ডিভোর্সের পর সন্তানের কো-প্যারেন্টিং কীভাবে করবেন

কো-প্যারেন্টিং
ছবি: সংগৃহীত

দুজন মানুষ যখন দাম্পত্য জীবন শুরু করে তখন সেখানে নানা ধরনের প্রত্যাশা থাকে, স্বপ্ন থাকে। বিভিন্ন কারণে সেই দাম্পত্য ভেঙেও যায়, আলাদা হয় দুজনের পথ। কিন্তু সেই দাম্পত্যে যদি সন্তান থাকে তাহলে সম্পর্কটি শেষ করা বা শেষ করতে চাওয়া নিয়ে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব।

বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে তা সাধারণত আদালতই নির্ধারণ করে দেন। তবে সন্তানের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন হয় বাবা-মা দুজনেরই সংস্পর্শ। বিচ্ছেদের পরেও তাকে বাবা-মা দুজনের ভালোবাসা, সময়, সহচার্য দিতে বেছে নেওয়া যেতে পারে কো-প্যারেন্টিং পদ্ধতি। যেন সে বাবা-মা দুজনের সঙ্গ পেয়েই বেড়ে ওঠে, বিচ্ছেদের প্রভাব তুলনামূলক কম পড়ে তার ওপর।

কো-প্যারেন্টিং কী

কো-প্যারেন্টিংয়ের আরেক নাম শেয়ার্ড প্যারেন্টিং। এই পদ্ধতিতে বিচ্ছেদের পরেও বাবা-মা যথানিয়মে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে তারা দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেন। বিচ্ছেদের নেতিবাচক প্রভাব যেন সন্তানের জীবনে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতেই কো-প্যারেন্টিংয়ের যাত্রা শুরু।

কো-প্যারেন্টিংয়ের ধরন

ভেরিওয়েল মাইন্ডের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোটা দাগে কো-প্যারেন্টিংয়ের তিনটি ধরন শনাক্ত করেছেন গবেষকরা।

এগুলো হলো, দ্বন্দ্বমূলক কো-প্যারেন্টিং, সহযোগিতামূলক কো-প্যারেন্টিং এবং সমান্তরাল কো-প্যারেন্টিং।

দ্বন্দ্বমূলত কো-প্যারেন্টিংয়ে দেখা যায় যে, বাবা-মায়েরা কোনোকিছুতেই একমত হতে পারেন না। তাদের সন্তান পালনের নিয়ম-রীতি, গুরুত্ব আলাদা হয়। সন্তানের জন্য কে কতটুকু সময় দেবেন বা কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে দুজনেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।

গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বন্দ্বমূলক কো-প্যারেন্টিংয়ের ফলে শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় এবং তারা হতাশা, অ্যাংজাইটির মতো মানসিক রোগের শিকার হয়।

সহযোগিতামূলক কো-প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের পরেও দুজন সন্তান পালনের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করেন। এক্ষেত্রে তারা নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, সন্তানের বিভিন্ন তথ্য একে অন্যকে জানান, সন্তানের উন্নতি বা প্রয়োজনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন। তারা এমনভাবে নিজেদের জীবনের রুটিন ঠিক করেন যেন প্রত্যেকেই সন্তানের সঙ্গে মানসম্মত সময় কাটাতে পারেন।

বিচ্ছেদের পরেও বাবা-মায়ের মধ্যে এই সম্মানজনক সম্পর্ক, সহযোগিতামূলক পরিবেশ সন্তানের বেড়ে ওঠায় ইতিবাচক প্রভাব রাখে, তাদের মনোজগত ভালো থাকে।

সমান্তরাল কো-প্যারেন্টিংয়ের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। এক্ষেত্রে বাবা-মা দুজনেই নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যোগাযোগ রক্ষা করেন। সন্তান পালনের ক্ষেত্রেও তারা ভিন্ন নীতি অনুসরণ করেন এবং দুজনেই দুজনের নিয়ম সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে চান।

এর ফলে তাদের সন্তানের জীবনে স্থিতিশীলতার অভাব দেখা দেয়, যা তার পরবর্তী জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সফল কো-প্যারেন্টিংয়ের টিপস

কো-প্যারেন্টিং সফল করতে বিবিসিকে কিছু পরামর্শ নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক সহায়তাবিষয়ক সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা রিলেটের সিনিয়র প্র্যাকটিস কনসালটেন্ট ডি হোমস। এসব পরামর্শ মেনে চললে, বিচ্ছেদের পরেও সন্তান পালন নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হবে না। আবার সন্তানের ওপরও বিচ্ছেদের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

সন্তানকে রাখুন সবার আগে

সাবেক স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি নানা কারণে আপনার রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। কিন্তু সেটি যেন সন্তান পালনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। সব আবেগ একপাশে রেখে সন্তানকে রাখুন প্রথমে।

নমনীয় হোন

সাধারণত সন্তানের কাস্টডি আদালত থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে সন্তানের দায়িত্ব যদি আপনার কাছে থাকে, তাহলে অন্য অভিভাবকের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে নমনীয় থাকুন।

নতুন করে যোগাযোগ শিখুন

যার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ইচ্ছা না করলেই সন্তানের কথা ভেবে নতুন করে যোগাযোগ তৈরি করুন। সরাসরি কথা বলতে পারেন, চাইলে মেসেজ বা ইমেইলের মাধ্যমেও সন্তানের বিষয়ে আলাপ জারি রাখুন।

সুসংগঠিত থাকুন

সন্তানের সঙ্গে দেখা করার সময় নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। কারণ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানেরও সামাজিক জীবনে ব্যস্ততা বাড়ে। এক্ষেত্রে কিছুটা সুসংগঠিত হতে হবে। বাবা-মা ও সন্তান মিলে গুগল ক্যালেন্ডার শেয়ার করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেকেই দেখা করার বা সময় কাটানোর দিনক্ষণ মনে রাখতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী নিজেদের দিনের পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন।

বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য দিন

কখনও যদি এমন হয় যে সাবেক স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে কোনো বিষয়ে মতে মিলছে না সন্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দুজনের বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন তখন তৃতীয় কারও সাহায্য নিন। সেটি হতে পারে বন্ধু বা পরিবারের কোনও স্বজন। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে এবং নিজেদের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্কও নষ্ট হবে না।

পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকুন

সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কো-প্যারেন্টিংয়ের ধরন বদলাবে, এটা মেনে নিতে হবে এবং এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সাবেক স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গেও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। যেন সন্তানের জীবনের যেকোনো পরিবর্তন তার সঙ্গে বাবা-মায়ের দূরত্ব তৈরি করে না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

নতুন সঙ্গীর জন্য প্রস্তুত থাকুন

বিচ্ছেদের পর যে কারও জীবনে নতুন সঙ্গী আসতে পারে। এ বিষয়ে নিজেরা যেমন মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন, সন্তানকেও প্রস্তুত রাখুন। নতুন সঙ্গী সন্তানের বাবা কিংবা মায়ের নতুন পরিবারের অংশ হবেন; সন্তানের সঙ্গে তারও যেন সম্মানের সম্পর্ক বজায় থাকে সেদিকে মনোযোগ দিন।

একে অন্যের প্রতি সহনশীল হোন

বিচ্ছেদের পর সন্তানের কথা ভেবে হলেও সাবেক সঙ্গীর প্রতি সহনশীল আচরণ করুন। দাম্পত্যের কলহ বা বিবাদ টেনে এনে সন্তানকে বিব্রত করবেন না। আবার সন্তানের সামনে একে অন্যকে নিয়ে কটু কথাও বলবেন না।

 

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

17h ago