ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল, ৪ দিন ধরে রমেক হাসপাতালে সেবা ব্যাহত

ডায়ালাইসিস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ইউনিটের বেডগুলো খালি পড়ে আছে। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে শর্টসার্কিটে নেফ্রলজি বিভাগের কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিনের যন্ত্রাংশ পুড়ে যাওয়ায় বিকল হয়ে পড়েছে কয়েকটি মেশিন। 

এতে হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটে জট বেঁধেছে রোগীদের। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক রোগী। 

সোমবার রমেক হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ইউনিটের একটি অংশ। বিছানাগুলো খালি পড়ে আছে। নামমাত্র টাকায় সরকারের এই সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শনিবার দুপুরে হঠাৎ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে পুড়ে গেছে ৭টি মেশিন ও ৮টি এয়ারকন্ডিশনার। এতে ব্যাহত হয়ে পড়ে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম। 

নীলফামারীর রানা মাহমুদ কিডনি রোগে আক্রান্ত মাকে নিয়ে সোমবার ডায়ালাইসিসের জন্য সকাল থেকে হাসপাতালে অপেক্ষা করলেও, চিকিৎসা করাতে পারেননি।

রানা মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাড়ে তিন বছর ধরে মায়ের ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে রংপুরে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। আমার পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করা সম্ভব না।'

দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে আসা জহুরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আড়াই বছর ধরে স্ত্রী কিডনি রোগে ভুগছেন। মৃত্যু পথযাত্রী স্ত্রীকে নিয়ে সোমবার ভোরে এসেছি হাসপাতালে। কিন্তু ডায়ালাইসিস না হওয়ায় বিপাকে পড়েছি।'

আক্ষেপ করে জহুরুল বলেন, 'অস্থিরতার বাজারে হাসপাতালের ৪০০ টাকা জোগাড় করা আমার জন্য কঠিন। হাসপাতালে চিকিৎসা না হলে স্ত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।'

জানতে চাইলে হাসপাতালের ডায়ালাইসিস বিভাগের ইনচার্জ সাজেদা খাতুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক ধাপে এই বিভাগে ৩৯টি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করা হলেও, শুধু বৈদ্যুতিক সমস্যায় নষ্ট হয়েছে ২০টি মেশিন। বর্তমানে ১৯টি মেশিন সচল থাকলেও সেগুলো চলছে জোড়াতালি দিয়ে।'

সাজেদা আরও জানান, গড়ে প্রতিদিন ৭০ জন রোগী আসেন ডায়ালাইসিস করতে। মেশিনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার লোকবলের অভাবে বিকল হচ্ছে এসব যন্ত্র। ডায়ালাইসিস করতে না পারায় রোগীর স্বজনদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। 

হাসপাতালে শটসার্কিটের কারণ জানতে চাইলে রংপুর গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) রাজিয়া সুলতানা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ডেইলি স্টারকে জানান, তার বদলি হয়ে গেছে। শটসার্কিটের খবর পেয়ে তিনি পরিদর্শনে এসেছেন।   

হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ বি এম মোবাশ্বের আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চিকিৎসাসেবায় আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। নষ্ট যন্ত্রপাতির কারণে এই ইউনিটের চিকিৎসকসহ কর্মকর্তাদের দুর্নামের ভাগ নিতে হচ্ছে।'

যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ইউনুস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেশিনগুলো জরুরিভাবে মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর বিদ্যুৎ শটসার্কিট বন্ধে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগকে অবগত করা হয়েছে।'

উল্লেখ্য, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর ডায়ালাইসিসের জন্য একমাত্র ভরসা দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের ২৭ তারিখ পর্যন্ত রংপুর মেডিকেলে ডায়ালাইসিস করেছেন ১৪ হাজার রোগী। 

 

Comments

The Daily Star  | English
consensus commission bicameral parliament proposal

Consensus commission: Talks stall over women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

5h ago