২ মাসের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা

ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ব্রয়লার মুরগি গত ডিসেম্বরের ১ তারিখে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ২৫০ টাকা। গতকাল শনিবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা। দাম বেড়েছে ডিমেরও।

 প্রতি ডজন মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা টাকা। ডিসেম্বরের ১ তারিখে প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, মুরগির খাবার ফিডের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম গত বছরের আগস্টে বৃদ্ধি পাওয়ার পর পরিবহন ভাড়া কিছুটা বাড়ানো হয়। তারপর থেকে সরকারি হিসাবে পরিবহন ভাড়া আর বাড়েনি।

মুরগির খাবার ফিডের দাম কী পরিমাণে বেড়েছে তা জানতে গতকাল কারওয়ান বাজার ও গুলিস্তানের কাপ্তানে বাজারে যায় এই প্রতিবেদক।

ফিড ব্যবসায়িরা বলছেন, যে হারে মুরগির দাম বেড়েছে সে হারে কিন্তু ফিডের দাম বাড়েনি।

কারওয়ান বাজারের আল্লাহর ভরসা এন্টার প্রাইজের ম্যানেজার রুবেল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি বছরের জানুয়ারিতে সান ফিডের দাম প্রতি কেজি ছিল ৪০ টাকা। বর্তমানে প্রায় একই আছে। ৪০-৪২ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। সুতরাং ফিডের দামের কারণে ব্রয়লারের দাম এত বেড়েছে বলে বিক্রেতারা যে কারণ দেখাচ্ছে তা যুক্তি সঙ্গত নয়।'

কাপ্তান বাজারের হুসেন অ্যান্ড ব্রাদার্স দোকানের ম্যানেজার মো. সাইফুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেড় মাস আগে ২৫ কেজি ওজনের মদিনা ফিডের দাম ছিল ৯০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি কেজি ফিডে দাম বেড়েছে ৪ টাকা। তবে ফিডের দামের তুলনায় মুরগির দাম অনেক বেশি বেড়েছে।'

কাপ্তান বাজারের পালক ট্রেডার্সের ম্যানেজার মো. সোহেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যখন ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪০ টাকা তখন কেয়ার ফিডের দাম ছিল ৪০ টাকা। বর্তমানে কেয়ার ফিড টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৩ টাকা। কিন্তু মুরগি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। সুতরাং ফিডের দাম বাড়ার কারণে মুরগির দাম এত বেশি বেড়েছে কথাটি সত্য নয়।'

ব্যবসায়িদের হিসেবে পোল্ট্রি ফিডের যে দাম বেড়েছে তা ১ শতাংশেরও কম, তবে মুরগির দাম বেড়েছে ৭১ শতাংশের বেশি।

কাপ্তান বাজারের মায়ের দোয়া ট্রেডার্সের ম্যানেজার মো. হাসর বলেন, 'আমরা যখন পাইকারিভাবে মুরগি কিনি তখন বলা হয় খাবারের দাম বেড়েছে, বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে, মুরগির ওষুধ, টিকার দাম বেড়েছে এ কারণে মুরগির দাম বেড়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়। তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করি।'

কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. আনিসুরও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, 'বেশি দামে কেনা তাই আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। খাবারের দাম বাড়ার কারণে না কি মুরগির দাম বেড়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।'

কাপ্তান বাজারের পাইকারি মুরগি বিক্রেতা কাওসার আহমেদ বলেন, 'আজ শনিবার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা।'

এই বিক্রেতা মুরগির দাম বৃদ্ধির জন্য খাবারের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন।

ফিডের দামের চেয়ে মুরগির দাম ৭১ গুণ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, 'আমাদের বেশি দামে খামারিদের কাছ থেকে কিনতে হয়। তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি।'

কাপ্তান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. কবির দিলেন ভিন্ন এক তথ্য। তিনি বলেন, 'কিছুদিন আগে এক মন্ত্রী বলেছিলেন ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ খাবার। তখন থেকেই মূলত মুরগির দাম বাড়া শুরু করেছে।'

এই বিক্রেতার বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া গেছে।

কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক গত ১২ জানুয়ারি সচিবালয়ে এক গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করে বলেছিলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস একটি নিরাপদ খাদ্য এবং ব্রয়লার মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই। ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কি না, এ বিষয়ক গবেষণায় এসব ফলাফল পাওয়া গেছে।

মূলত সেদিন ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। তারপর থেকেই দাম বাড়তে থাকে।

মুরগি ও ডিম ছাড়াও গত ২ মাসে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে এলাকা ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। খাঁসির মাংস কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

আজ কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, গাঁজর ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি পিস আকার ভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। টমেটো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh, Japan for concluding EPA soon to boost economic, trade ties

Japanese PM Ishiba described Bangladesh as a long-standing friend and said that Japan would stand by Bangladesh in its endeavour for a democratic transition

55m ago