ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কায় বৈরুতে ফ্লাইট বাতিল-বিলম্বিত
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বিত হয়েছে। দেশটির উড়োজাহাজ সংস্থা মিডল ইস্ট এয়ারলাইনস (এমইএ) বলেছে, ইসরায়েল ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাতের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জেরে বিমা-ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। যার ফলে ফ্লাইট বাতিল-বিলম্বিত হচ্ছে।
আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বের জেরে বৈরুতের রফিক-হারিরি বিমানবন্দরে অসংখ্য যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।
লুফথানসা গ্রুপ জানিয়েছে, তারা সোমবার বৈরুতে থেকে ও বৈরুতে পৌঁছানোর পাঁচটি রুট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। গ্রুপের তিন সংস্থা সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, ইউরোউইংস ও লুফথানসার ফ্লাইটগুলো ৩০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে শনিবার রকেট হামলায় ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী ১২ জন নিহতের পর থেকেই ইরান-সমর্থিত সংগঠন হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা ক্যাবিনেট রোববার সরকারকে হামলার মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে জবাব দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।
তবে হিজবুল্লাহ এই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের অতর্কিত হামলার পর এটাই দেশটির বিরুদ্ধে সবচেয়ে মারাত্নক হামলার ঘটনা।
বৈরুতের ফ্লাইট তথ্য বোর্ড ও ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ এর মাধ্যমে জানা গেছে, টার্কিশ এয়ারলাইন্সও রোববার রাতের দুইটি ফ্লাইট বাতিল করেছে।
ফ্লাইটরাডার২৪ আরও জানিয়েছে, তুরস্কের বাজেট এয়ারলাইন্স সানএক্সপ্রেস, এজেট, গ্রীসের এজিয়ান এয়ারলাইন্স, ইথিওপিয়ান এয়ার ও মিইএ সোমবার বৈরুতে অবতরণ করার কথা ছিল এমন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করেছে।
তবে এই এয়ারলাইন্সগুলো তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন।
এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজায় নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান এই হামলায় ৩৯ হাজার ৩২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা অন্তত ৯০ হাজার ৮৩০।
হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা বেড়ে চলছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেড়েছে।
বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিই লেবাননের একমাত্র বিমানবন্দর। দেশটির গৃহযুদ্ধ, ইসরায়েলের সঙ্গে আগের সংঘাত ও ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের সংঘাতে আক্রান্ত হয়েছে এই বিমানবন্দর।
রোববার এমইএ জানিয়েছে, তারা বৈরুতে অবতরণের কথা ছিল এমন কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত করেছে। সোমবারের ফ্লাইটগুলোও বিলম্বিত হয়েছে বলে জানায় উড়োজাহাজ সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটি কারণ হিসেবে জানায়, 'লেবানন থেকে অন্যান্য গন্তব্যে যাত্রার বিমা ঝুঁকি সংক্রান্ত কারিগরি কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।'
গাজার যুদ্ধের শুরু থেকেই হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সীমান্ত এলাকায় হামলা ও পাল্টা হামলা চালিয়ে আসছে। এই সংঘাতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ফ্লাইট ও জাহাজের চলাচলে বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এপ্রিলে ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলার ঘটনাও ঘতেছে।
এর আগেই লুফথানসা মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার জেরে রাতের বেলায় বৈরুতে ফ্লাইট পরিচালণা বন্ধ রেখেছিল।
Comments