দিনাজপুরে ৪৮ ঘণ্টায় ৩৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি, হঠাৎ বন্যায় পানিবন্দি হাজার পরিবার

আকস্মিক বন্যায় দিনাজপুর শহরের হঠাৎপাড়া এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

দুই দিনের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জেলা শহর, সদর উপজেলা এবং অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নদীর পানি বাড়ায় দিনাজপুর শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদীর উভয় পাড়ের এলাকাগুলো বেশি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে উঁচু জমিতে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হলে দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীসহ প্রায় সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে।

পাউবো কর্মকর্তারা জানান, আজ সোমবার বিকেলে পুনর্ভবা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আত্রাই ও টাঙ্গরসহ অন্যান্য নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হলেও গত কয়েক দিনের বর্ষণে তা বেড়েছে।

দিনাজপুর শহরের শান্তিনগর এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

দিনাজপুরের আবহাওয়া অফিস শনিবার সকাল থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় জেলায় প্রায় ৩৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। গতকাল রোববার ১৭৭ মিমি ও সোমবার ১৯১ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

জেলায় ২ দিনে চলতি বছর এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বলে জানান জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ। 

আজ সোমবার দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের হঠাৎপাড়া, গোলাপবাগ, লালবাগ, শান্তিনগর, মাজাডাঙ্গা, রামনগরের এলাকার একাংশ, দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আশপাশ এলাকা, সদর উপজেলার চকচক চৌকা এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 

বিরল উপজেলার মালঝাড় গ্রামও প্লাবিত হয়েছে পুনর্ভবা নদীর পানিতে। ফুলবাড়ী ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 

অন্যদিকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, বিশেষ করে ধানক্ষেত এবং কলাবাগানসহ অন্যান্য ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। 

বিরল উপজেলার চকচকা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, হঠাৎ বন্যার পানি ঢুকে তার প্রায় ২ একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, 'রোববার বিকেল থেকে নদীর পানি গ্রামে আসতে শুরু করে। মাঝরাতের মধ্যেই ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে যায়। আজও পানি বেড়েই যাচ্ছে।'

ওই গ্রামের প্রায় ২৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

দিনাজপুর শহরের গোলাপবাগ এলাকার বাসিন্দা মননুর রশিদের বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই এলাকার বেশিরভাগ পরিবার দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পানিতে আটকা পড়ায় অনেকেরই কোনো কাজ জোটেনি। গত ৩ দিন ধরে কোনো কাজ না থাকায় আমরা অনাহারে আছি।'

হঠাৎপাড়া গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। বুক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা পরিবারের সদস্য ও গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত গরু ছাগল ও মুরগি নিয়ে এলাকার উঁচু জমিতে আশ্রয় নিয়েছে।

সোমবার দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ হঠাৎপাড়া গ্রামসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৫০০ ব্যাগ ত্রাণ বিতরণ করেন।

দিনাজপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রকিবুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুনর্ভবার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার পর এখনো পানি বাড়ছে। আর বৃষ্টি না হলে মঙ্গলবার বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করবে।'

Comments

The Daily Star  | English
US airstrike on Iran

Strikes on Iran mark Trump's biggest, and riskiest, foreign policy gamble

The dramatic US strike, including the targeting of Iran’s most heavily fortified nuclear installation deep underground, marks the biggest foreign policy gamble of Trump’s two presidencies and one fraught with risks and unknowns.

1h ago