অতীত পেছনে ফেলে বর্তমান নিয়ে চলবেন যেভাবে

অতীত
ছবি: সংগৃহীত

আমরা বর্তমানেই বাঁচি। তবু সবসময় কি বর্তমানে বাঁচা যায়? মাথায় থেকে যায় অদূর ভবিষ্যতের চিন্তা, আর তার সঙ্গে সদ্য কাটানো অতীতের ভাবনা।

অতীতের সিনবাদের ভূত কি কখনো আমাদের ছাড়ে, নাকি আমরাই তাকে ছেড়ে আসতে পারি না? তবে অতীতকে বেশি মাত্রায় নিজের বর্তমানে থাকতে দিলে কিন্তু ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি ঘটে। বিস্মৃতি সম্ভব নয়, কিন্তু ভুলে না গিয়েও অতীতকে যেতে দিতে হবে।

অতীতকে ভিন্ন কুঠুরিতে রাখা যায়, কিছু কৌশল মেনে চললেই।

নিজের অনুভূতি থেকে পালাবেন না

ইংরেজিতে 'আনরিসল্ভড ইস্যু' বলে একটি শব্দগুচ্ছ বেশ প্রচলিত। মনস্তত্ত্ব বিষয়ক চলচ্চিত্র হোক বা আলাপ, এই শব্দ দুটো উঠে আসে প্রায়ই। মনে করা হয়  যে, আমাদের মধ্যকার প্রায় জটিলতার উৎসই হচ্ছে এই আনরিসল্ভড বা অমীমাংসিত বিষয়গুলো।

নিজের বা অন্যের সঙ্গে আমরা যখন কোনো মানসিক দ্বন্দ্ব বা সংঘাতের মুখোমুখি হই, তখন আমাদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রবণতা থাকে সেই বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে নিজেদেরকে এক ধরনের মিথ্যে প্রবোধ দেওয়ার। সব ঠিক না থাকলেও 'ঠিক আছে' বলে এগিয়ে যাওয়া আদতে পিছিয়েই যাওয়া।

তাই নিজের অনুভূতি থেকে না পালিয়ে সময়ের ছোটখাটো দ্বন্দ্ব সময়েই মিটিয়ে ফেললে পরে তা আর অতীতের ভার হয়ে কাঁধে সিনবাদের ভূত হয়ে চেপে বসবে না। নিজের অনুভূতিগুলোকে স্বীকৃতি দিন এবং যেকোনো সমস্যা যথাযথ সময়ে সমাধান করার চেষ্টা করুন। নয়তো একদিন যা সুচ হয়ে ঢুকেছিল, তা ফাল হয়ে বেরোবে আর তখন ভোগান্তির শিকার হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

নিজের কাছে কথা দিন

সবকিছুই দিনশেষে এক ধরনের চর্চার বিষয়, তা সে শরীরের হোক বা মনের। আমরা যদি একটি বিষয় নিয়ে দিনরাত ভাবতে থাকি, তাহলে স্বভাবতই মনের বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে বাস করবে সেই নির্দিষ্ট বিষয়টিই। তাই অতীতের জঞ্জাল থেকে দূরে থাকতে চাইলে মনের ভেতর পুঞ্জীভূত হওয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করতে হবে সবার আগে। নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, কোনোভাবেই আর অতীতের দুঃসহ স্মৃতি যেন নতুন দিনের নতুন সকালে কালিমা লেপন না করতে পারে।

কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন

জীবনের পথ বন্ধুর, তাই সামনে এগিয়ে যাওয়াটা প্রায়ই মনে হতে পারে ভীতিকর। এর বদলে অতীতের সোনালি আরামে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতেই হয়তো বেশি নিরাপদ মনে হয় নিজেকে। কিন্তু কমফোর্ট জোনে থাকলে নতুন কিছুর অভিজ্ঞতা নেওয়া হবে না, জীবনে অর্জনের ঝুলিও হবে না যথেষ্ট সমৃদ্ধ। অতীতকে আঁকড়ে থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখার তাই কোনো মানে হয় না। এর বদলে অতীতকে নিজের শক্তিতে পরিণত করুন, গতকালকের শিক্ষা দিয়ে আজকের ভিত গড়ে তুলুন।

 

ক্ষমাশীল হোন

ক্ষমাশীলতা মানুষের মনকে উদার করে। অতীতের কোনো ঘটনায় যদি কারোর প্রতি মনে অনেক বেশি ক্ষোভ জমিয়ে রাখেন, তবে নিজের মনের তিক্ততা থেকে রক্ষা মেলা ভার হবে। তাই অন্যের জন্য নয়, বরং নিজের মনে প্রশান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে ক্ষমা করে দিন, ক্ষমা করে দিতে শিখুন। ক্ষমার জিয়ন কাঠিই পারে বর্তমানে সুদিন খুঁজে আনতে।

'আগের চেয়ে ভালো আছি কি?'

সুমধুর স্মৃতি কিংবা বেদনাদায়ী অতীত, দুটোই বড় ভোগায়। আর মানবমস্তিষ্ক একটুখানি বিষাদপ্রিয় বলেই হয়তো রবি ঠাকুরও লিখেছিলেন, 'দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না। সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।' অথচ আজ যা বর্তমান, তাও মুহূর্ত পরেই রূপ নিচ্ছে অতীত সময়ে। পাঁচ বছর আগে যে অবস্থানে থাকতে চেয়েছিলেন, আজ হয়তো এর চেয়ে বহু ভালো আছেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন তাই, আগের চেয়ে ভালো আছেন কি?

নিজের খারাপ থাকাটাকে যেমন স্বীকার করে নেবেন, তেমনি নিজের ভালো থাকার প্রতিও হতে হবে কৃতজ্ঞ। প্রতিদিনের কাজের তালিকায় যোগ করতে হবে কিছুটা সময়ের জন্য প্রকৃতির কাছে থাকা, নিজের 'আজ'টাকে নিয়ে খুশি হওয়া। সময় সব ক্ষতই একদিন মুছে দেয়, বালুকাবেলায় ধরা দেয় সবচেয়ে সুন্দর সূর্যাস্ত।

সোনালি হোক বা কষ্টের দিন, তা গত হয়েছে এবং এই গত হওয়া সময়কে আর চলতি অধ্যায়ে আগ্রাসী না হয়ে উঠতে দেওয়াই বিচক্ষণের কাজ। নিজেকে সময়ে সময়ে জানান দিন, 'আমাদের গেছে যে দিন, তা একেবারেই গেছে'।

 

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

2h ago