'বালু নদী দূষণ রোধে প্রশাসন সহযোগিতা করছে না'

বৃহস্পতিবার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত ‘পুষ্টি’ কারখানা পরিদর্শন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ছবি: সুমন আলী/ স্টার

রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে বালু নদী দূষণ মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

আজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে রূপগঞ্জ উপজেলা নদী রক্ষা কমিটি, উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটি এবং উপজেলা পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা সংরক্ষণ কমিটির বিশেষ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ছবি: সুমন আলী/স্টার

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, 'গত ৩১ মে কারা নদী দূষণ করছে এমন একটি তালিকা পাঠিয়ে আমরা উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আমরা উপজেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখতে পাইনি। তাদের অসহযোগিতার জন্য বালু নদী দূষণমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়ার পর ২ মাস ১২ দিন নষ্ট হয়েছে। এখন পর্যন্ত একটি পয়েন্টেও নদী দুষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'

পূর্বাচল পেপার মিলের পানি বালু নদীতে পড়ছে। এতে নদী দূষিত হচ্ছে বলে মনে করছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। ছবি : সুমন আলী/স্টার

নদীর ধারে অসংখ্য খোলা টয়লেট আছে এবং সেগুলোর বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়েছে উল্লেখ করে, রূপগঞ্জে কত শতাংশ যথাযথ স্যানিটেশন আওতায় আনা হয়েছে তা উপজেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চান কমিশনের চেয়ারম্যান।

তবে এর প্রতিক্রিয়ায় উপজেলা নির্বাহী শাহ নুসরাত জাহান এ বিষয়ে কোনো হিসাব দিতে পারেননি।

ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'নৌ-পুলিশ ও শিল্প পুলিশকে নদী রক্ষা কমিশনের কাজে সম্পৃক্ত করা হবে। যারা দূষণের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে এখন থেকে গ্রেপ্তার করা হবে।'

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, 'দুষণ রোধে নদী কমিশনে চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা সভা করেছি, চিঠি দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি।'

আলোচনা সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক ড. খ. ম কবিরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের চিঠি পাওয়ার পরেও উপজেলা প্রশাসন কোনো গুরুত্ব দেয়নি এবং বালু নদী দুষণ রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।'

এর আগে দুপুর ৩টার দিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় মন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে সভা করেন নদী কমিশনের চেয়ারম্যান।

ছবি : সুমন আলী/স্টার

এসময় গোলাম দস্তগীর গাজী নদী কমিশনের চেয়ারম্যানকে বলেন, 'যারা নদী দূষণ করে তাদেরকে ধরেন। এতে আমার কারখানা থাকলে আমাকেও ধরেন। নদী আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই দূষণকারীদের কাউকেই ছাড় দেবো না।'

আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বালু নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। সেসময় তার সঙ্গে ছিলেন নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক ড. খ. ম কবিরুল ইসলাম,  উপপরিচালক আখতারুজ্জামান তালুকদার, চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মু. বিল্লাল হোসেন খান, সহকারী প্রধান মো. তৌহিদুল আজিজ, সহকারী প্রধান সাকিব মাহমুদসহ আরও অনেকে।

এসময় তারা বালু নদীর তীরে গড়ে ওঠা বালু, সিমেন্ট ও পাথর মিশ্রণ করা প্রতিষ্ঠান এনডিই, ইস্টার্ন স্ট্রু পেপার মিল, পূর্বাচল পেপার মিলসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দূষণের প্রমাণ পান।

নদী কমিশনের কর্মকর্তাদের দেখে গেটে তালা দিয়ে পালিয়ে যান ইস্টার্ন স্ট্রু পেপার মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক করে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, 'দ্রুত সময়ের মধ্যে ইটিপির যথাযথ ব্যবহার এবং দূষণ বন্ধ না করলে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।'

আগামী ২০২৩ সালের ১৭ মার্চের মধ্যে ঢাকার আশেপাশের ৪টি নদীকে দূষণ মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। নদীগুলো হলো বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ।

Comments

The Daily Star  | English

One killed in multi-vehicle crash on Dhaka-Mawa highway

The chain of crashes began when a lorry struck a private car from behind on the Mawa-bound lane

29m ago