‘জ্বালানির দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই, পুরোটাই আমলাদের নিয়ন্ত্রণে’

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। স্টার ফাইল ছবি

জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা কমানোর কোনো প্রভাব বাজারে কোথাও পড়বে না বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় কোনো স্বচ্ছতা নেই, পুরোটাই আমলাদের নিয়ন্ত্রণে।'

'জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে যে সিদ্ধান্তগুলো এসেছে, এতে আবার প্রমাণিত হলো যে- সরকার এসব সিদ্ধান্ত 'এডহক বেসিসে' নেয়। একটা সিদ্ধান্তের যেসব ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল থাকতে পারে, সেগুলো পুরোপুরি বিশ্লেষণ করে না', যোগ করেন তিনি।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'একটা প্রশ্ন যদি করি, সরকার জ্বালানি তেলের লিটারে ৫ টাকা দাম কমিয়েছে, এর উত্তর কেউ দিতে পারবে না। তারা কেন তেলের দাম ৪ টাকা বা ৬ টাকা কমায়নি? প্রতি লিটারে ট্যাক্স কমেছে ২ টাকা, তাহলে বাকি ৩ টাকা কোত্থেকে এলো? এর উত্তর তারা দিতে পারবে না। কারণ তার (সরকার) কাছে কোনো দাম নির্ধারণের ফর্মুলা নেই।'

দাম নির্ধারণের বিষয়টি পুরোটাই আমলা-নির্ভর উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, 'ফর্মুলা থাকলে আমলাদের নিয়ন্ত্রণটা থাকে না। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর বাজারে প্রভাব তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পড়ে না। দাম যখন বেড়েছে, তখন আমলাদের বাসমালিক, লঞ্চমালিকদের সঙ্গে বসতে হয়েছে। দীর্ঘ বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কোন ভাড়া কত বাড়বে। তারপর পরিবহন ভাড়ার ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য মার্কেটে তার প্রভাব পড়লো। এখন ৫ টাকার জন্য কি আমলারা আবার সেই কাজগুলো করবেন?'

'আমার তো মনে হয়- সরকার আমলাদের কাছে জিম্মির মতো হয়ে গেছে', বলেন তিনি।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতা থাকলে আমলাতান্ত্রিক ঝামেলার নিরসন হয়। পরিবহন মালিকদের আধিপত্য থাকে না। গত বছর তো তারা ধর্মঘটও করেছে। ২ দিন ট্রাকই চললো না। অর্থনীতিতে এগুলোর যে প্রভাব বা ক্ষতি, সেগুলোর হিসাব তো কেউ করে না।'

এসব বিষয়কে 'আনসিন কস্ট' উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বক্তব্যের সঙ্গে তাদের আর্থিক প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই। গত নভেম্বরে ডিজেলে ১৫ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন তো লস ছিল না, বরং ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি লাভ ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'একটা ফর্মুলা এখন খুব প্রয়োজন, যেখানে তার তেল কেনার খরচ কত, জাহাজ ভাড়া কত, ইনস্যুরেন্স কত, ভ্যাট-ট্যাক্স কত আর বিপিসির ন্যূনতম লাভের অংক নির্ধারিত থাকবে। এতে জনগণ দাম উঠা-নামার বিষয়টি বুঝতে পারবে। ব্যবসায়ীরাও আগে থেকে সতর্ক থাকতে পারবে। এ ধরনের একটি কাঠামো থাকলে দাম নির্ধারণ স্বচ্ছ হয়, বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে, এমনকি রাজনীতিকীকরণও হয় না।'

Comments

The Daily Star  | English
Exporters to get Tk 108.5 for a dollar from Aug 1

Taka gains against dollar after several years

Taka gains ground as dollar influx rises, strengthening currency after years

1h ago