রাস্তার কুকুর-বিড়ালের প্রতি সহিংস আচরণ বন্ধে এগিয়ে আসুন

পথকুকুর, পথবিড়াল, কুকুর, বিড়াল, প্রাণী,
ছবি: অর্কিড চাকমা

ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাঘাট এ শহরের বাসিন্দাদের জন্য দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই প্রতিবারই রাস্তার কোনো কুকুর-বেড়ালকে যখন অতি সতর্কতায় রাস্তার এক পার থেকে অন্য পারে যেতে দেখি, আর পথের ওপর থাকা চক্রযানগুলো যখন লাগামহীন গতিতে একের ওপর এক ঠোকর খায়, তখন কিছুক্ষণের জন্য আমার হৃৎপিণ্ডের গতি শ্লথ হয়ে যায়। তখন আমার মনে হয়, মানুষজন কি আদৌ বোঝে যে পশুপাখিরও প্রাণ আছে?

রাস্তাঘাটের কুকুর-বেড়ালের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতার ইতিহাস কম দিনের নয়। প্রায়ই খাবার খুঁজে না পেয়ে এর ওর লাথিগুঁতা খাওয়ার—এমনকি মার খেতে খেতে প্রাণ হারানোর নজিরও আছে। সহিংসতার এমন ঘটনা মানবীয় আইন-কানুনেরই ধ্বংসলীলা। কিন্তু রাস্তায় থাকা প্রাণীদের ক্ষেত্রে কেন যেন তা খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। খুব কম খরচ ও প্রাণী অধিকার আইনের একঘেয়ে টানাহেঁচড়া সত্ত্বেও আমাদের দেশের অনেক মানুষই প্রাণী সহিংসতার প্রভাব বুঝতে সক্ষম নয়, তাদের দায়িত্ব নেওয়া তো দূরের কথা।

রাস্তার প্রাণীদের প্রতি বারংবার অবহেলিত এই সমস্যাটি অত্যন্ত চিন্তার। এ নিয়ে আরও সচেতনতা প্রয়োজন। কিন্তু কারোরই এ নিয়ে তেমন একটা মাথাব্যথা দেখা যায় না। রাষ্ট্র সংস্কারের এই ক্রান্তিকালে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের নিজ থেকে এগিয়ে এসে রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে, ঝাড়ু হাতে তারা নেমে পড়েছে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করতে। যে সমস্যাগুলো আমরা দেখেও দেখি না—সেগুলোর দিকে নজর দেওয়ার এইতো দারুণ সুযোগ। বাকস্বাধীনতা থেকে কী লাভ, যদি আমরা নিপীড়িতদের কথাই না বলতে পারি?

রাস্তায় বাস করা এই প্রাণীদের প্রতি এই নিষ্ঠুরতা কমাতে তাদের প্রতি সামাজিক ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আনতে হবে। তবে এই বিষয়ের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নতুনভাবে ভাবাটাই হয়তো বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলমান বিভিন্ন পাবলিক ক্যাম্পেইন থেকে মানুষকে পশুপাখির সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে অনুপ্রাণিত করা যায়। অ্যানিমেল ভলান্টিয়ার এবং ব্যক্তি পরিসর থেকে অন্য মানুষরাও আগে থেকেই দৈনন্দিন কার্যক্রমে অংশ নেন। ওদেরকে খাওয়ানো, গোসল করানো এবং যত্ন নেওয়ার মতো দায়িত্ব নেন, এমন অনেকেই আছেন। এসব স্বেচ্ছাসেবী কাজের মাধ্যমে এই প্রাণীদের জীবনে সরাসরি প্রভাব রাখা যায়। কিন্তু এর মূল প্রভাবটা তখন কাজ করে, যখন দিন দিন এতে অন্য মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।

সাম্প্রতিক সময়ে মতপ্রকাশের মাধ্যমের মধ্যে গ্রাফিতি ও ডিজিটাল আর্ট নিয়ে তরুণদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ দেখা গিয়েছে। সমাজে ইতিবাচক বার্তা দিতে বা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে—সবক্ষেত্রেই এই মাধ্যমগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। রাস্তাঘাটে বাস করা প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতার দিকে আলোকপাত করতেও এগুলো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যদি মাঝরাস্তায় প্রায়ই ঘটা এসব আচরণের চিত্র দেয়ালে দেয়ালে এঁকে রাখা হয় এবং সবার চোখের সামনে থাকে—তাহলে হয়তো আরেকবার কাজটা করার আগে মানুষ ভেবে দেখবে। এই কঠোর বাস্তবতা সবার সামনে তুলে ধরলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের মধ্যে উল্টো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তরুণ সমাজকে চোখের সামনে ঘটা প্রাণী সহিংসতার ঘটনাগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। কোনো বিষয়ে অবস্থান নেওয়ার মানে এই নয় যে প্রতিকূল অবস্থায় চুপ থাকা উচিত। এ ধরনের যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রে জোরালোভাবে কথা বলার মাধ্যমে আজকের তরুণরা প্রাণী সহিংসতার বিষয়ে দায়ী মানুষদেরকে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। এভাবেই তৈরি হবে একটি সুন্দর সমাজ।

রাস্তায় বাস করা এই প্রাণীদেরও কোনো ধরনের ভয় ছাড়া বাঁচার অধিকার আছে। এই অধিকার রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে—প্রাণী সহিংসতা প্রতিরোধ করা এবং এর প্রতি কোনো ধরনের সহনশীলতা না রাখা। আমরা যদি একটি ভালো জাতি গড়তে চাই, তবে সমাজে বিদ্যমান ও প্রভাবশালী এ ধরনের সমস্যাগুলোকে একে একে দূর করতে হবে এবং ধারাবাহিকভাবে সব ধরনের অসমতা রোধের পদক্ষেপ নিতে হবে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

1h ago