। তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে কেবল প্রাণীগুলোর শরীরই নয়, আমরা আমাদের হৃদয়কেও উষ্ণ করে তুলতে পারি।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Advisory council set to hold emergency meeting this evening

Sources from the CA office confirmed that the meeting will take place at the State Guest House, Jamuna

20m ago