২০২৫

সারাবিশ্বে কমতে পারে নিত্যপণ্যের দাম, বাংলাদেশ সুফল পাবে?

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আগামী ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী নিত্যপণ্যের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে টাকার দাম ক্রমাগত কমতে থাকলে বাংলাদেশ এর সুফল নাও পেতে পারে।

ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, চিনি ও মসলার মতো নিত্যপণ্যের আমদানির ওপর বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

ব্যবসায়ীরা সতর্ক করে বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ আরও বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।

চার মাস কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও এ মাসে ডলারের দাম বেড়েছে। এতে আমদানি খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে আমদানিকারকরা ডলারপ্রতি ১২৭ বা ১২৮ টাকায় এলসি খোলায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা উভয়েই চাপে আছেন।

বিশ্বব্যাংকের অক্টোবরের কমোডিটি মার্কেট আউটলুকে ২০২৫ সালে বৈশ্বিক পণ্যমূল্য পাঁচ শতাংশ ও ২০২৬ সালে আরও দুই শতাংশ কমার পূর্বাভাস দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের সামগ্রিক পণ্যমূল্য সূচক ২০২০ সালের পর সর্বনিম্নে পৌঁছাবে।

জ্বালানির দাম কমতে পারে বলেও আশা করা হচ্ছে। এমনটাই জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। জ্বালানির মূল্য সূচক চলতি বছর ছয় শতাংশ ও আগামী বছর আরও ছয় শতাংশ কমবে। ২০২৬ সালে তা কমবে আরও দুই শতাংশ।

২০২৪ সালে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি গড়ে ৮০ ডলার হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালে তা ৭৩ ডলার ও ২০২৬ সালে ৭২ ডলারে নেমে আসবে।

তবে ধাতব ও কৃষিপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান দামও কমতে পারে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, তেলের বার্ষিক গড় দাম টানা চার বছর কমতে পারে। ২০২১ সালের দামের তুলনায় কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে।

দেশে অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক ও পণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২৫ সাল দেশের ক্রেতাদের জন্য স্বস্তি আনতে পারে।'

তবে টাকার দাম ক্রমাগত কমতে থাকলে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমার সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি ডলারের দাম ১২২ টাকা থেকে বেড়ে ১২৮-১২৯ টাকা হয়েছে।'

বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম কমেছে। ভারত ও থাইল্যান্ডে উৎপাদন বাড়লে চিনির দাম আরও কমতে পারে।

গমের সরবরাহও স্থিতিশীল। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি এর দামও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের মার্চ থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলতি বছর নীতিসুদের হার পাঁচবার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত মে মাসে চালু হওয়া ক্রলিং পেগ বিনিময় হার ব্যাংকগুলোকে ১১৭ টাকার মধ্যে ডলার বিক্রির অনুমতি দেয়।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান মনে করেন, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের কিছু সুবিধা বাংলাদেশের ক্রেতারা পেতে পারেন।

তিনি বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্ব বাজারে গত ১৫ দিন বা এক মাস ধরে কোনো কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে।'

'নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার কর ও শুল্ক সংক্রান্ত কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিছু পণ্যের শুল্ক বাধা দূর করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, ডলারের দিক থেকেও স্বস্তির জায়গা হচ্ছে। নভেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়ে ২২০ কোটি ডলার হয়েছে।

Comments