লেবাননে ইসরায়েলি বিমানহামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯২

ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা দিয়েছে। ছবি: ডয়চে ভেলে
ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা দিয়েছে। ছবি: ডয়চে ভেলে

লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯২ হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত এক হাজার ৬৪৫ জন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে নিহতদের মধ্যে ৫৮ জন নারী এবং ৩৫ জন শিশু। আহত হয়েছেন এক হাজার ৬৪৫ জন।

২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত শুরুর পর এক দিনে এতজন মানুষ নিহতের নজির নেই।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দক্ষিণ ও পূর্ব লেবাননের বাসিন্দাদের সাবধান করে দিয়ে বলেছে, তারা যেন নিরাপদ জায়গায় চলে যান। কারণ, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ আরো তীব্র হবে।

ইসরায়েলের দাবি

দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের দাবি, তাদের যুদ্ধবিমান হিজবুল্লাহর এক হাজার ছয়শটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। এসব জায়গায় আক্রমণ চালিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও রকেট ধ্বংস করা হয়েছে।

ইসরায়েলের দাবি, আবাসিক এলাকায়, বেসামরিক মানুষের বাড়িতে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননকে 'ওয়ার জোনে' পরিণত করেছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর কাছে দেড় লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা দিয়ে তারা ইসরায়েলের যে কোনো জায়গায় আক্রমণ চালাতে পারে। গত ২০ বছর ধরে হিজবুল্লাহ প্রচুর অস্ত্র মজুত করেছে। তারা জানিয়েছে, লড়াই এখন নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

নেতানিয়াহুর বার্তা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রেকর্ড করা এক বার্তায় বলেছেন, লেবাননের সাধারণ মানুষ যেন ইসরায়েলের পরামর্শ মেনে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। তারা যেন এই সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেন।

নেতানিয়াহু বলেছেন, 'দয়া করে আপনারা চলে যান। আমাদের অভিযান শেষ হলে আপনারা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন।'

এরপর দক্ষিণ লেবানন থেকে হাজারো মানুষ ঘর ছেড়েছেন। দক্ষিণ লেবাননের বন্দর শহর সিডনের রাস্তাগুলো এখন গাড়িতে ভর্তি। ২০০৬ সালের পর থেকে এরকম দৃশ্য দেখা যায়নি দেশটিতে।

হ্যাগারি বলেন, 'হিজবুল্লাহকে ইসরায়েলের সীমান্ত থেকে দূরে সরাতে যা করা দরকার তা আইডিএফ করবে।'

'সোমবার বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ইসরায়েল স্থলপথেও লেবাননে হামলা চালাবে', যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেছেন, 'আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণে যা করার দরকার সেটাই করব।'

ইসরায়েলের দাবি, অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েল লক্ষ্য করে নয় হাজারের বেশি ড্রোন ও রকেট ছুঁড়েছে।

ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি

ইসরায়েল সরকার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

ইসরায়েলের মিডিয়া জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি থাকবে। এতদিন পর্যন্ত উত্তর ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি ছিল। এখন তা পুরো দেশেই জারি করা হলো।

এর ফলে এক জায়গায় বেশি মানুষ একত্রিত হতে পারবেন না। তবে আইডিএফের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো বিধিনিষেধের কথা জানানো হয়নি।

হিজবুল্লাহ নেতা নিরাপদে

ধারণা করা হচ্ছে, হিজবুল্লাহ নেতা আলী কারাকিকে হত্যার জন্য বৈরুতে আক্রমণ করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু ইসরায়েলের আক্রমণে তার কোনো ক্ষতি হয়নি। তাকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কারাকি হলেন হিজবুল্লাহর দক্ষিণ ফ্রন্টের নেতা। তিনি হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি ইসরায়েলের আক্রমণে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার মৃত্যু হয়েছে।

ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি-সহ কয়েকটি দেশ।

কারাকির নিরাপদে থাকার খবরটি কয়েকটি বার্তাসংস্থা বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে। তবে ডয়চে ভেলে এর সত্যতা যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।

বরেল জানালেন, পুরোদস্তুর যুদ্ধ হচ্ছে

ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন লেবানিজরা। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন লেবানিজরা। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এখন প্রায় পুরোদস্তুর যুদ্ধ হচ্ছে বলে জানালেন ইইউর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল।

তিনি জাতিসংঘে বলেন, 'এটা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি নয়। প্রায় পুরোদস্তুর যুদ্ধ। আমি জানি না, আপনারা একে কী বলবেন।'

এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ

Comments