মিল থেকে ক্রেতা: ১ কেজি চালে কার পকেটে কত যায়

ছবি: সংগৃহীত

কৃষকের ধান বাজার ঘুরে যায় মিল মালিকের গোডাউনে। সেখানে চাল উৎপাদনের পর পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার হাত ঘুরে পৌঁছায় ভোক্তার ব্যাগে।

এই প্রক্রিয়ায় প্রতি কেজি চালে মিল মালিকের পকেটে যাচ্ছে ৬-৭ টাকা। পাইকারি বিক্রেতা মুনাফা করছেন ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা। খুচরা বিক্রেতাকে দুই টাকা মুনাফা দিয়ে ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে ৬৬ টাকায়।

মিল মালিক ও ব্যবসায়ী মিলে এক কেজি চালে নিয়ে যাচ্ছেন প্রায় ১০ টাকা। কুষ্টিয়ার চালকল, পাইকারি ও খুচরা বাজারে দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সরু চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর। সেখানে অর্ধশত অটোরাইস মিল ও প্রায় ৪০০ হাস্কিং মিল আছে।

একটি অটোরাইস মিলে ৬০০ মণ ধান থেকে চাল উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে থেকে দেখা গেছে, সবচেয়ে উন্নতমানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল উৎপাদনে খরচ প্রায় ৫৬ টাকা ৮৮ পয়সা।

সেই চাল স্থানীয় বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়।

উৎপাদন প্রক্রিয়ার শুরুতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিপ্লব হোসেন যশোরের বাজার থেকে কেনেন ৬০০ মণ সুপার মিনিকেট ধান (প্রচলিত নাম)। এর বাজারমূল্য এক হাজার ৪৩০ টাকা মণ ধরে আট লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

মিলে ধান পৌঁছাতে গাড়ি ভাড়া লাগে ১৩ হাজার টাকা। চাল উৎপাদনে মিল ভাড়া ৬০ হাজার টাকা। চাল প্যাকেজিংয়ের জন্য সাড়ে ১৬ হাজার টাকায় কেনা হয় ৩০০টি বস্তা। শ্রমিকদের বকশিস দেওয়া হয় এক হাজার ৩০০ টাকা। প্রয়োজনীয় পলিথিন ও খুদের বস্তা কিনতে খরচ হয় এক হাজার ২০০ টাকা। এতে মোট খরচ দাঁড়ায় সাড়ে নয় লাখ টাকা।

ওই ৬০০ মণ ধান প্রক্রিয়া করে মিল থেকে উৎপাদন হয় ১৫ হাজার কেজি চাল, কালো চাল (পশুখাদ্য) ৪০০ কেজি, কাটা চাল (পশুখাদ্য) ৪০০ কেজি, ক্রিম খুদ (পশুখাদ্য) ২৫০ কেজি, পলিশ খুদ (পশুখাদ্য) ৩৬০ কেজি ও পলিশ (তেল উৎপাদনের কাঁচামাল) পাওয়া যায় ১৪৭০ কেজি। বাকি পড়ে থাকে তুষ, যা মিল মালিকদের বিনামূল্যে দিয়ে দেওয়া হয়।

চালের উৎপাদন খরচ বের করতে প্রথমে বাজার থেকে জানা হয় উপজাতগুলোর দাম।

দেখা গেছে, প্রতি কেজি পলিশের দাম ৩৮ টাকা কেজি। তাতে এক হাজার ৪৭০ কেজি পলিশ বিক্রি করে পাওয়া যায় ৫৫ হাজার ৮৬০ টাকা। ৪০০ কেজি কাটা চালের দাম ৩২ টাকা কেজি ধরে ১২ হাজার ৮০০ টাকা। ৪০০ কেজি কালো চালের দাম ২৮ টাকা কেজি ধরে পাওয়া যায় ১১ হাজার ২০০ টাকা। ২৫০ কেজি ক্রিম খুদের দাম সাড়ে সাত হাজার টাকা। ৩৬০ কেজি পলিশ খুদের দাম ২৬ টাকা কেজিতে হিসেবে নয় হাজার ৩৬০ টাকা।

এসব মিলিয়ে চালের বাইরে উপজাত থেকে উৎপাদকের পান ৯৬ হাজার ৭২০ টাকা। মোট খরচ সাড়ে ৯ লাখ টাকা থেকে এই টাকা বাদ দিলে থাকছে ৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৮০ টাকা।

এবার এই টাকাকে মিল থেকে পাওয়া ১৫ হাজার কেজি চাল দিয়ে ভাগ করে দেখা যায়, এক কেজি চাল উৎপাদনে খরচ হয় ৫৬ টাকা ৮৮ পয়সা।

এই চাল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল মোড়ের রুবেল হোসেনের দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২৫ কেজির বস্তা এক হাজার ৬৫০ টাকা অর্থাৎ কেজিপ্রতি ৬৬ টাকায়। প্রতি কেজির জন্য খুচরা ক্রেতাকে গুণতে হচ্ছে ৬৭ টাকা।

রুবেল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিলগেটে নতুন চাল বস্তাপ্রতি কেনা পড়ছে এক হাজার ৫৯০ টাকা। এতে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৬৩ টাকা ৬০ পয়সা। মিলগেটে ২৫ কেজির প্রতি বস্তা সুপার মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫৮০ থেকে এক হাজার ৫৯০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম ৬৩ টাকা ৬০ পয়সা।'

'উৎপাদন খরচ ৫৬ টাকা ৮৮ পয়সা বাদ দিলে প্রতি কেজিতে মিল মালিকদের মুনাফা হচ্ছে ৬ টাকা ৭২ পয়সা। আর ৬৩ টাকা ৬০ পয়সা কেজিতে কেনা চাল ৬৬-৬৭ টাকায় বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা পকেটে তুলছেন প্রতি কেজিতে দুই টাকা ৪০ পয়সা থেকে সাড়ে তিন টাকা। এতে মিল মালিক ও ব্যবসায়ী মিলে প্রতি কেজিতে মুনাফা করছেন প্রায় ১০ টাকা। গুণগতমানে কিছুটা হেরফের হলেই মুনাফার খাতায় জমা হয় ১২ টাকা পর্যন্ত,' বলেন তিনি।

কুষ্টিয়া পৌর মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা রিপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহরের বড় বাজার থেকে নতুন চাল আমরা কিনছি কেজিপ্রতি ৬৪-৬৫ টাকায়। বিক্রি করছি ৬৬ টাকায়। কেউ কেউ প্রতি কেজি ৬৭ টাকায় বিক্রি করলেও আমরা তা করছি না।'

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন সাধু। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এভাবে ৬০০ মণ ধান নিয়ে কেউ চাল করতে চাইলে উৎপাদন খরচ হয়ত এমনই পড়বে। তবে নিয়মিত মিল মালিকদের ক্ষেত্রে হিসাবটা আরেকটু বাড়বে। কেননা, তাদের নিয়মিত শ্রমিক রাখতে হয়।'

তিনি দাবি করেন, প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে তাদের প্রায় ৬০ টাকা খরচ হয়।

তবে ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে ধানের দাম ও অন্যান্য খরচ সম্পর্কে তিনি দ্বিমত পোষণ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English
conflict over security responsibilities at Dhaka airport

Dhaka airport: APBn at odds with aviation force over security duties

A conflict has emerged between the Aviation Security Force (AVSEC) and the Airport Armed Police Battalion (APBn) over security responsibilities at Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA). APBn claims that AVSEC took control of their office on October 28, hindering their ability to perform duties effectively

55m ago