বিবিয়ানায় অতি নির্ভরতা: হুমকিতে জ্বালানি নিরাপত্তা
আরও ১৯টি গ্যাসক্ষেত্র উৎপাদনে থাকলেও দেশে গ্যাস সরবরাহে অতিমাত্রায় নির্ভর করতে হচ্ছে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের ওপর। এই অতিনির্ভরতা আগামী দিনে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
একইসঙ্গে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতার চেয়েও বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে বেশি উৎপাদন করা হচ্ছে, যা গ্যাসক্ষেত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিবিয়ানার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস। গতকাল এটি ১ হাজার ২২৭ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন করেছে, যা দেশের মোট গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৫৩ শতাংশ।
বাকি ১৯টি গ্যাসক্ষেত্র মোট ১ হাজার ১১৭ এমএমসিএফডি উৎপাদন করেছে, যা স্থানীয় সরবরাহের ৪৭ শতাংশ, ৫ বছর আগের গড় উৎপাদনের তুলনায় কম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্যাসক্ষেত্রের স্বাভাবিক নিয়মেই বিবিয়ানার উৎপাদন সক্ষমতা ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে কমতে শুরু করবে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। নতুন কোনো পরিকল্পনা না থাকলে দেশ আরও কঠিন সমস্যায় পড়তে পারে।'
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আজ মঙ্গলবার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস পালন করছে। দিবসটির প্রতিপাদ্য 'বহুমুখী জ্বালানি, সমৃদ্ধ আগামী'।
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমি আশা করি এই দিনটি জ্বালানির অপচয় রোধ এবং সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।'
১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুজাতিক তেল উত্তোলন কোম্পানি শেল অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র কিনে দেশের মালিকানায় নেন। সেই দিনটি স্মরণ করতে সরকার ২০১০ সাল থেকে দিবসটি পালন করে আসছে।
বাখরাবাদ, তিতাস, রশিদপুর, কৈলাশটিলা ও হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র কেনার জন্য প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন পাউন্ড (তখন প্রায় ১৭-১৮ কোটি টাকা) পরিশোধ করা হয়েছিল।
এই ৫টি গ্যাসক্ষেত্র এখনো অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ।
বদরূল ইমামের মতে, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে গ্যাসের মজুত রয়েছে, যা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। কর্তৃপক্ষ গত ২০ বছরে মাত্র ২৮টি অনুসন্ধানী কূপ খনন করেছে। এটি উচ্চ হাইড্রোকার্বন সম্ভাবনাযুক্ত একটি দেশের জন্য একটি সামান্য সংখ্যা।'
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট খরচ ধরে দেশে ৯ থেকে ১০ বছরের গ্যাসের মজুত রয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রে ২৯ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ১৯ দশমিক ৫৩ টিসিএফ ইতোমধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে।
বদরূল ইমামের মতে, উৎপাদনের চূড়ায় পৌঁছানোর পর গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কমতে শুরু করে। এ কারণে দেশের বেশিরভাগ গ্যাসক্ষেত্রই এখন আগের চেয়ে কম গ্যাস উৎপাদন করছে।
সব গ্যাসক্ষেত্রগুলো এখন গড়ে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। ২০১৬ সালে এই উৎপাদনের গড় ছিল ২ হাজার ৬৬৬ এমএমসিএফডি।
নতুন মজুতের জন্য জরুরি অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্যাস নিষ্কাশন কমে যাওয়া দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান, সরকার মনে করে গ্যাস সংকটের ভয়াবহতার কারণে বিবিয়ানায় উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে বেশি উৎপাদন করা ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প নেই।
Comments