উচ্চ মূল্যস্ফীতি

খরচ কমিয়ে মানিয়ে চলছে মানুষ

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, রিজার্ভ,
স্টার ফাইল ফটো। ইলাস্ট্রেশন: বিপ্লব চক্রবর্তী

দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। তাই মানুষের ব্যয় ও ভোগের হারও কমেছে। ফলে গত দুই অর্থবছরে বাংলাদেশের ভোগ প্রবৃদ্ধি কম ছিল। মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে খরচ কমিয়ে কোনো রকমে মানিয়ে চলছেন দেশের মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য ও সেবার ব্যবহার বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

অবশ্য করোনা মহামারিতে ২০১৯-২০ অর্থবছর ভোগ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ওই সময় বাদ দিলে অন্তত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে এই প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে ছিল।

এদিকে রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। ফলে দেশের মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক কথা বলেছিলেন আরমান হোসেনের সঙ্গে। আরমান হোসেন রাজধানীর পল্লবীতে বসবাস করেন। আলাপকালে তিনি বলেন, 'সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তার পরিবার ৩০ শতাংশ খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছে।'

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৩০ বছর বয়সী আরমান হোসেন আরও বলেন, 'সবকিছুর খরচ বাড়লেও তার সঙ্গে মিলিয়ে আমার বেতন বাড়েনি।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই ভোগের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

তিনি আরও বলেন, 'গত দুই বছর ধরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমাগত কমছে। অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির গতিতে বাড়ছে না। বরং প্রকৃত মজুরি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।'

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা গত কয়েক বছরের গড় ৬ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক প্রায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

একই বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'ভোক্তা মূল্যবৃদ্ধির কারণে বহু মানুষ খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছেন।'

তার ভাষ্য, যেহেতু মজুরি এবং আয় প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাড়েনি, তাই মানুষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছেন।

'এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা শিক্ষা ও চিকিৎসার খরচ যোগাতে ভোগ, সঞ্চয় এবং অন্যান্য ব্যয় কমিয়েছেন। করোনা মহামারিতেও একই অবস্থা দেখা গিয়েছিল,' বলেন তিনি।

এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেসরকারি ভোগ ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আগের বছর ছিল ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকাল এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ সালে বেসরকারি খাতে ভোগ বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'কম খাওয়ার কারণে বাল্যবিবাহ ও শিশুমৃত্যুর হার বাড়তে পারে। এছাড়া কম খাওয়ার কারণে মানুষের পুষ্টি ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রোসারি চেইন স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ২০২১ বা ২০২২ সালে বাজার যেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে এখন আর সেভাবে বাড়ছে না

তিনি বলেন, '২০২২ সাল থেকে ভোগ প্রবৃদ্ধি কমেছে।'

তিনি মন্তব্য করেন, স্বপ্নের কাছে ১৫ লাখ গ্রাহকের তথ্য আছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে ভোক্তাদের আচরণে পরিবর্তন বোঝা দেখা যায়।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বিবিএসের তথ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

তিনি বলেন, 'প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো কেনাকাটার পরিমাণ কমিয়েছে। এতে আমাদের বিক্রি কমে গেছে। গত কয়েক বছর ধরে এই ধারা অব্যাহত আছে।'

তিনি আরও বলেন, দরিদ্র পরিবারগুলো পরিস্থিতি সামলাতে তাদের সঞ্চয় ভাঙছেন।

এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের ভোগ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে সামগ্রিক ভোগ কমেছে। চলতি অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩৯ শতাংশে, যা ২০২৩ অর্থবছরে ছিল ৭৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এছাড়া বেসরকারি ভোগ ৬৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ থেকে কমে জিডিপির ৬৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং সরকারের ভোগ ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

জানতে চাইলে প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, 'পরিমাণ বিবেচনায় নিলে ভোগ প্রবৃদ্ধি কম। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক ভোগ কমেছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা যদি আমাদের কোম্পানির কথা বলি, অতীতে প্রবৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে ছিল। তবে এখন তা সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Large-scale Chinese investment can be game changer for Bangladesh: Yunus

The daylong conference is jointly organised by Bangladesh Economic Zones Authority and Bangladesh Investment Development Authority

49m ago