বিপৎসীমার ৫ ফুট উপরে পশুর নদ, স্ফীত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত সুন্দরবন

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের কারণে বাগেরহাট জেলার মোংলায় পশুর নদের পানি বিপৎসীমার ৫ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া স্ফীত জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের করমজলসহ বেশিরভাগ বনভূমি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। 

আজ রোববার বিকেলে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে সকাল থেকে থেমে বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় জেলার শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কে আছেন।

জোয়ারের পানিতে পশুর নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

মোংলায় পশুর নদের তীরবর্তী চিলা এলাকার বাসিন্দা একরাম সরদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসও বাড়ছে। পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছি।'

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাগেরহাটের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি রোববার দুপুর থেকে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেশি বেড়েছে পশুর নদে। মোংলায় এই নদে দুপুরে বিপৎসীমার ৫ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।'

এছাড়া, বলেশ্বর ও ভৈরব নদে বিপৎসীমার ২-৩ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, 'দুপুরের জোয়ারে বনের করমজল কেন্দ্রসহ বেশিরভাগ বনভূমি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এখনো কোনো বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।'

জানতে চাইলে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বন বিভাগের সব স্টেশনসহ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও বনরক্ষীরা নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন।'

রোববার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেলার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। 

শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল ৫-৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় বাগেরহাটে ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি নদী তীরবর্তী উপজেলাগুলোর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।'

এছাড়া ৩৫০৫ স্বেচ্ছাসেবক ও ৮৮টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে, খোলা হয়েছে ১০টি কন্ট্রোল রুম। 

জেলা প্রশাসক জানান, জেলায় মোট ৬৪৩ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিলের পাশাপাশি উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকাগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।  

Comments

The Daily Star  | English
How artistes flamed cultural defiance in July

How artistes flamed cultural defiance in July

From stage to street, artistes and activists led a cultural revolt against brutality and censorship

7h ago