কী খেলে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

ছবি: সংগৃহীত

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ভেজাল খাদ্য ও প্রক্রিয়াজাত করা খাবারের প্রভাবে ধীরে ধীরে কমে যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় শরীর। অল্প পরিশ্রমেই শরীর ও মনে আসে ক্লান্তি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভাস।

কী কী খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাশরিয়ার রহমান।

তাশরিয়ার রহমান বলেন, কোনো নির্দিষ্ট এক প্রকার বা একই খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। প্রতিদিনের  খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখতে হবে যেগুলো দেহের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করবে। খাদ্য থেকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলস এই উপাদানগুলোর চাহিদা পূরণ করা হয়। এই উপাদানগুলো সম্মিলিতভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি করে।

কার্বোহাইড্রেট: আমরা কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণ করার জন্য ভাত খাই। কিন্তু ভাতের মধ্যে খুব সামান্য পরিমাণ পুষ্টি থাকে। বরং ভাত খাওয়ার পরিমাণ বেশি হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আটার মধ্যে আছে ভিটামিন বি-৬ বা পাইরিডক্সিন। এটি প্লীহা ও থাইমাস গ্রন্থির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ গ্রন্থিগুলো রোগ প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই মাছ, মাংস, ডিম,কলিজা এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ডাল, বিভিন্ন বীজ (কুমড়োর বীজ, শীমের বীজ)  প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

দুধ জাতীয় খাবার: দই বা ইয়োগার্ট-জাতীয় খাবারকে প্রোবায়োটিক ফুড বলা হয়। এগুলোতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া যা পুষ্টিপদার্থ শোষণে কাজ করে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এ ব্যাকটেরিয়া থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দুধে রয়েছে ফ্যাট, ভিটামিন, ও মিনারেলস। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ শরীরে প্রচুর শক্তি যোগায়।

শাকসবজি: শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। টাটকা শাকসবজিতে পাওয়া যায় ফলিক এসিড। রঙিন শাকসবজি যেমন টমেটো, গাজর, ক্যাপসিকাম ইত্যাদিতে থাকে ক্যারোটিনয়েড। রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন (এ, ডি,ই, কে) এবং মিনারেলসের (ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক,পটাশিয়াম ইত্যাদি) চাহিদা অনেকাংশে শাকসবজি দ্বারা পূরণ হয়। তাই প্রতিদিনই শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর ভালো থাকে।

ফলমূল: কমলা, মাল্টা, আমড়া, লেবু এসব টকজাতীয় ফল থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন সি, ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আম, কলা, পেঁপে, রঙিন ফলে ভিটামিন ই, ভিটামিন এ পাওয়া যায়। সব ধরনের ফল মিনারেলসের ভালো উৎস।

ওমেগা-৩, ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড জাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছ, অলিভ অয়েল, কাঠবাদাম, মাছের তেল ইত্যাদিতে এই ফ্যাটি অ্যাসিড আছে।

তরল খাবার: যেকোনো তরল ও কুসুম গরম খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চা, গ্রিন টি, স্যুপ- এসব তরল খাবার গ্রহণের ফলে দেহে ফ্লুইডের ঘাটতি পূরণ হয় এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

রসুন, কালিজিরা, আদা এগুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এগুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এসব খাবার গ্রহণের পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংসকারী খাবার ও অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড, সফট ড্রিংকস,চিনি ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

5h ago