গরম নাকি ঠান্ডা দুধ খাবেন

জেনে নিন পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মীর কাছ থেকে।
ছবি: সংগৃহীত

দুধ একটি আদর্শ খাবার, অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিশেষত শিশুদের রোজ দুধ খাওয়ার দিকে জোর দেন বাবা-মা। অনেকেই গরম দুধ খেতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে দুধ ঠান্ডা করে খান।

গরম নাকি ঠান্ডা দুধ খাওয়া বেশি ভালো, চলুন জেনে নেওয়া যাক মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মীর কাছ থেকে।

শরীফা আক্তার শাম্মী জানান, গরম বা ঠান্ডা উভয় প্রকার দুধেই পুষ্টিমান একই থাকে। দুধে আছে অ্যামিনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন: ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলেনিয়াম। দুধ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামেরও গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

গরুর দুধে পানি ৮৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ, ল্যাকটোজ চার দশমিক আট শতাংশ, চর্বি চার দশমিক পাঁচ শতাংশ, প্রোটিন তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ দশমিক সাত শতাংশ।

একজন ব্যক্তি কীভাবে দুধ পান করলে কার্যকারিতা বেশি হবে, তা সম্পূর্ণভাবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। ঠান্ডা বা গরম—কোন ধরনের দুধে শরীর বেশি উপকৃত হবে, তা নির্ভর করে আপনি কেন দুধ খাচ্ছেন তার ওপর।

শরীরের শক্তি যোগানোর ক্ষেত্রে ঠান্ডা বা গরম— উভয় ধরনের দুধই সমান ভূমিকা রাখে। তবে ঘুমের সমস্যা দূর করার জন্য গরম দুধ উপকারী। আবার অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে ঠান্ডা দুধ বেশি উপকারী।

গরম দুধের উপকারিতা

  • গরম দুধের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো তা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়। এ কারণে ছোটদের গরম দুধ দেওয়াই ভালো। গরম দুধে ল্যাক্টোজের পরিমাণ কম থাকে। তাই এই দুধ সহজে হজম হয়। দুধ থেকে তৈরি খাবার যাদের হজম হয় না, তাদের খেতে হবে গরম দুধ। ঠান্ডা দুধ তুলনামূলক ভারী, তাই হজমে সময় লাগে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে রাতে ঘুমানোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করতে পারেন।
  • রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করলে ঘুম ভালো হয়। দুধে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে। দুধ গরম করা হলে অ্যামিনো অ্যাসিড সক্রিয় হয়ে উঠে।
  • আবহাওয়া পরিবর্তনে বা এমনিতে সাধারণ ঠান্ডায় আক্রান্ত হলে হালকা গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা দূর হয়।
  • মেয়েদের পিরিয়ডের অসুস্থতায় প্রশান্তি মেলে গরম দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে। দুধে থাকা পটাশিয়াম পিরিয়ডকালীন ব্যথা দূর করে এবং হলুদ শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়।

ঠান্ডা দুধের উপকারিতা

  • যাদের বদহজমের সমস্যা রয়েছে, তারা গরম দুধের পরিবর্তে ঠান্ডা দুধেই বেশি উপকার পাবেন। আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে খেতে পারেন ইসবগুল।
  • ঠান্ডা দুধে থাকে প্রচুর পরিমাণ ইলেকট্রোলাইট। এ ইলেকট্রোলাইট ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। 
  • ঠান্ডা দুধ স্থূলতা কমায়। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়, এতে ক্যালরি খরচ হয় বেশি। এ ছাড়া এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করলে আপনি অনেকক্ষণ ধরে আর কিছু খাওয়ার আগ্রহ বোধ করবেন না। এতে করে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে ওজন কমবে।
  • যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য ঠান্ডা দুধ ভীষণ উপকারী। এতে বুক ও পেট জ্বালাপোড়া কমে। তাই খাবার খাওয়ার পর রোজ আধা গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করুন। ওষুধ ছাড়াই সমস্যা কমবে।

Comments