সুখী দম্পতি যে ৮টি বিষয় এড়িয়ে চলেন

স্টার ফাইল ছবি

যে সব মনোবিদ বিভিন্ন দম্পতির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটানো এবং সুসম্পর্ক তৈরির উদ্দেশ্যে নিয়মিত কাউন্সেলিং করেন তাদের মতে, অনেক ধরনের ছোট ছোট আচরণ বা কাজ দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে।

এ ধরনের কিছু বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জানব সুখী দম্পতিরা তাদের সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য আসলে কোন বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলেন আর কোনগুলো মেনে চলেন। এখানে এড়িয়ে চলা শব্দ দুটি ব্যবহারের কারণ অনেক সময় মানুষ নিজের অজান্তেই অবচেতন মনে অনেক আচরণ করে ফেলেন। তবে, যারা সুখী সম্পতি তারা চেষ্টা করেন তাদের প্রতিটি কাজ চিন্তা ও সম্মানপ্রদর্শনের মাধ্যমে করতে। সেখান থেকেই আলোচনা করব তাদের এড়িয়ে চলা কাজগুলো। 

যেকোনো বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সংকোচবোধ করেন না

সম্পর্কে থাকা অবস্থায় এমন অনেক বিষয় আসতে পারে যেগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়তো কিছুটা সংকোচ লাগতে পারে। সুখী দম্পতি তাদের সঙ্গীর সঙ্গে কোনো বিষয়ে নিঃসংকোচে কথা বলতে পারেন। যত জটিল বিষয় হোক না কেন তারা একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন এবং নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় সমাধানের চেষ্টা করেন। পরস্পরের অনুভূতির ব্যাপারটা কখনোই এড়িয়ে যেতে চান না। অর্থসংক্রান্ত জটিলতা হোক কিংবা শ্বশুরবাড়ি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা তারা নিজেদের মধ্যে প্রথমে আলোচনা করেন। যৌন সংক্রান্ত বিষয়ে দম্পতির মধ্যে থাকতে হবে সংকোচবিহীন সংলাপ।

যদি দম্পতির মধ্যে সব ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা না হয় কিংবা তারা কম কথাবার্তা বলে থাকেন, তাহলে নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলেন। সেখানে তখন অবধারিতভাবেই জন্ম নেয় সন্দেহ কিংবা বিদ্বেষ। তাই সব বিষয় নিয়ে ধৈর্য সহকারে ও আগ্রহ নিয়ে আলোচনা করে থাকেন সুখী দম্পতি। 

একে অন্যের ভালো ও মন্দ কাজের তুলনা করেন না

সুখী দম্পতি নিজেদের মধ্যে ভালো কাজ ও মন্দ কাজের হিসাব করেন না। তাদের কে আগে কী ভালো কাজ করেছে কিংবা খারাপ কাজ করেছে সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে তুলনা করেন না এবং এসব বিষয়ে কম কথা বলেন। সুখী দম্পতি কখনো মনে করেন না যে, আজকে আমি এই কাজটা করলাম তো কালকে সে এই কাজটা করবে। তারা কেবল সেগুলোই করেন যেগুলো তারা একে অন্যের জন্য করতে পছন্দ করেন। সেখানে তাদের ফিরতির কোনো আশা থাকে না। তাদের প্রতিটি আচরণ নিজেদের ভালোবাসা থেকে করেন। তবুও অনেক সময় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যখন একজনের ওপরে কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত চাপ হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারা খুব শান্তভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। 

একজন আরেকজনের ওপর রাগ পুষে রাখেন না

সে সব দম্পতি অসুখী তারা অনেক না পাওয়া ও হতাশা থেকে নিজের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেন। তারা তাদের সঙ্গী থেকে কোন কোন বিষয়গুলো পাচ্ছেন না কিংবা কোনো বিষয়ে ঝগড়া হলে সে বিষয়ে নিজের মনে ক্রোধ জমা করে রাখেন। তবে, সুখী দম্পতি নিজেদের মধ্যে হওয়া ঝগড়া বেশিদিন মনে রাখেন না। তারা ছোট ছোট বিষয়গুলোতে সহজেই নিজেদের ক্ষমা করে দেন। সুখী দম্পতির ঝগড়া হয় না বিষয়টা এমন না। কিন্তু তারা সেই ঝগড়া থেকে শিক্ষা গ্রহণে করে এবং এগিয়ে যান একসঙ্গে। 

একজন আরেকজনের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন না

সুখী দম্পতি একজন আরেকজনের বিষয়ে কখনোই নেতিবাচক কোনো শব্দ ব্যবহার করেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক দম্পতি রয়েছেন, যারা অনেক সময় একে অন্যকে অপদার্থ, অলস, অকর্মাসহ আরও অনেকভাবে নিজের সঙ্গীকে বিশেষায়িত করে থাকেন। এটি একেবারেই অনুচিত। সুখী দম্পতি কখনোই এমনটা করেন না। তারা যখন তাদের সঙ্গী সম্পর্কে কারও সঙ্গে কথা বলেন, তখন তারা ইতিবাচক এবং সম্মানের সঙ্গে কথা বলেন। 

একে অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলান না

যখন কোনো সম্পর্কে একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস থাকে সেখানে আর মোবাইলের টেক্সট মেসেজ কিংবা ইমেইল চেক করার প্রয়োজন হয় না। তারা তাদের সঙ্গীর ব্যক্তিগত বিষয় কম চর্চা করেন এবং কিছুটা স্পেস দেন। একটি সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্কে কোনো কিছু লুকানো থাকে না বলে কোনো কিছু খুঁজে বের করারও কোনো ঝামেলা নেই। 

তারা কখনোই নিজেদের সঙ্গে মিথ্যা বলেন না

সুখী ও সুস্থ দাম্পত্যে মিথ্যার কোনো স্থান নেই। তাদের সব বিষয়ে সত্য কথা বলার সৎ সাহস থাকে। তাই কোনো বিষয় যতই জটিল হোক না কেন, তারা কখনোই সরাসরি মিথ্যা বলেন না। কোনো সম্পর্কে যদি মিথ্যার কোনো ছায়া থাকে, তাহলে সেই সম্পর্কে দূরত্ব অবধারিত। মিথ্যা লালন করতে ও লুকাতে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে যাবতীয় শক্তি ব্যয় হয়ে যায়। ফলে নিজেদের জন্য কোনো সময়ই থাকে না। তারা নিজের সঙ্গীকে প্রতিযোগী মনে করেন না। সুখী দম্পতি নিজেদের সব সময় একই দলের বলে মনে করেন। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কোনো অবস্থা থাকে না। নিজের সঙ্গীকেই যদি নিজের শত্রু বলে মনে হয় তাহলে সেই সম্পর্কের চেয়ে অশান্তির আর কিছু নেই। 

সঙ্গীকে প্রতিযোগী মনে করেন না

দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই কোনো বিষয় নিয়ে তর্ক হতেই পারে। এ অবস্থায় সুখী দম্পতি নিজেদের অবস্থানে অটল না থেকে কিছুটা সমঝোতার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে আসে। তারা সেই তর্কে নিজেদের জয়ী বানানোর প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় না। নিজেদেরকে তারা কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করতে চান না।

একজন আরেকজনকে উপেক্ষা করেন না

সব সম্পর্কই একটি চলমান বিষয়। সেখানে প্রয়োজন একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। নিজেদের মধ্যে যে সম্পর্ক দাম্পত্য জীবনের শুরুতে থাকে সেটাকেই দীর্ঘদিন ধরে লালন পালন করতে হয়। একে অন্যকে সময় দেবার বিভিন্ন রকমের উপায় আছে। সেগুলো উপেক্ষা করে যদি সারাদিন ইন্টারনেটে মগ্ন থাকা হয়, একজন আরেকজনকে গুরুত্ব দেওয়া না হয় তাহলে সম্পর্ক খুব বেশি মধুর হবে না। 

দেখা গেছে সুখী দম্পতি একে অন্যের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়। নিজেদের অফিস থেকে বাসায় ফিরে একসঙ্গে রাতের খাবার খায়, একসঙ্গে বসে গল্প করে, সিনেমা দেখে। এভাবে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়। 

সুখী দম্পতি প্রতিনিয়ত নিজেদের সম্পর্ককে কীভাবে আরও বেশি ভালো করা যায় সেগুলো নিয়েই ভাবেন। তাদের আচরণে এই ভাবনারই বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। 

তথ্যসূত্র: দ্য হাফিংটন পোস্ট, ইয়াহু নিউজ

গ্রন্থনা: আরউইন আহমেদ মিতু

 

Comments

The Daily Star  | English

Those involved in Ijtema ground deaths won't be spared: home adviser

He also said that those who are involved with the killings must be brought to book.

51m ago