‘ঢাকার নদী দূষণে দায়ী ওয়াসা’

নদী বাঁচাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও দূষণ ও দখল রোধে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাই ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলো এখনও দূষিত হচ্ছে।

ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করেছেন।

ঢাকা ওয়াসার পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন লাইন নির্মাণে ব্যর্থতায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা ও এর আশেপাশের কারখানাগুলো নদীতে বর্জ্য ফেলে। গৃহস্থালি ও শিল্প কারখানার বর্জ্যের সংমিশ্রণে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার মতো নদীগুলোকে পরিণত করেছে 'ইকোলজিক্যালি ডেড'।

মনজুর বলেন, 'ঢাকা শহরে উৎপাদিত মানববর্জ্য সব চলে যায় আশপাশের ৪টি নদীতে। ঢাকা ওয়াসার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার কারণে এমনটি হয়েছে। মলমূত্র ও বৃষ্টির পানি একই পাইপের মাধ্যমে নদীতে যায়। বর্জ্যের সঠিক প্রবাহের জন্য আলাদা পাইপ স্থাপন করা ওয়াসার দায়িত্ব। তারা তা করেনি, ফলে নদীগুলো দ্রুত দূষিত হচ্ছে।'

এনআরসিসি চেয়ারম্যান যোগ করেন, যদিও নদীগুলোর দখলকৃত জমির বেশিরভাগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, তবে দায়ীদের আইনের আওতায় না আনায় দূষণ বন্ধ করা যায়নি।

মনজুর আরও বলেন, 'ঢাকা ও এর আশেপাশে অন্তত চার কোটি মানুষ বাস করে। কিন্তু এমন একটি নদী বা জলাশয় নেই যেখানে মানুষ গোসল করতে পারে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন, উজানে পানি প্রত্যাহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন দেশের নদীগুলোতে প্রভাব ফেলছে। নদী সংরক্ষণের জন্য কাজ করা একটি সংস্থা হিসাবে এনআরসিসি এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে সূক্ষ্মভাবে সচেতন।'

এনআরসিসি সম্পর্কে মনজুর বলেন, সংস্থাটির ভূমিকা হল সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ প্রদান করা।

মনজুর বলেন, 'এনআরসিসি একটি অপেক্ষাকৃত নতুন সংস্থা। আমাদের দেওয়া কিছু সুপারিশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং বাকিগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহায়তায় এ পর্যন্ত আমরা ৫৭ হাজার অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করেছি এবং তাদের মধ্যে ১৪ হাজার উচ্ছেদ করেছি।'

নদীর সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে এনআরসিসি চেয়ারম্যান বলেন যে এটি একটি কঠিন কাজ।

তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি নদীগুলোরও ধীরে ধীরে সীমানা নির্ধারণ করা হবে বলে আশা করছি।'

এনআরসিসি যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে সে বিষয়ে মনজুর বলেন যে এটি সম্পূর্ণ হওয়া এখনও বাকি।

এনআরসিসি চেয়ারম্যান বলেন, 'কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মাস্টার প্ল্যান তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। আমি আশা করি আমরা অল্প সময়ের মধ্যে মাস্টার প্ল্যান সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।'

সাক্ষাৎকারের সময় তিনি ইউএনবিকে জানান, তার সংস্থার লক্ষ্য ২০২৩ সালের ১৭ মার্চের মধ্যে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ বন্ধ করা। কারণ দিনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।

মনজুর বলেন, 'আমরা শিগগিরই শহরের চারপাশের নদী দূষণ বন্ধ করতে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করব। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে ও নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh, Pakistan, China launch trilateral cooperation mechanism

A working group will be formed to follow up on and implement the understandings reached during the meeting

1h ago