বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও উদ্যোগ প্রয়োজন: আইএমএফ

মূল্যস্ফীতি
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মুদ্রানীতি দেশটির চলমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। তবে এটি স্থিতিশীল করতে আরও উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

গতকাল বুধবার আইএমএফ'র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণ শ্রীনিবাসন টোকিওতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, 'তারা (বাংলাদেশ) মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি কঠোর করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে মূল্যস্ফীতি কমছে। তবে মূল্যস্ফীতি টেকসইভাবে কমাতে ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রায় দ্রুত নেমে আসা নিশ্চিত করতে আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।'

'রিজিওনাল ইকোনমিক আউটলুক আপডেট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক' শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে সাংবাদিকরা ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

আইএমএফ'র ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত ১৭ জানুয়ারি সর্বশেষ মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন নীতিতে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা আছে। এর মধ্যে পলিসি হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে আট শতাংশ করা ও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা। মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিরতা রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও 'ক্রলিং পেগ' নীতি গ্রহণ করেছে।

চলতি অর্থবছর শেষে দেশে মূল্যস্ফীতি সাড়ে সাত শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের সর্বশেষ মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে শ্রীনিবাসন বলেন, 'একের পর এক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশকেও করোনা মহামারি থেকে শুরু করে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ও পরবর্তী সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আইএমএফ'র ঋণ চেয়েছিল। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়ার শর্ত আছে। একটি হচ্ছে—অবশ্যই মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। অন্যটি হলো—দরিদ্র ও আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের রক্ষা করার সময় আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। প্রশাসনিক সংস্কারও এসব শর্তের মধ্যে আছে।'

সার আমদানি ও স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের বকেয়া পরিশোধের জন্য সরকার ব্যাংকগুলোকে যে বিশেষ বন্ড দিয়েছে সে সম্পর্কে এই আইএমএফ কর্মকর্তা বলেন, 'আপনাদের বিকল্প কী আছে তা দেখতে হবে। আইএমএফ'র ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজস্ব সংগ্রহ জোরদার রাখতে ও খরচ কমানোসহ অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করতে সরকার কাজ শুরু করছে।'

'সুতরাং, সেই প্রেক্ষাপটে আর্থিক সংহতি বড় ভারসাম্য আনতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আর কতটুকু সংহতি তারা আনতে পারবে? এটি এমন একটি বিষয় যার আরও সুনির্দিষ্ট উত্তরের জন্য আগামী মাসগুলোয় বাংলাদেশে কাজ করা আইএমএফ টিম মূল্যায়ন করবে।'

বাংলাদেশের আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি সঠিক পথে আছে কিনা জানতে চাইলে শ্রীনিবাসন বলেন, 'বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে, হ্যাঁ। দুই মাস আগে বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পর্যালোচনা হয়েছিল এবং ঋণের শর্তগুলো পূরণের ক্ষেত্রে তা সন্তোষজনক ছিল।'

'কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছিল। এর আংশিক কারণ নির্বাচনের আগে আর্থিক হিসাব নেতিবাচক ছিল। রপ্তানি বাড়ানো ও আমদানি কমার কারণে চলতি হিসাব যৌক্তিকভাবে ভালো করছিল।'

'নির্বাচন শেষ হয়েছে। অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। আশা করছি, আর্থিক হিসাব স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।'

এশিয়ার সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ভালো খবর হচ্ছে—আমরা এশিয়ার ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করেছি। বেশিরভাগই ইতিবাচক। আমাদের হিসাবে এশিয়ার গড় মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের তিন দশমিক আট শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে দুই দশমিক ছয় শতাংশে নেমে এসেছে। তবে, এখনো ঝুঁকি রয়ে গেছে। যেমন, আর্থিক পরিস্থিতি এখনো অস্থির।'

নীতিনির্ধারকদের কোন বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আর্থিক তদারকি জোরদার ও ঝুঁকি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি রাজস্ব একীকরণ মূল বিষয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

43m ago