উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসতে পারে সরকার

বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্ভবত ধীর গতিতে চলছে, কয়েকটি প্রধান সূচক চাপে আছে। তাই সরকার আগামী বছরের জুনে শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা এক শতাংশীয় পয়েন্ট কমাতে পারে। তার মানে কৃচ্ছ্রতা সাধনের সময় উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসতে পারে সরকার।

এ বছরের জুনে জাতীয় বাজেটে নির্ধারিত উচ্চা জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাজস্ব সমন্বয় কাউন্সিল। আগামীকাল কাউন্সিলের বৈঠকের কথা আছে।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকা সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু, দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে সংশোধিত হতে পারে এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশের বিপরীতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ০২ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা উচ্চাভিলাষী ও অবাস্তব।

তাদের এমন মন্তব্যের কারণ হলো- বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল সূচকগুলো চাপে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আমদানি কমেছে ২৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) সেটেলমেন্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ৪০ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। এই সূচকটি মূলত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। এছাড়া শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি কমেছে ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।

ঋণপত্র খোলার প্রবণতায় দেখা গেছে, জুলাই-অক্টোবরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২১ শতাংশ এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ১৬ শতাংশ।

এছাড়া, জুলাই-নভেম্বরে পণ্য শিপমেন্ট থেকে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে শুধু নভেম্বরেই কমেছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও ঋণের চাহিদা কমাতে ব্যবস্থা নেওয়ায় বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির মতো অন্যান্য খাতেও মন্থর প্রবৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। উল্লেখ্য দেশের রিজার্ভ গত দুই বছরে অর্ধেকের বেশি কমে গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'এই পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হতে পারে।'

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ এবং অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এবং আমদানি মূল্য স্থিতিশীল হলে ধীরে ধীরে কমতে পারে।

জাহিদ হোসেন বলেন, 'উচ্চ জিডিপি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।'

'এছাড়া রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় কমছে। কর-রাজস্ব আদায় আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কেবল কৃষি খাতই ভালো করছে।

'তারপরও শুধু কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে নিয়ে যেতে পারবে না,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে, তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তা যথেষ্ট নয়।

অধ্যাপক সেলিম রায়হানও তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

তিনি বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের মন্থর প্রবণতাও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

'অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। সরকার যদি মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায়, তাহলে আগামী ছয় মাস গড়ে তা ৪ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, কিন্তু তা সম্ভব নয়,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago