বেবি ফেস: আশীর্বাদ নাকি বিড়ম্বনা

বেবি ফেস
জং না-রা। ৪২ বছর বয়সী এ কোরিয়ান গায়িকা ও অভিনেত্রী বেবি ফেসের অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত

আপনার বয়স যতই সংখ্যারেখার ডানদিকে বাড়তে থাকুক না কেন, আপনাকে দেখলেই কি লোকে, এমনকি আপনার চেয়েও কমবয়সী মানুষজন 'গুলুমুলু' কিংবা 'বাবু বাবু' গোছের শব্দগুলো বলে বসে? অথবা এমনটা না বললেও কি আচরণে বুঝিয়ে দেয়, আপনার এখনও খুব একটা বয়স হয়নি?

চেহারার ব্যাকরণ অনুযায়ী, আমাদের মুখমণ্ডলের কাঠামোতে যদি থাকে একখানা গোলগাল মুখ, বড় বড় চোখ, নাকের আকার একটুখানি কাঠবাদামের কাছাকাছি আর ছোটখাটো চিবুক– তাহলে বয়সের সঙ্গে চেহারা খুব একটা বুড়িয়ে যায় না। ইংরেজিতে একেই বলে 'বেবি ফেস'। আর যাদের বেবি ফেস রয়েছে, তারা জীবনে ঝামেলায় পড়ে থাকেন। তাদের কথাবার্তা খুব একটা ধোপে না টেকার বড় কারণ- তাদেরকে কেউ বড় বলে মনেই করে না!

যত ভোগান্তি

এ শহরেরই কোনো এক বেসরকারি অফিসের বড় কর্তা তুহিন। পড়াশোনা, অভিজ্ঞতা সবই তার আছে। তবু অফিসের লোকজন তাকে খুব একটা মেনে চলেন না, বরং কোনো গুরুগম্ভীর কথাও বেশ হালকা চালেই নেন। তাদের কথা হচ্ছে, বসকে দেখে ঠিক 'বস' বলে মনে হয় না। দেখে মনে না হওয়ার কারণটা বেশ মজার। এই বসের চেহারাটা নাকি অনেকটা বাচ্চা বাচ্চা। আর সে কারণেই এই গোলমাল।

আর তুহিনের জীবনে বেবি ফেসের ভোগান্তি এবারই যে প্রথম, তা নয়। ভার্সিটি জীবন থেকে শুরু করে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার এই চেহারা তাকে বেশ ভুগিয়েছে। কারণ তার ব্যক্তিত্বের মাঝে যাকে বলে 'বাচ্চামি', তা একেবারেই নেই। কিন্তু সামনের লোকটা সবসময়ই যেন আশা করে থাকে, তিনি একটা শিশুসুলভ, মজার কোনো কথা বলে বসবেন। অন্যদিকে তুহিনের মাথায় কাজ ছাড়া তেমন কিছু নেই। অগত্যা উভয় পক্ষই হতাশ!

কথায় আছে, বাবা-মায়ের কাছে কেউ কোনোদিন বড় হয় না। কিন্তু এই কথাটা বেবি ফেসদের জন্য শুধু বাবা-মা না, পুরো বিশ্বের সবার জন্যই যেন প্রযোজ্য। কারো কাছেই তারা আর কোনোদিন বড় হন না। বয়সের সীমানা যতই একের পর এক দশক পেরোক, তাদের শিশুসুলভ চেহারার প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়াটা আজীবনের চ্যালেঞ্জ হয়ে থেকে যায়।

চেহারা আর ব্যক্তিত্বের মাঝে সামাজিক বিশ্বাস অনুযায়ী ভারসাম্য না থাকার সমস্যার ঠিকঠাক সমাধানও করা যায় না। পুরুষদের ক্ষেত্রে কেউ কেউ অবশ্য দাঁড়ি-গোফ রেখে এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। কখনো তা কাজে দেয়, কখনো আরও হাস্যরসের খোরাক হতে হয়।

আছে ইতিবাচক দিকও

তবে এমন চেহারা থাকা কি শুধুই ঝামেলার? বাড়তি কোনো সুবিধাও কি পান না বেবি ফেসের লোকেরা? রয়েছে মুদ্রার উল্টো পিঠও। ব্যক্তিজীবনে শিশুসুলভ চেহারার মানুষদেরকে মানুষ বয়সে কম ভাবে বলে তাদের প্রতি একধরনের মায়াও কাজ করে থাকে। সাক্ষাতের প্রাথমিক ধাপেই যেহেতু তাদের প্রতি একটা ইতিবাচক মনোভাব এসে যায়, যোগাযোগের পরবর্তী পর্যায়েও তা ভূমিকা রাখে। আদতে তা লাভজনক হয়ে ওঠে বেবি ফেসের ব্যক্তিদের জন্য।

এ ছাড়া কর্মজীবনেও এটি সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে যেসব ক্যারিয়ারে সৃজনশীলতার দাম অন্য জায়গা থেকে বেশি দেওয়া হয়, যেমন ডিজাইনিং, বিজ্ঞাপন, মার্কেটিং ইত্যাদিতে বেবি ফেস থাকলে অসুবিধার চেয়ে বরং সুবিধা বেশি হয় বলেই মনে করা হয়। কারণ এসব ক্ষেত্রে অনেক বেশি দলগত কাজের সুযোগ থাকে এবং কারো চেহারা শিশুসুলভ হলে অন্যরা প্রথম সাক্ষাতেই তাকে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণভাবে নিয়ে থাকে। তাই সেই ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন আইডিয়া নিয়ে আসা, তার সঙ্গে আলাপ করার মতো বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই সহজ হয়ে যায়। অন্যদিকে ভারিক্কি চেহারা বা রাশভারি মানুষজনের সঙ্গে এই কাজটা করতে একটু দোনামনা করতে হয় দলের সদস্যদের।

এর কোনোটাই যে ঠিকঠাক 'ফ্যাক্ট', তা কিন্তু নয়। সবই বরং ধারণা করে নেওয়া এবং সে অনুযায়ী আচার-আচরণের ওপর নির্ভরশীল। কারণ আমরা জীবনে যত সামনেই এগোই না কেন, 'প্রথমে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী' এই বাক্যটাকে খুব একটা পেছনে ফেলে আসা আর হয় না।

তাই চেহারার ওপর ভিত্তি করেই কারো ব্যক্তিত্ব আঁচ করে ফেলার মতো 'শর্টকাট' যোগাযোগ সবসময়ই ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটি ঠিক বা ভুল যাই হোক না কেন, এর চর্চা কমতেও দেখা যায় না। তাই সমবয়সী বা সমমনা ভেবে নিতে তরুণ কর্মীদের বেবি ফেসের সহকর্মীকেই হয়তো বেশি মনে ধরে যায়। আর যদি সেই ব্যক্তিটি আসলেও বন্ধুভাবাপন্ন হন এবং সহযোগিতার মনোভাব রাখেন, তাহলে তো তার জন্য সোনায় সোহাগা! তুখোড় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ঠিকঠাক সমন্বয়ে কাস্টমার সার্ভিসের মতো কাজেও এটি হতে পারে তুরুপের তাস।

 

Comments

The Daily Star  | English

Students suffer as NCTB fails to deliver books

Only 37% of 40.15cr textbooks distributed till first half of Jan

11h ago