‘আগে কিনতেন ৫ কেজি, এখন ১ কেজি’

মূল্যস্ফীতি
আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে হিমশিম খাচ্ছেন দেশের মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

একসময় মুদি দোকানের যেসব পণ্য দ্রুতই বিক্রি হয়ে যেত এখন সেগুলো তাক থেকে যেন নামছেই না। খাদ্য পণ্যের বড় বড় প্যাকেটের পরিবর্তে খাদ্যপণ্য ও টয়লেট্রিজের ছোট ছোট প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। এমন একটি মুদি দোকানের দিকে তাকিয়ে সহজেই বুঝে নেওয়া যায় মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ সংসারের অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে।

ঢাকার উত্তরা এলাকার এক মুদি দোকানদার আবুল বাশারের কথাই ধরা যাক। তার দোকানের আশেপাশে অন্তত পাঁচ ডজন আবাসিক ভবন আছে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, টুথপেস্ট বা শ্যাম্পুর বড় প্যাকেটের ক্রেতা কম। বেশিরভাগ মানুষ আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মসুর ডালের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন। তাও অল্প পরিমাণে।

তিনি বলেন, 'আগে যিনি একটি পণ্য তিন থেকে পাঁচ কেজি কিনতেন, এখন তিনি এক বা সর্বোচ্চ দুই কেজি নিচ্ছেন। এর বেশি পারছেন না।'

তিনি ক্রেতাদের এমন পরিস্থিতির জন্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ও আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারাকে দায়ী করেছেন।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাম্প্রতিক মাসগুলোয় প্রতি মাসে পণ্য বিক্রি পাঁচ শতাংশ কমেছে।'

পণ্যের বাড়তি দাম কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দিলেও গত বছরের মার্চ থেকে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) ১০ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বরে সিপিআই ছিল নয় দশমিক ৯২ শতাংশ। আগস্টে তা ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

'দীর্ঘ দিন ধরে মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিয়েছে,' উল্লেখ করে জাভেদ আখতার আরও বলেন, 'শ্যাম্পুর মতো অল্প প্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রিতে এর প্রভাব স্পষ্ট। তবে, সাবান বা ডিটারজেন্টের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে।'

তার মতে, ইউনিলিভারের প্রায় ১০ শতাংশ পণ্য প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির থাকে। কিন্তু, মানুষ এখন প্রিমিয়াম মানের পণ্য না কিনে তুলনামূলক কম দামের পণ্য কিনছেন। যেমন, প্রিমিয়াম মানের সার্ফ এক্সেল ও রিন ওয়াশিং পাউডারের পরিবর্তে মানুষ হুইল পাউডার কিনছেন। অথবা তুলনামূলকভাবে অন্য ব্র্যান্ডের কম দামের পণ্য কিনছেন।

তিনি বলেন, 'মাসে সাধারণত চার হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হতো। গত জুলাই থেকে তা পাঁচ শতাংশ কমেছে। ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বড় প্যাকেটের পরিবর্তে মানুষ ছোট প্যাকেট কিনছেন।'

প্রতি বছর অক্টোবর থেকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত শীতের জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি, বডি লোশন ও স্কিনকেয়ারের উত্পাদন বাড়িয়ে দেন।

তবে এবারের শীত মৌসুমটাকে আলাদা মনে করছেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার হিসাবে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান এখন খুব বেশি আয় করছে না।

তিনি বলেন, 'এমন পরিস্থিতি কতদিন চলবে বলা কঠিন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি আরও এক বছর চলতে পারে।'

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মালিক মোহাম্মদ সাঈদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুনাফা কমিয়ে হলেও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু পণ্যের উৎপাদন খরচ ১৫ শতাংশ বাড়লেও দাম বাড়াইনি।'

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পণ্যের দাম বাড়েনি, তবুও পণ্য বিক্রি কমেছে।'

ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেন তিনি।

তার মতে, মানুষ এখন অল্প পরিমাণে পণ্য কিনছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) হেড অব অ্যাকাউন্টস এস এম মুজিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুলাই থেকে পণ্যের বিক্রি কমে গেছে।'

'নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কম আয় ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা চাপে পড়েছেন' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এ জন্য নিত্যপণ্যের ডিসকাউন্ট দিতে বাধ্য হচ্ছি।'

সামগ্রিকভাবে পণ্য বিক্রি প্রায় পাঁচ শতাংশ কমলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্য ভেদে ১২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে জানান তিনি।

মেঘনা ১৫ বিভাগে ১৭ পণ্য বাজারে আনে।

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

3h ago