জাম্বুরা আসলে কতটা উপকারী

ছবি: সংগৃহীত

জাম্বুরা অতি পরিচিত একটি মৌসুমি ফল। দামে সস্তা, পুষ্টিগুণের বিবেচনায় অত্যন্ত মূল্যবান এই ফল।

জাম্বুরার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন এএমজেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের পুষ্টি, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক ডিজিজ কনসালটেন্ট ডা. মো. জয়নুল আবেদীন দীপুর কাছ থেকে।

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, টক মিষ্টি রসালো স্বাদের জাম্বুরা অত্যন্ত উপাদেয় ও চাহিদা সম্পন্ন দেশি ফল। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু জাম্বুরা চাষের জন্য উপযোগী, তাই ফলনও ভালো হয়। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর জাম্বুরার সিজন। ওই সময় বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ মৌসুমি ফল জাম্বুরা। পুষ্টিগুণে জাম্বুরা অন্যান্য লেবু জাতীয় ফল, যেমন- কমলা, মালটা ইত্যাদি ফলের মতোই সমৃদ্ধ।

জাম্বুরার পুষ্টিগুণ
প্রতি ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি জাম্বুরার পুষ্টি উপাদানগুলো হলো-
ক্যালরি- ২৩০ কিলোক্যালরি
পটাসিয়াম- ১৩০০ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট- ৬০ গ্রাম
ভিটামিন সি- ৪১ শতাংশ (প্রতিদিনের প্রয়োজনের)
রাইবোফ্ল্যাভিন- ১৩ শতাংশ (প্রতিদিনের প্রয়োজনের)
কপার- ৩০ শতাংশ  (প্রতিদিনের প্রয়োজনের)
থায়ামিন- ১৮ শতাংশ (প্রতিদিনের প্রয়োজনের)
ফাইবার- ৬ শতাংশ (প্রতিদিনের প্রয়োজনের)

এ ছাড়াও আরও নানাবিধ পুষ্টি রয়েছে জাম্বুরায়।

জাম্বুরার উপকারিতা
ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, জাম্বুরা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। ভিটামিন সমৃদ্ধ জাম্বুরা নানাভাবে সহায়তা করে শরীর ঠিক রাখতে। যেমন-
১. জাম্বুরায় রয়েছে খুবই কার্যকরী এন্টিঅক্সিডেন্ট; যেমন- ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং কোষের ক্ষয় কমানোর মাধ্যমে ও কোষের প্রদাহ কমিয়ে ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়।
২. জাম্বুরায় আছে ভিটামিন রাইবোফ্ল্যাভিন ও থায়ামিন, যা শরীরের স্নায়বিক কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখে।
৩. মিনারেলের মধ্যে পটাসিয়াম সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে, সঙ্গে আছে কপার, যা দেহের মিনারেলের চাহিদা পূরণ করে।
৪. জাম্বুরায় ফাইবার বা খাদ্যআঁশ থাকায় হজম ও কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধে সহযোগিতা করে এবং খাদ্যনালীতে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ায়।
৫. জাম্বুরা ওজন নিয়ন্ত্রণে ভালো অবদান রাখে কম ক্যালরির হওয়ায়।
৬. রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ কমিয়ে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও সহযোগিতা করে।
৭. জাম্বুরার যেসব পুষ্টিগুণ ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জাম্বুরা রাখার পরামর্শ দেন ডা. জয়নুল আবেদীন।

সতর্কতা
যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদেরকে কম পরিমাণে জাম্বুরা খাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. জয়নুল আবেদীন।  বিশেষ করে যাদের রক্তে পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি, তাদের জাম্বুরা না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

কীভাবে খাওয়া ভালো

জাম্বুরার ভেতরে কোয়াগুলো সাদা, লাল বা গোলাপি রঙের হয়। রংভেদে পুষ্টিগুণের তেমন বেশি পার্থক্য নেই। তবে লাল রঙের জাম্বুরায় চিনি একটু বেশি পরিমাণ থাকে।

লবণ, মরিচ কিংবা মশলা দিয়ে মেখে জাম্বুরা খেতে পছন্দ করেন অনেকে। মশলা দিয়ে না মাখিয়ে ফ্রেশ জাম্বুরা বা শরবত বানিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. জয়নুল আবেদীন। আর যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের লবণ দিয়ে জাম্বুরা খাওয়া উচিত নয় বলে জানান তিনি।

জাম্বুরা খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। দিনের যেকোনো সময়ই খাওয়া যাবে।

যেকোনো বেলা খাবারের অংশ হিসেবে ফল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। এক্ষেত্রে দেশীয় টক জাতীয় ফল সবচেয়ে উপকারী ও স্বাস্থ্যকর বলে জানান ডা. জয়নুল আবেদীন।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

BNP hosts discussion on first anniversary of July uprising

Leaders recall sacrifices, call for unity at Dhaka gathering

52m ago