স্বপ্নের চাকরিতে নিয়োগ পেতে যে কাজগুলো করতে হবে

চাকরি পেতে
ছবি: সংগৃহীত

আপনি যদি সক্রিয়ভাবে চাকরি খুঁজতে চান সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে চাকরির বিষয়ে যথাযথ গবেষণা, উপযুক্ত জীবনবৃত্তান্ত, নেটওয়ার্কিং এবং সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি। গবেষণা খাতে চাকরির জন্য দক্ষতা বাড়াতে অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে। যে জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করবেন তা যেন চাকরির বিবরণ বা জব ডেসক্রিপশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। লিংকডইনে সক্রিয় হোন এবং প্রথমবারেই যেন আপনাকে চাকরিদাতার পছন্দ হয়ে যায়, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।

চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে শেষ পর্যন্ত অনেকেই নিয়োগ পান না। অনেক চাকরিপ্রত্যাশীই চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দেন না। যার ফলে সুযোগ সামনে এলেও তারা অপ্রস্তুত বোধ করেন এবং সামনে থাকা সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যায়। আর সে কারণেই আপনাকে দ্রুত সক্রিয় হতে হবে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় চাকরি খুঁজতে হবে।

নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করে পছন্দের চাকরি পাওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।

গবেষণা করুন

গবেষণার গুরুত্ব যে কত, তা বলে বোঝানো যাবে না। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, নিয়োগ দেওয়া হলে আপনি ওই পদের জন্য কতটা নির্ভরযোগ্য হবেন।

প্রথমেই যে খাতে চাকরি খুঁজছেন সেই খাত এবং সেই খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে বিশদভাবে জানুন। প্রাথমিক জ্ঞানের জন্য কোম্পানির ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং সেখানে যা বলা আছে সেগুলো মনে রাখুন। মনে রাখবেন, আপনাকে সাক্ষাৎকারে যা জিজ্ঞেস করা হবে তার স্পষ্ট উত্তর সবসময় ওয়েবসাইটে নাও থাকতে পারে। তাই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদগুলো ভালোভাবে পড়ুন, পর্যবেক্ষণ করুন। শুধু তাই নয়, খাত সংশ্লিষ্ট নানা প্রাসঙ্গিক তথ্য জানতে আপনাকে পড়তে হবে সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনও।

সংশ্লিষ্ট খাত এবং আপনার পছন্দসই কোম্পানি সম্পর্কে সব ধরনের জ্ঞান অর্জনের পর এবার খেয়াল করুন যে কোন কোন দক্ষতাগুলো চাকরিটির জন্য প্রাসঙ্গিক এবং অবশ্যই থাকা উচিত। এবার আপনি পছন্দের চাকরির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা শুরু করুন।

কোর্সেরা এবং ইউডেমির মতো বেশ কিছু প্লাটফর্ম আছে যেখানে আপনি বিশেজ্ঞদের কাছে অনলাইন কোর্স করতে পারবেন। এছাড়া হার্ভার্ড, গুগল এবং লিংকডইনও বিনামূল্যে কিছু অনলাইন কোর্স করায়। যেগুলো আপনার নির্দিষ্ট চাকরির মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে এবং সংশ্লিষ্ট খাত সম্পর্কে বোঝাপড়া বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

জীবনবৃত্তান্ত ঠিকঠাক করুন

চাকরিদাতার সামনে আপনি নিজের সম্পর্কে যে যে তথ্য তুলে ধরতে চান, যা যা জানাতে চান সেই অনুযায়ী আপনার জীবনবৃত্তান্তটি তৈরি করুন।

ইদানিং বাংলাদেশের কিছু শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি অ্যাপ্লিকেন্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম (এটিএস) ব্যবহার করে। যার মাধ্যমে অনেক আবেদনকারীর মধ্য থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে বেছে নেওয়া সহজ হয়। এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি মূলত চাকরিপ্রার্থীর আবেদনপত্রের জব ডেসক্রিপশন অংশ থেকে নির্দিষ্ট কী-ওয়ার্ড খুঁজে নেয়।

তাই, শর্ট লিস্টেড হতে আপনার জীবনবৃত্তান্তে এমন কী-ওয়ার্ড যুক্ত করতে হবে যা চাকরির বিবরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যে ভুলটা বেশিরভাগ মানুষ করেন সেটা হলো সব কোম্পানির চাকরির জন্য একই জীবনবৃত্তান্ত পাঠানো।

এছাড়া জীবনবৃত্তান্তে অন্তত একটি রেফারেন্স থাকা খুবই জরুরি। এটি হতে পারে আপনার শিক্ষকের, আগের চাকরি কিংবা ইন্টার্নশীপের সুপারভাইজারের কিংবা এমন কারো যিনি পেশাগতভাবে আপনার পরিচিত। রেফারেন্স দেওয়ার জন্য এমন কাউকে বেছে নিন যিনি আপনার সততা, আন্তরিকতা ও অধ্যাবসায় সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানেন।

জীবনবৃত্তান্তে রেফারেন্স হিসেবে যারই নাম ব্যবহার করবেন না কেন, আগে তাকে জানিয়ে রাখুন। তাহলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান যদি আপনার সম্পর্কে জানতে চেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তিনি যেন আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলতে প্রস্তুত থাকেন।

সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন

আপনি যে প্রতিষ্ঠানে বা যে খাতে চাকরি করতে আগ্রহী সেখানে কর্মরত সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। এতে আপনি ওই খাত বা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি, আচার ইত্যাদি সম্পর্কে আগে থেকেই জানতে পারবেন। আবার তারা কোনো সমস্যার মোকাবিলা করলে তাও আগে থেকে জানতে পারবেন।

পরিচিত কারও কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার সুবিধা হলো এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে আসলেই বিষয়টি বা চাকরিটি নিয়ে আপনি কতটুকু আগ্রহী। সাধারণ যে তথ্য বাইরে থেকে পাওয়া যায় তার সঙ্গে ভেতরের কারও কাছ থেকে শোনা তথ্যের পার্থক্য থাকে।

পেশাজীবীদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট লিংকডইনের সর্বোত্তম ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখুন, সেখানে আপনার পছন্দের কোম্পানিতে কোনো খালি পদ দেখাচ্ছে কি না। কোম্পানিগুলো সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল, চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট বা সংবাদপত্রের ক্যারিয়ার পাতায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। সেই পাতাগুলোয় নজর রাখুন।

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি

বিজনেস কোচ ব্রায়ান ট্রেসির মতে, প্রথম সাক্ষাতের মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগদাতা ঠিক করে ফেলেন যে কাকে নিয়োগ দেবেন। অর্থাৎ, ফার্স্ট ইমপ্রেশন চাকরি পাওয়ার বা সুযোগ হারানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এক্ষেত্রে প্রথমেই ভাবুন, একজন নিয়োগকর্তা চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন। তিনি তার টিমে এমন কাউকে যুক্ত করতে চান যাকে কর্মক্ষেত্রের ঊর্ধ্বতনরাও এক দেখায় পছন্ত করবেন। ভাবুন যে, নিয়োগকর্তার জায়গায় আপনি হলে কী করতেন বা কী দেখতেন। এটিকে বলা হয় 'ডিজাইন থিংকিং'। অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে এটি ব্যবহার করুন, সমস্যা চিহ্নিত করুন এবং কীভাবে এটি সমাধান করা যেতে পারে সেই পদ্ধতিগুলো নিয়ে ভাবুন।

সবশেষে, সাক্ষাৎকারে সাধারণত কী ধরনের প্রশ্ন আসে সেগুলো দেখুন এবং অনুশীলন করুন। সেইসঙ্গে নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে কেমন উত্তর দেবেন তা ভেবে রাখুন। সেইসঙ্গে আপনাকে নিয়োগ দিলে প্রতিষ্ঠানের কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি অবদান রাখতে পারবেন, সেই প্রশ্নেরও উত্তর তৈরি রাখুন।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

RMG exports to US grow after a gap of two years

Garment shipment to the US increased by 0.75% to $7.34 billion

8h ago