বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তে কি রিজার্ভ বাড়বে

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ রাতারাতি কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।

সরকার ও আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সর্বশেষ উদ্যোগ নেওয়া হলেও আগামী বছরের জুনের আগে রিজার্ভ বাড়বে না।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) ১৪ বিলিয়ন থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকবে।

আগামী বছরের জুনে এনআইআর ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। অর্থাৎ ওই সময় বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।

বুধবার রাজধানীতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইএমএফ মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগগুলো থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে বাংলাদেশের কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন 'সাহসী উদ্যোগ' নিয়েছে। সুতরাং, আমি মনে করি এসব উদ্যোগ আরও নমনীয়তা তৈরি করবে, আরও সুযোগ তৈরি করবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এসব চ্যালেঞ্জ থেকে বেরিয়ে আসছে।'

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নীতিমালাটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন উদ্যোগের প্রত্যাশিত ফল পেতে ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগতে পারে।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার ১১৭ টাকা করেছে এবং একদিনে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে সাত টাকা। ফলে ডলারের বিপরীতে একদিনে টাকার সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নমনীয় বিনিময় হার পদ্ধতি ক্রলিং পেগ চালু করেছে।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করেছে এবং নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন ব্যবস্থায় অনুমোদিত ডিলাররা গ্রাহকের সঙ্গে ও নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মানুষ বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।

ক্রলিং পেগ পদ্ধতি রিজার্ভ পুনর্গঠনে সহায়তা করবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন পদ্ধতির সফলতা নির্ভর করবে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতটুকু দক্ষতার সঙ্গে ও সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারে তার ওপর।

তিনি বলেন, এ দেশে বিভিন্ন সময় নতুন নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়, কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় না।

তবে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের আর্থিক হিসাবে বিশাল ঘাটতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সময় লাগবে। কারণ রপ্তানিকারক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আগে দেখতে চাইবেন যে, নতুন পদ্ধতি কতটা দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়।

তিনি বলেন, নতুন ব্যবস্থায় বিনিময় হার স্থিতিশীল হলে আগামী ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে দেশে অর্থ আসা শুরু হবে। অর্থাৎ নতুন নীতিমালার ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে ব্যাংকের এই সাহসী উদ্যোগের কারণে বাজেট সহায়তা বাড়বে।

কর্মকর্তারা বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় এসব সংস্কার আইএমএফ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহায়তা করবে।

বুধবার আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তিতে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে

এর মধ্যে ৯৩২ মিলিয়ন ডলার এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ)/এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় এবং ২২০ মিলিয়ন ডলার রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাওয়া যাবে।

Comments