হেপাটাইটিস বি কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী

ছবি: সংগৃহীত

হেপাটাইটিস বি হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে হওয়া একটি লিভারের রোগ। এই সংক্রমণ তীব্র (স্বল্প ও গুরুতর) বা দীর্ঘস্থায়ী (দীর্ঘমেয়াদি) হতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে নীরব ঘাতক বলা হয় এবং বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব বেশ লক্ষণীয়।

বারডেম (ডায়াবেটিক) জেনারেল হাসপাতালের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (লিভার, পরিপাক ও অগ্নাশয় রোগ বিভাগ) ডাক্তার মোহাম্মদ নাজমুল হকের কাছ থেকে চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।

হেপাটাইটিস বি কীভাবে ছড়ায়

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরের বিভিন্ন তরল যেমন রক্ত, লালা, যোনী তরল ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আমাদের দেশে ইনজেকশনের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। যারা মাদক নেন তাদের মধ্যে ছড়ায় বেশি। কারণ তারা একই সুঁই অনেকে বা বারবার ব্যবহার করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমেও হয়। তবে এটি এখন অনেক কমে গেছে।

বাবা মায়ের থাকলে বাচ্চার হেপাটাইটিস বি হতে পারে। বিশেষ করে মায়ের থাকলে বাচ্চার হতে পারে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দানের মাধ্যমে হতে পারে। শরীরে ট্যাটু করার মাধ্যমে হতে পারে। সার্জিক্যাল বিষয়ের মাধ্যমেও হতে পারে এবং যৌন মিলনের ফলেও সংক্রমিত হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি একটি নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সাধারণত জন্মের পরপরই কয়েক সপ্তাহ পরে বুস্টার দিয়ে দেওয়া হয়। এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ শতাংশ সুরক্ষা দেয়।

২ বিলিয়ন মানুষ (প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন) সংক্রমিত হয়েছেন এই রোগটিতে এবং প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ি হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন। প্রতি বছর প্রায় ১ মিলিয়ন পর্যন্ত মানুষ হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হয়ে মারা যান, যদিও এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য অসুখ।

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ

সদ্য সংক্রমিত হলে অধিকাংশ মানুষ কোনো উপসর্গ অনুভব করেন না। সাধারণত সংক্রমণের প্রায় ১ থেকে ৪ মাস পর এই লক্ষণগুলো বোঝা যায়। বেশ কিছু লোকের ক্ষেত্রে, সাধারণত ছোট বাচ্চাদের কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ হচ্ছে-

●         পেটে ব্যথা

●         গাঢ় প্রস্রাব

●         জ্বর

●         সন্ধিতে যন্ত্রণা

●         ক্ষুধামান্দ্য

●         বমি বমি ভাব ও বমি

●         দুর্বলতা ও ক্লান্তি

●         ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া, যাকে সাধারণ কথায় জন্ডিস বলা হয়

●         হেপাটাইটিস বি ভাইরাস গুরুতর আকার ধারণ করলে বা লিভারকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে

চিকিৎসা

একিউট হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে সবার ক্ষেত্রে না হলেও অনেকের ক্ষেত্রে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয়। ইনজেকশন ও মুখে খাওয়া ২ ধরনের ওষুধই বাজারে সহজলভ্য।

মুখে খাওয়ার ওষুধ সাধারণত সারাজীবনই খেয়ে যেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুখে খাওয়ার ওষুধ কখনো হঠাৎ বন্ধ করতে নেই। এতে লিভার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ওষুধের কোনোটিই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে একেবারে নির্মূল করতে পারে না, নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মাত্র। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য।

হেপাটাইটিস বি একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস হলেও একে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। বাংলাদেশে ২০০৩-৫ সাল থেকে শিশু জন্মের পর ইপিআই ভ্যাকসিন শিডিউলের মাধ্যমে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্ণবয়স্ক মানুষও চাইলে যেকোনো বয়সে এই ভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন। ০, ১ ও ৬ মাস অন্তর মোট ৩ ডোজ টিকা নিলেই এই রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়।

টিকা দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয়, আগে কখনো এই ভাইরাস আক্রমণ করেছে কি না এবং শরীরে এরইমধ্যে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে কি না। একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলে আর টিকা নেওয়ার সুযোগ নেই।

 

Comments

The Daily Star  | English

20 non-banks on BB red list

As of December last year, they disbursed Tk 25,808 crore in loans against collateral worth Tk 6,899 crore, according to the BB report

10h ago