জীবনে ভারসাম্য আনতে স্লো লিভিং

অনেকের মনে হচ্ছে, ৯-৫টার চাকরি, গৎবাঁধা রুটিন, সাফল্যের পেছনে বিরামহীন ছুটে চলা তাদের জীবনকে জটিল করে তুলছে। তাই তারা ঝুঁকছেন ধীর জীবনযাপনের দিকে।
স্লো লিভিং
ছবি: সংগৃহীত

স্লো লিভিং বা ধীর জীবনযাপনের ধারণাটি নতুন না হলেও এখন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বর্তমান আধুনিক সমাজব্যবস্থা আসার অনেক আগে মানুষ এভাবে ধীর জীবনযাপন করত। করোনা মহামারির পর বিষয়টি নিয়ে আবার ভাবছে মানুষ।

অনেকেই এখন হোম অফিস বা ঘরে বসে কাজ করাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। অনেকের মনে হয়েছে, ৯-৫টার চাকরি, গৎবাঁধা রুটিন, সাফল্যের পেছনে বিরামহীন ছুটে চলা তাদের জীবনকে জটিল করে তুলছে। তাই তারা ঝুঁকছেন ধীর জীবনযাপনের দিকে।

স্লো লিভিং কী

স্লো লিভিংয়ের ধারণাটি এসেছে স্লো মুভমেন্ট থেকে। এই মুভমেন্ট বা আন্দোলনটির সূচনা ইতালিতে কার্লো পেত্রিনি ও একদল অ্যাক্টিভিস্টের হাত ধরে, যারা আশির দশকে রোমের পিয়াজ্জা দি স্পাগনায় একটি বিখ্যাত ফাস্ট ফুড চেইনের শাখা খোলার প্রতিবাদ করেছিলেন।

এই আন্দোলন থেকে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রচারণা শুরু হয়—যেমন স্লো ফুড, সিটাস্লো, স্লো ট্রাভেল ইত্যাদি। স্লো লিভিং একটি জীবনদর্শন, যেখানে ধীরগতির ও মননশীল জীবনযাপনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন- কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো, শখের কাজ করা, প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা। পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে ভারসাম্য আনা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করা, নিজের যত্ন নেওয়া, সচেতনভাবে খরচ করা—এসবই এ ধরনের জীবনযাত্রার মূল উদ্দেশ্য।

'স্লো লাইফের' ধরাবাঁধা কোনো সূত্র নেই। প্রতিটি মানুষকে তার নিজের মতো করে পছন্দের জীবন গড়ে তুলতে হয় এই রীতিতে। কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা,পছন্দের কাজ করা ইত্যাদি স্লো লিভিংয়ে অনেক গুরুত্ব পায়। দৈনন্দিন জীবনে ভারসাম্য আনা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করা, নিজের যত্ন নেওয়া, মননশীল হওয়া এবং সচেতনভাবে ব্যয় করাই এ ধরনের জীবনযাত্রার মূল বৈশিষ্ট্য।

স্লো লিভিংয়ের সুবিধা

স্লো লিভিং একটি মুভমেন্ট বা আন্দোলন, যেখানে ভারসাম্যপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ জীবনযাপনই থাকে উদ্দেশ্য। ধীরগতিতে জীবনধারন করা, চারদিকের পরিবেশ ও নিজের যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে স্লো লিভিং কাজ করে। অনেকের কাছে স্লো লিভিংয়ের অর্থ নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য আরও সময় বের করা। স্লো লিভিংয়ের চর্চা একজন ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও আবেগজনিত সুস্থতায় নানা রকম ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন-

চাপ কমে

স্লো লিভিংয়ে ধীরগতির জীবনযাপনে গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে মানসিক চাপ, রাগ, অস্থিরতা কমতে পারে। সময় নিয়ে ও ধীরগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ও বর্তমানের দিকে মনোযোগ দেওয়ার ফলে প্রশান্তি অনুভূত হয়।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

মননশীলতা ও নিজের যত্নের দিকে জোর দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। নিজের যত্ন নেওয়া, পছন্দের কাজ করা, একটা উদ্দেশ্য নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে একজন মানুষের সুখ, ভালো থাকা ও আনন্দের পরিমাণ বাড়ে।

শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

স্লো লিভিং শরীর ভাল রাখতেও সাহায্য করে। এতে কঠিন রোগের ঝুঁকি কমে, ভালো ঘুম হয় ও শরীর সুস্থ থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের মতো ভাল অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক

অন্যের সঙ্গে সংযোগ ও সামাজিকতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় স্লো লিভিংয়ে। এতে কাছের মানুষদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির সুযোগ পাওয়া যায়। সময় নিয়ে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত হলে মানুষের একাকিত্বে ভোগার প্রবণতা কমে।

সৃজনশীলতা বাড়ে

স্লো লিভিংয়ের মাধ্যমে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি বাড়ে। কারণ নতুন আইডিয়া ও সৃজনশীল বিষয়ে চিন্তাভাবনা ও কাজ করার জন্য বেশি সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়।

স্লো লিভিংয়ে কি প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকতে হয়?

স্লো লিভিং শুনলেই মনে হয়, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে এর কোথায় যেন সংঘাত রয়েছে। আসলে স্লো লিভিংয়ে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যমূলক ও মননশীল ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়। এর মানে এই না যে প্রযুক্তির ব্যবহার বাদ দিতে হবে। আপনি এমনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন, যা আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করবে, আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে না।

দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এনে স্লো লিভিংয়ের চর্চা শুরু করতে পারেন। যেমন- প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কিছুটা সময় রাখা, কয়েকটা গভীর নিঃশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি। তারপর ধীরে ধীরে বড় পরিবর্তন আনুন।

Comments

The Daily Star  | English

Three difficult choices to heal economy

Bangladesh yesterday made three major decisions to cushion the economy against critical risks such as stubborn inflation and depletion of foreign currency reserves.

9h ago