বিশ্বমঞ্চে ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়াতে চান মিসরে পালিয়ে আসা কারাতে চ্যাম্পিয়ন

ফিলিস্তিনি নারী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মাইস আলবোস্তামি। ছবি: এএফপি
ফিলিস্তিনি নারী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মাইস আলবোস্তামি। ছবি: এএফপি

গত বছরের ৬ অক্টোবর ফিলিস্তিনি নারী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মাইস আলবোস্তামি গাজা উপত্যকায় একটি প্রতিযোগিতায় জিতে খুশী মনে রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি ভিন্ন এক জগতে নিজেকে আবিষ্কার করেন।

আজ রোববার এএফপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই কারাতে চ্যাম্পিয়নের জীবনযুদ্ধের বিস্তারিত। 

১৮ বছর বয়সী এই কারাতে চ্যাম্পিয়ন এখন মিসরের রাজধানী কায়রোর শহরতলীতে তার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে তিনি ও তার পরিবার এখানে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

লাজুক স্বভাবের মাইস এএফপিকে জানান, তিনি নিয়মিত প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আশা করছেন কোনো একদিন আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবেন।

ফিলিস্তিনি নারী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মাইস আলবোস্তামি। ছবি: এএফপি
ফিলিস্তিনি নারী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মাইস আলবোস্তামি। ছবি: এএফপি

তিনি জানান, ৬ অক্টোবরের প্রতিযোগিতায় জেতা পদক ভালো করে গুছিয়ে রাখার আগেই হামাসের নজিরবিহীন হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের গণহত্যামূলক আগ্রাসন শুরু করে।

অবিলম্বে তিনি ও তার পরিবার উত্তর গাজা উপত্যকা থেকে পালিয়ে দক্ষিণ গাজায় সরে যেতে বাধ্য হন।

মাইস বলেন, 'বোমাবর্ষণে নারকীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। বারবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাতে বাধ্য হই আমরা। প্রতিটি ঘণ্টাকে একেক বছরের মতো মনে হচ্ছিল।'

'প্রথম ১০ দিনেই আমি আমার কোচ জামাল আল-খাইরিকে হারাই। তার নাতনীও নিহত হন। সে আমার সঙ্গে কারাতে প্রশিক্ষণে অংশ নিতো', যোগ করেন তিনি।

এপ্রিলে মিসর এসে পৌঁছান মাইস ও তার পরিবার। সে সময় তার মনে দুইটি বিষয় কাজ করছিল। গাজায় থেকে যাওয়া পরিবারের বাকি সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও আবারও কারাতে প্রশিক্ষণ শুরু করা।

ফিলিস্তিনি জাতীয় কারাতে কোচ হাসান আল-রাইয়ি নিজে গাজায় আটকা পড়লেও মিসরের জাতীয় দলের সঙ্গে মাইসের যোগাযোগ করিয়ে দিন। দুই সপ্তাহের মাঝে মাইস প্রশিক্ষণে ফিরে যেতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, 'মিসরে আমার কোচরা আমাকে সন্তানের মতো দেখেন। তারা আমাকে পরবর্তী চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে তুলছেন', যোগ করেন ফিলিস্তিনি কারাতে যোদ্ধা মাইস।

যতক্ষণ সময় পান, কারাতে জিমে প্রশিক্ষণ নেন মাইস। বাকি সময়টা সড়কে বা তার বাড়ির পাশের বাগানেও কসরত করে কাটান তিনি।

বিশ্বমঞ্চে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াতে চান মাইস । ছবি: এএফপি
বিশ্বমঞ্চে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াতে চান মাইস । ছবি: এএফপি

মাঝে মাঝে গাজার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের কথা মনে পড়ে যায় তার।

'নিজের দেশে প্রশিক্ষণ অন্যরকম ছিল। প্রতি শুক্রবার আমি আর আমার সতীর্থরা প্রশিক্ষণের জন্য সাগরের তীরে যেতাম', যোগ করেন তিনি। 

মাইস জানান, তিনি তার লক্ষ্যে অবিচল। 'আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াতে চাই', যোগ করেন তিনি।

আগামী আগস্টে মিসরের জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান মাইস আলবোস্তামি।

তিনি জানান, 'এটা বেশ কঠিন পরীক্ষা', কারণ ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের চেয়ে কারাতে পারদর্শিতায় মিসর অনেক এগিয়ে।

'কিন্তু তাদের সঙ্গে লড়ে আমার নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়বে', যোগ করেন তিনি।

মাইসের মিসরীয় কোচ মামদুহ সালেম এএফপিকে বলেন, এই তরুণ ক্রীড়াবিদের 'অপার সম্ভাবনা, অঙ্গীকার ও ধারাবাহিকতা' রয়েছে।

'আমরা তার কৌশলকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু পরিশেষে কারাতে প্রতিযোগিতায় প্রতিভার চেয়ে দক্ষতা ও পরিশ্রম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি মাইস ভালো করবে', যোগ করেন তিনি।

ফিলিস্তিনি নারী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মাইস আলবোস্তামি। ছবি: এএফপি
ফিলিস্তিনি নারী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মাইস আলবোস্তামি। ছবি: এএফপি

কোচ জানান, তিনি মাইসকে সারা বিশ্বে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলনে সাহায্য করবেন।

'আমরা গাজায় ওদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে পারছি না। অন্তত তাদেরকে দেশের বাইরে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সহায়তা করতে পারি', যোগ করেন তিনি।

মাইসের অনেক সতীর্থ, কোচ ও তার বেশিরভাগ আত্মীয় গাজায় আটকে আছেন। অনেকে ইতোমধ্যে মারাও গেছেন"

সব ধরনের বাধাবিপত্তি জয় করে তিনি এখনো বেঁচে আছেন।

'আমার লক্ষ্য না পৌঁছানোর জন্য কোনো অজুহাত নেই', যোগ করেন মাইস।

তিনি বলেন, 'ফিলিস্তিনিদের আশা-প্রত্যাশার কথা সবার নজরে আনার জন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব। যখনই আমি কোনো চ্যাম্পিয়নশিপে যাব, আমি ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করব। এটা আমার দেশ জন্য, ফিলিস্তিনি শহিদ ও আহতদের জন্য আমার সংগ্রাম।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

4h ago