গাজার ৭৭ শতাংশ এলাকা এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার ৭৭ শতাংশ জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
আজ রোববার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সরকারি গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের গণমাধ্যম কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছ, 'মাঠ পর্যায়ের তথ্য ও যাচাইকৃত বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করছে যে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী এখন কার্যত গাজার মোট এলাকার প্রায় ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এসব এলাকা থেকে হয় ফিলিস্তিনিদের চলে যেতে বলা হয়েছে, না হয় গুলি চালানো হচ্ছে। এতে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না তারা।'
গণমাধ্যম কার্যালয় ইসরায়েলের গণ বাস্তুচ্যুতি, জাতিগত নিধন, নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা ও জোরপূর্বক অবৈধ বসতি স্থাপনের উদ্যোগের প্রতি তীব্র নিন্দা জানায়।
কার্যালয় দাবি করে, ইসরায়েল গাজার জনমানুষ ও অবকাঠামো, উভয়ের ওপর তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী হামলা চালাচ্ছে।

ইসরায়েলি গণহত্যায় সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সকেও দায়ী করেছে গণমাধ্যম কার্যালয়। কার্যালয়ের দাবি, গাজায় অপরাধমূলক গণহত্যার জন্য ইসরায়েলের পাশাপাশি ওই দেশগুলোই 'পুরোপুরি' দায়ী।
গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চান নেতানিয়াহু
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু 'পুরো গাজা নিয়ন্ত্রণের' যে পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, তা বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে দেশটির সামরিক বাহিনী।

উপত্যকাটির ৭৭ শতাংশ ভূখণ্ড এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এতে গাজার ক্ষুদ্র একটি অংশের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা। অবিরাম হামলা ও অনাহার তাঁদের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে।
গত সোমবার এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, 'লড়াই চলছে, আমরা অগ্রসর হচ্ছি। গাজার প্রতিটি ইঞ্চি আমরা দখলে নেব। সফল হতে হলে আমাদের এমনভাবে লড়তে হবে, যাতে কেউ আমাদের থামাতে না পারে।'
বৃহস্পতিবার ইসরায়েল হাইয়োম সংবাদমাধ্যম জানায়, সেনাবাহিনী আগামী তিন মাসের মধ্যে বিস্তৃত সামরিক অভিযানের মাধ্যমে গাজার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে চায় ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নেই অগ্রগতি
আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষ থেকে বারবার যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হলেও এতে কর্ণপাত করছে না বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মাস দুয়েকের যুদ্ধবিরতির সময় ছাড়া উপত্যকাটিতে নির্বিচার চলছে মানুষ হত্যা। গতকালও গাজায় অন্তত ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ দিন দক্ষিণের খান ইউনিস, উত্তরের জাবালিয়া ও মধ্য গাজার নুসেইরাতে হামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আশরাফ আবু নার মানের এক সাংবাদিক রয়েছেন।
এসব গণহত্যামূলক মোট নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি। নিহত ফিলিস্তিনিদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

অপরদিকে, কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির আলোচনাও চলছে ঢিমে তালে। অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যার মামলা চলছে। ওই মামলার মূল অভিযোগ, গাজা উপত্যকার নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকা।
তবে এসবের কিছুই নেতানিয়াহুকে তার পরিকল্পনা থেকে টলাতে পারেনি।
Comments