গাজা সিটি ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের গুলি করছে ইসরায়েলি স্নাইপার

গাজায় গোপন অবস্থানে ইসরায়েলি স্নাইপার। ফাইল ছবি: রয়টার্স (২১ ডিসেম্বর, ২০২৩)
গাজায় গোপন অবস্থানে ইসরায়েলি স্নাইপার। ফাইল ছবি: রয়টার্স (২১ ডিসেম্বর, ২০২৩)

গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত গাজা সিটি খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে অভিযোগ এসেছে, সেখান থেকে পালাতে উদ্যত ফিলিস্তিনিদের দিকে গুলি ছুড়েছে ইসরায়েলি স্নাইপাররা। 

আজ বৃহস্পতিবার আল জাজিরার লাইভ আপডেটে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

গাজা সিটির শুজাইয়া মহল্লার ইয়ারমৌক স্টেডিয়ামের মধ্য দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন এক ফিলিস্তিনি নারী। কিন্তু তাকে জানানো হয়, সেই সড়কে ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহের স্তূপ জমে আছে।

তিনি বলেন, 'আমরা প্যারামেডিক ও দমকলবাহিনীর সদস্যদের কাছে সাহায্য চাই। তারা যেন অন্তত মরদেহগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এটা না করা হলে রাস্তার কুকুর এসে মরদেহ থেকে মাংস খেতে শুরু করবে। তাদেরকে কবর দেওয়া প্রয়োজন।'

গাজায় গোপন অবস্থানে ইসরায়েলি স্নাইপার। ফাইল ছবি: রয়টার্স (২১ ডিসেম্বর, ২০২৩)
গাজায় গোপন অবস্থানে ইসরায়েলি স্নাইপার। ফাইল ছবি: রয়টার্স (২১ ডিসেম্বর, ২০২৩)

কিন্তু ঐ এলাকার অপর এক ব্যক্তি জানান, প্যারামেডিকরা মরদেহের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।

'তারা (প্যারামেডিক) আমাদেরকে জানায়, মরদেহের কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই তাদের এবং যারা নিহতদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবে, তাদের ওপর সরাসরি গুলি চালাবে স্নাইপাররা', যোগ করেন তিনি।

বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তারা নিজেদের চোখে দেখেছেন, এক ব্যক্তি হেঁটে যাওয়ার সময় মাথায় রাইফেলের গুলির আঘাত পেয়ে টলে পড়ে যান। পরবর্তীতে কোনোমতে তারা এই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, 'মানুষটা শান্তিপূর্ণ ভাবে হাঁটছিল। হঠাত তার মাথায় বুলেট আঘাত করে। তিনি পড়ে যাওয়ার পর আমরা তাকে এখানে নিয়ে আসি।'

এর আগে গাজা সিটিতে অবস্থানকারী সব ফিলিস্তিনিকে শহরটি ছেড়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

গাজা সিটির ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় ইসরায়েল নতুন করে হামলা জোরদারের পরিপ্রেক্ষিতে এমন নির্দেশ দেওয়া হলো। এই হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গতকাল বুধবার উড়োজাহাজ থেকে লিফলেট ফেলে গাজা সিটিতে থাকা সব ফিলিস্তিনিকে শহর ছাড়তে বলা হয়। তাদের নিরাপদে দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও আজ জাওয়াইদায় যেতে বলা হয়।

তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই নির্দেশ না মানতে গাজা সিটির বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস-শাসিত গাজা উপত্যকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই নির্দেশকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

গাজার আল-আওদাহ নামের একটি বিদ্যালয়ে ইসরায়েলি বিমান হামলার এক দিন পরই গাজা সিটি খালি করার এই নির্দেশ এসেছে। এই হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত ও ৫৩ জন আহত হয়েছেন।

হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

মার্কিন স্নাইপারের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ইসরায়েলি স্নাইপার। ছবি: আইডিএফ
মার্কিন স্নাইপারের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ইসরায়েলি স্নাইপার। ছবি: আইডিএফ

দেইর আল-বালাহতে থাকা আল জাজিরা প্রতিবেদক বলেন, ইসরায়েলি হামলা জোরদার হওয়ায় গাজা সিটির বাসিন্দাদের মনে হচ্ছে, তারা আটকা পড়েছেন। কোথায় যাবেন, তা জানেন না। এখানে কোনো বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী বা রেডক্রসেরও উপস্থিতি নেই।

ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম এমন কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এ মুহূর্তে নেই গাজা সিটিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।

গাজা সিটির অংশবিশেষ থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে ইসরায়েল প্রথম আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেয় গত ২৭ জুন। পরে আরও দুটি নির্দেশ দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার পুরো শহর ফাঁকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজায় নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৯ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৮ হাজার ২৯৫। আহতের সংখ্যা অন্তত ৮৮ হাজার ২৪১। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English
Exporters to get Tk 108.5 for a dollar from Aug 1

Taka gains against dollar after several years

Taka gains ground as dollar influx rises, strengthening currency after years

1h ago