জাহাজীকরণে কম গুরুত্ব পাচ্ছেন পোশাক-বহির্ভূত পণ্যের রপ্তানিকারকরা

পোশাক-বহির্ভূত পণ্য
বন্ধ থাকার চট্টগ্রাম বন্দর পুরোদমে চালু হলেও পোশাক বহির্ভূত পণ্যের রপ্তানিকারকদের অভিযোগ তাদের পণ্য জাহাজীকরণে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার ফাইল ফটো

তৈরি পোশাক খাতের দুরবস্থা সবার নজরে পড়লেও গত এক সপ্তাহের সংঘাত ও চলমান কারফিউয়ের কারণে জাহাজীকরণ বাতিলসহ পোশাক-বহির্ভূত পণ্য রপ্তানিতে নজিরবিহীন সংকট দেখা দিয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, দেশব্যাপী কারফিউ ও পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামসহ প্রায় সব জায়গায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে।

দেশের প্রধান বন্দর পুরোদমে চালু হলেও পোশাক বহির্ভূত পণ্যের রপ্তানিকারকদের অভিযোগ—দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ অবদান রাখা ও রপ্তানি বহুমুখীকরণে বড় ভূমিকা রাখলেও জাহাজীকরণে তারা কম গুরুত্ব পাচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে তাদের পণ্যের জাহাজীকরণে দেরি হবে। এটি যে শুধু দেশের ইমেজ সংকট তৈরি করবে তা নয়। এই দেরি রপ্তানিকারকদের কম দামে পণ্য বিক্রিতে বাধ্য করতে পারে।

'গত ১৮ জুলাই থেকে সব ধরনের রপ্তানি বন্ধ আছে,' উল্লেখ করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (আন্তর্জাতিক বিপণন) ওয়াসিম হায়দার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে-বিদেশে সরবরাহ ব্যবস্থা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যবসা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।'

প্রায় ১৪৫ দেশে ৯০০ ধরনের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে কিছু রপ্তানি চালান বাতিল করতে হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বন্দর অকার্যকর হয়ে পড়েছে।'

'একই সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। অর্থনীতি এমন আকস্মিক ধাক্কা খাবে তা কেউ প্রত্যাশা করেনি।'

তিনি জানান, তারা ক্রেতাদের সঙ্গে ইমেল যোগাযোগে অভ্যস্ত। চিঠি চালাচালির সুযোগ তেমন ছিল না। ফলে নিয়মিত রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

তার মতে, এমন পরিস্থিতিতে তাদের পরিকল্পিত বার্ষিক রপ্তানির কমপক্ষে ৩০ শতাংশ প্রভাবিত হবে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন পরিস্থিতি ওষুধ বিক্রিতে প্রভাব ফেলেছে। পণ্য সরবরাহে হাতে লেখা চালান দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।'

দেশে বিক্রির তুলনায় তাদের রপ্তানি অল্প হওয়ায় খুব বেশি সমস্যায় পড়েননি বলেও জানান তিনি।

তার মতে, প্রতিষ্ঠানটি তার বার্ষিক উৎপাদনের চার শতাংশ রপ্তানি করে।

কিন্তু, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই উল্টো।

'গত ১৮ জুলাই থেকে সব ধরনের রপ্তানি বন্ধ আছে,' উল্লেখ করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (আন্তর্জাতিক বিপণন) ওয়াসিম হায়দার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে-বিদেশে সরবরাহ ব্যবস্থা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যবসা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত ১০ দিনে চার পণ্য চালানের বুকিং বাতিল করতে হয়েছে। ফোনে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বিশেষ করে পণ্যের জাহাজীকরণ ও দামের বিবরণ পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে।'

চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পিকার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সপ্তাহব্যাপী এই বন্ধের কারণে উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'

জাহাজীকরণে দেরির হওয়ায় তারা পণ্যের দামে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিতে বাধ্য হবেন বলে আশঙ্কা করে তিনি জানান, কোনো চালান কয়েক সপ্তাহ দেরি হলে ক্রেতারা পণ্যের দামে ছাড় চান।

মো. সাইফুল ইসলামের মতে, নজিরবিহীন সংঘাতের কারণে ক্রেতারা উৎপাদকদের সক্ষমতা, অবকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। গত পাঁচ থেকে ছয় বছরে তা দেখা যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English

1,500 dead, nearly 20,000 injured in July uprising: Yunus

He announced plans to demand the extradition of deposed dictator Sheikh Hasina from India

52m ago