বিকেলে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি খারাপ

বিকেলে ঘুমানো
ছবি: সংগৃহীত

বিকেলে ঘুমানো বা দুপুরে খাওয়ার পর ভাত ঘুমের অভ্যাস আছে অনেকেরই। কিন্তু জানেন কি এই সময়টার ঘুম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কেমন?

বিকেলের ঘুম সম্পর্কে জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খানের কাছ থেকে।

বিকেলে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি খারাপ

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, প্রথমত, বিকেলের ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য 'ভালো' নাকি 'খারাপ' তা বলা কঠিন। এটি ব্যক্তি এবং বিদ্যমান চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার ওপর নির্ভর করে। যদি স্মৃতিশক্তি  বাড়াতে চান তবে গবেষণা দেখায় যে একটি ছোট ঘুম আপনাকে সাহায্য করে।

২০২১ সালে ১১টি গবেষণা নিয়ে প্রকাশিত এক রিভিউ আর্টিকেলে দেখা যায়, ২০ থেকে ৭৩ বছর বয়সীদের একটি ছোট দিনের ঘুম সাধারণত তাদের কগনিটিভ ফাংশন —অর্থাৎ কার্যক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে। গবেষকরা দেখেছেন, ঘুমানোর ইতিবাচক প্রভাবগুলো বিকেলের স্বল্প ঘুম পরবর্তী কমপক্ষে দুই ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্লিপ রিসার্চ, লস এঞ্জেলেসের গবেষক জেরোম সিগেল বলেছেন, 'যারা রাতের বেলা পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে পারে না তাদের জন্য দিনের ঘুম মনোসংযোগ এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এ বিষয়ে সবাই একমত যে, আপনি যদি ঘুম থেকে বঞ্চিত হন তবে খুব ভালোভাবে শিখতে, কাজ করতে বা চিন্তা করতে পারবেন না।'

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিকেলের ঘুম স্মৃতিশক্তি ও শিখন ক্ষমতা বাড়ায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং মেজাজ ভালো রাখে।

বিকেলে কতক্ষণ ঘুমানো উচিত?

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে একমত যে বিকেলের ঘুমের একটা সময়সীমা প্রয়োজন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতামত, ২০-৩০ মিনিটের স্বল্পঘুম যাকে পাওয়ার ন্যাপ বলা হয়, তা অধিকাংশ মানুষের মেজাজ, মনোযোগ, প্রতিক্রিয়া সময়, স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি এবং একাগ্রতা উন্নত করতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া আরভিনের কগনিটিভ নিউরোসায়েন্টিস্ট ডা. সারা মেডনিক প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে অল্প ৩০ মিনিটের ঘুম, অথবা ৬০ থেকে ৯০ মিনিট নিয়মিত ঘুমানোর পরামর্শ দেন।

ডা. সারা মেডনিক আরও বলেন, 'ঘুমানোর সর্বোত্তম সময় হল ঘুম থেকে ওঠার ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পরে। যা সাধারণত দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত হয়ে থাকে।'

৫ মিনিটের ন্যাপ

গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচ মিনিটের ন্যাপেও স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং ঘুমের ভাব কমে। কর্মব্যস্ততার কারণে সময় খুবই অপ্রতুল হলে অন্তত ৫-১০ মিনিটের জন্য ঘুমিয়ে নিতে পারেন। যারা অফিসিয়াল জব করেন তারা তাদের টেবিলে মাথা নুইয়ে ১৫ মিনিট ঘুমিয়ে নিতে পারেন। তার জন্য এইটুকু যথেষ্ট হবে।

২০ মিনিটের ন্যাপ

ডা. মেডনিকের মতে, ২০ থেকে ৩০ মিনিট ঘুম হলো সুন্দর একটা সময়। শরীর ও মনকে সম্পূর্ণ শিথিল করতে এতটুকু সময়ই যথেষ্ট। এতে শরীর-মনের সতেজতা বাড়ে ও চাপ কমে।

৬০ মিনিটের ন্যাপ

ডা. মেডনিকের মতে, ৬০ মিনিটের ঘুম বেশ জাদুকরী। কারণ তা গভীর হয়ে থাকে। এ সময় শরীর কোষ মেরামত, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শক্তি সঞ্চয় করে নেয়।

৯০ মিনিটের ন্যাপ

ডা. মেডনিকের মতে, বিকেলে ৯০ মিনিটের ঘুমকে পরিপূর্ণ ন্যাপ বিবেচনা করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, পরিপূর্ণ ন্যাপ নিলে শারীরিক কর্মদক্ষতা যেমন বাড়ে তেমনি মানসিক অবস্থারও উন্নতি হয়।

বিকেলে কত সময়ের বেশি ঘুমানো ক্ষতিকর

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, বিকেলে দেড় ঘণ্টার বেশি ঘুমানো উচিত নয়। জার্নাল অব আমেরিকান জিরিয়াট্রিকস সোসাইটিতে প্রকাশিত গবেষণা মতে, ৯০ মিনিটের বেশি ন্যাপ নিলে রাতের ঘুমচক্র বিনষ্ট হতে পারে, মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং স্মৃতিধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

 অতিরিক্ত ঘুম রাতের ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে, এ ছাড়া স্থূলতা, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাকের একটা বড় কারণ অতিরিক্ত ঘুমানো আর অধিক রাত জেগে থাকা।

বিকেলে বেশিক্ষণ ঘুমালে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি কমে যায়। কিন্তু বাইরের তাপমাত্রা তখনও বেশি থাকে। তাপমাত্রার এ তারতম্যের ফলে শরীরের ভিতরের কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে দুপুরের খাদ্য হজমে বিঘ্ন ঘটাসহ, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

খেয়ে উঠেই ঘুমাতে যাওয়া কি ঠিক?

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ওঠানামা করে। যেকোনো খাবার খাওয়ার পরই রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন তৈরি করতে থাকে। বেশি খেলে প্যানক্রিয়াস বেশি ইনসুলিন উৎপন্ন করে। ইনসুলিন বেশি উৎপন্ন হলে দুটো বিষয় ঘটে। এই হরমোন মস্তিষ্কে গিয়ে বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিনে পরিণত হয়। এই মেলাটোনিন হলো ঘুমের হরমোন।

খুব ভারী খাবার খেলে তা হজম করতে শরীরের ৬০ থেকে ৭৫ ভাগ শক্তি ব্যবহৃত হয়। এই শক্তি ক্ষয়ের জন্য আমাদের ঘুম পায়। কেবল উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারের বেলায় এটি ঘটে না, প্রোটিন জাতীয় খাবারের বেলায়ও ঘটে।

খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পরা একেবারেই ঠিক নয়, কারণ তাতে পরিপাক্তন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন পেটের মধ্যে অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়, আর শুয়ে থাকার কারণে পর্যায়ক্রমে বুক জ্বালাপোড়া এবং গলা জ্বলার মতো অস্বস্তিকর অবস্থাতে পৌঁছে যেতে পারেন খুব সহজেই। এ কারণে কখনই দুপুরে পেট ভরে খাওয়া উচিত না। আর খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর বিছানায় শোয়া উচিত।

 

Comments

The Daily Star  | English

SC orders EC to restore Jamaat's registration

The Appellate Division of the SC scrapped a High Court verdict that had declared Jamaat's registration with the EC as a political party "illegal"

1h ago