তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ পোশাক কোম্পানি উচ্চ মুনাফা করেছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ তৈরি পোশাক কোম্পানি চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে উচ্চ মুনাফা করেছে। দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে বৈশ্বিক চাহিদা থাকায় কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করতে পেরেছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তবে, যেসব কোম্পানি রপ্তানির পরিমাণ ও মূলধনের দিক দিয়ে তুলনামূলক বড়, তারা ভালো পারফরম্যান্স করলেও তবে ছোট কোম্পানিগুলোকে লড়াই অব্যাহত রাখতে হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, এ খাতের তালিকাভুক্ত ৪০টি কোম্পানির মধ্যে ২৫টি উচ্চ মুনাফা করতে পারলেও ১৫টি প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা করতে পারেনি। তবে বহু বছর ধরে জেড ক্যাটাগরিতে থাকা ১৫টি কোম্পানি এখনো কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ৪০টি কোম্পানির মোট মুনাফা ক্রমবর্ধমান প্রবণতার ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে।
সন্ধানী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সংকলিত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে তাদের মোট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেড়ে ১৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, ২০২৩ সাল থেকে বেতন বৃদ্ধি ও জ্বালানির দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার পর থেকে তৈরি পোশাক খাত সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সে বছর সিদ্ধান্ত হয়েছিল তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি নয় শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, আগে যা ছিল পাঁচ শতাংশ। একই সঙ্গে এন্ট্রি লেভেলের একজন পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তবে অনেক কোম্পানি, বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এই ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে পারেনি। গত বছর রাজনৈতিক ও শিল্প অস্থিরতা এবং বন্যার কারণে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তাদের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।
তার ভাষ্য, 'সর্বোপরি, কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়নি, তাই বেশিরভাগই 'গভীর সমস্যায়' পড়েছে। কেবল বড় কোম্পানিগুলো এই ধাক্কা সামলাতে পেরেছে, তারা রপ্তানি আদেশ ধরে রেখেছে এবং সঠিকভাবে পণ্য সরবরাহ করতে পেরেছে।'
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ১৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের মুনাফা বেড়েছে ১৬১ শতাংশ, স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেডের ৫৮ শতাংশ এবং মালেক স্পিনিং মিলস লিমিটেডের মুনাফা বেড়েছে ২২ শতাংশ।
শামস মাহমুদ বলেন, বড় কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক সক্ষমতা ব্যবহার করে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। কারণ বড় কোম্পানিগুলোর কাছে সাধারণত নগদ অর্থ থাকে এবং তারা প্রয়োজনে সহযোগী কোম্পানি থেকে অর্থ ধার নিতে পারে। তাদের ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কম।
স্পিনাররা ধুঁকছেন
এ খাতের কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্পিনিং মিলগুলো সবচেয়ে বেশি হিমশিম খাচ্ছে।
শামস মাহমুদ জানান, গ্যাস সরবরাহ সংকটে বিপাকে পড়েছে স্পিনিং মিলগুলো। তারা ভালো করতে না পারায় চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে সুতা আমদানি করতে হয়েছে।
বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে ২০২৪ সালে মুনাফা ওঠানামা করেছে। এটি মূলত বৈশ্বিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ, মূল্যস্ফীতির চাপ এবং চাহিদার পরিবর্তনের ধরনের কারণে হয়েছে। কিছু কোম্পানি স্থিতিশীলতা দেখাতে পারলেও বাকিরা মুনাফা ধরে রাখতে লড়াই করেছে।
Comments