ফুলগাজী-পরশুরামের সীমান্ত এলাকার বন্যার্তদের উদ্ধার করবে কে
ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঞাসহ প্রায় সব উপজেলার সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
এছাড়া মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ায় দুর্গত এলাকার সবশেষ অবস্থাও জানা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় টেলিটকের নেটওয়ার্কে।
ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের ইসমাইল চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, উত্তর শ্রীপুর গ্রামের চৌধুরীবাড়ী এলাকার অনেক বাড়িতে কোমর সমান পানি। পাশের কিছু এলাকার বাড়িঘর একতলা ডুবে গেছে।
বাসিন্দারা টিনের চালের উপরে কিংবা আশপাশের পাকা ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। কোনো এলাকায় আবার একতলা ডুবে যাওয়ায় দোতলা বা তার উপরে আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
ফুলগাজীর সীমান্ত এলাকার পৈথারা, কামাল্লা, গাবতালা, মনতলা, ফকিরের খিল, বদরপুর গ্রামগুলোতে কাঁচা সব বাড়িঘর ডুবে গেছে। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ।
দিনে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল ওই এলাকা থেকে অনেককে উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে।
ইদ্রিস চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা ফেনীতে থাকেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলোনিয়া ও সংলগ্ন এলাকায়।
উপজেলার বিলোনিয়া, কালিকাপুর, পরিখিল, ফকিরের খিল, বাউরখুমা, বাউর পাথর, নিজ কালিকাপুর, মির্জানগর, জয়ন্তী নগর, কাউতলি সীমান্তবর্তী এই দুর্গম এলাকাগুলো পুরোপুরি তলিয়ে গেছে।
ফুলগাজীর নোয়াপুর, দক্ষিণ তারা মিয়া, বালুয়া, চানপুর, পশ্চিম বসিকপুর, আনন্দপুর, বাসুরা, কালিকাপুর, বদরপুরে এখনো পানি ৭-৮ ফুট উচ্চতায় রয়ে গেছে।
তবে, ফুলগাজী ও পরশুরামের এসব এলাকার বাইরে জগৎপুর, বসন্তপুর, বরইয়া, গণিপুর, তারাকুন্ডা, আমজাদহাট ও পূর্ব বসন্তপুরে পানি কিছুটা কম।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি আর বাড়ছে না। তবে পানি নেমেও যাচ্ছে না।
উদ্ধারকারীরা ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা সদরের কাছাকাছি এলাকার কিছু দুর্গতদের উদ্ধার করতে পারলেও, সীমান্তবর্তী এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
এদিকে, দাগনভূঞা উপজেলা সদরের কাছাকাছি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ব্যাহত না হলেও, পাশের গ্রামগুলোর সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
গ্রাম এলাকার বাড়িঘরগুলো তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই উপজেলা সদরের ভবনগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
দাগনভুঁয়া উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি এনজিওর কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গ্রামে তার একতলা ঘরটি ডুবে যাওয়ায় তিনি পরিবারসহ উপজেলা সদরে তাদের অফিস ভবনে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
তাদের এলাকার আরও অনেকেই আশেপাশের পাকা ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এরমধ্যে মুহুরী নদীর পানি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
Comments