চলমান অস্থিরতায় রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা

রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা
দেশের রপ্তানি আগের এক বছরে কমেছে ছয় দশমিক আট শতাংশ। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি তথ্য সংশোধনের পর চলমান অস্থিরতা ও কারফিউয়ের কারণে দেশের রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় সব বড় খাতের রপ্তানি কমেছে।

রিজার্ভ কমা ঠেকাতে ডলারের ভীষণ প্রয়োজন। গত ৩১ জুলাইয়ে রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের প্রতিবাদে গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে কমপক্ষে ২০৪ জন নিহত ও সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ২০ জুলাই কারফিউ দেয় সরকার। শিথিল কারফিউয়ের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অফিস চললেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিবেদনে রপ্তানি তথ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রকৃত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। আগের হিসাবের তুলনায় তা প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার কম। রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় দশমিক আট শতাংশ কমেছে।

দেশের মোট রপ্তানি আয়ের এক-তৃতীয়াংশের বেশি নিটওয়্যারের রপ্তানি কমেছে ছয় দশমিক ৯৩ শতাংশ।

একইভাবে ওভেন পণ্যের রপ্তানি কমেছে ছয় দশমিক ৩৪ শতাংশ।

কৃষিপণ্য, প্লাস্টিক ও রাসায়নিক ছাড়া সব খাতের চিত্র একই ছিল।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলমান অস্থিরতায় রপ্তানিকারকরা পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বিদেশি ক্রেতারা অনিশ্চয়তা ও উদ্বিগ্নের মধ্যে আছেন।'

তিনি জানান, পণ্য সরবরাহ ও জাহাজীকরণের সময়সীমা মেনে চলতে না পারায় রপ্তানিকারকদের পণ্যের দামে ছাড় ও বন্দর বন্ধ থাকায় পোশাক খাতে সরাসরি ৮০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়াও, অস্থিরতার কারণে গত ১২ দিনে অন্তত ৩০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।

বিকেএমইএ নেতার আশঙ্কা, ওই কার্যাদেশ বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোকে দেওয়া হয়েছে।

সৌভাগ্যবশত আগের কার্যাদেশগুলো বাতিল হয়নি। বিদেশি ক্রেতারা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করছেন, বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনো বিদেশি ক্রেতাদের মনোভাব পরিষ্কার নয়। তাই আগেভাগে কিছু বলার সুযোগ নেই।'

'দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি ক্রেতারা কী ভাবছেন তা বোঝা মুশকিল,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রেটিং বিবি মাইনাস থেকে বি প্লাসে নামিয়ে আনায় এর প্রভাব রপ্তানির উপরও পড়বে।'

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী আরও বলেন, 'সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদেশি ক্রেতারা অসন্তোষ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি পছন্দ না করায় দিন শেষে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে।'

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার কারণে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক কেনার ক্ষেত্রে বিকল্প দেশের কথা ভাবছে। বিশেষ করে তারা ভারতে সুযোগ খুঁজছে। এটি দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য ভালো বার্তা নয়।'

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাম্প্রতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনীতি ও রপ্তানিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের কিছু বিদেশি ক্রেতা নির্ধারিত কারখানা পরিদর্শন বাতিল করেছেন।'

'অর্থনীতি ও সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

'ব্যবসা-বাণিজ্যের ভারসাম্য কোনো কারণে ভেঙে পড়লে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে' উল্লেখ করে তিনি আশা করেন, গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও কৃষিপণ্য রপ্তানি ইতিবাচক থাকবে।

তার দাবি, তাদের কৃষিপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো করছে। জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

আহসান খান চৌধুরীর ভাষ্য, 'যদি পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পাই তাহলে ব্যবসা অবশ্যই বাড়বে। অতীতের ঘটনায় আটকে থাকার দরকার নেই। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে।'

'আমরা প্লাস্টিক পণ্য নিয়ে কাজ করেছি। এসব পণ্য নিয়ে বিশ্ববাজার জয়ের সুযোগ আছে। রপ্তানি বাড়ানোর ভালো সম্ভাবনা আছে,' যোগ করেন তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাসে কয়েক দিন রপ্তানি বন্ধ ছিল। বছরে ৩৬৫ দিনের রপ্তানি যদি ধরা হয় ৫০ বিলিয়ন ডলার হয়, তাহলে ১০ দিনে ক্ষতি প্রায় দুই দশমিক সাত শতাংশ বা এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।'

'বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা কমছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ঝুঁকি অনেক বাড়তে পারে। ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়লে পণ্যের দামও বাড়বে।'

'আশা করছি, দেরিতে হলেও কিছু রপ্তানি চালিয়ে যেতে পারবো। বছরের শেষের দিকে কঠোর পরিশ্রম করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago