বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজার: এইচএসবিসি

ইউনিভার্সাল ব্যাংক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস গ্রুপ, এইচএসবিসি, পুঁজিবাজার, জিডিপি,

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করে বাংলাদেশের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ থাকা উচিত। কিন্তু খেলাপি ঋণ, অস্থিতিশীল পুঁজিবাজার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মুখে আছে বলে জানিয়েছে এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ।

লন্ডনভিত্তিক ইউনিভার্সাল ব্যাংক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস গ্রুপ এইচএসবিসি হোল্ডিংস পিএলসির গ্লোবাল রিসার্চ উইং 'দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান' শিরোনামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ছোট ও তুলনামূলকভাবে এখানে তারল্যের পরিমাণ কম।

এতে আরও বলা হয়, 'দুই দশক আগে ভারত বা এক দশক আগে ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল।'

গত ১ দশকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল। এটি এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের তুলনায় দ্রুত হয়েছে। দেশের সাম্প্রতিক মাথাপিছু জিডিপির অনুপাত ভারতের তুলনায় বেশি।

এইচএসবিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ প্রধান ভোক্তা বাজারে পরিণত হওয়ার পথে আছে।

শুধু তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে নয়, ভারতীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ও চীনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।

এ ছাড়া, দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান বাড়ছে। বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স আসার পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও ভালো হচ্ছে।

আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো— আগামী ৩ বছরে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের আয় প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে।

তবে, ঝুঁকিগুলোর মধ্যে আছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও পুঁজিবাজারে বিদ্যমান ফ্লোর প্রাইস মেকানিজম। এই মেকানিজম বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে কমিয়েছে।

অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

জলবায়ু পরিবর্তন দেশের উন্নয়নে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এইচএসবিসির পরামর্শ, যেহেতু জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি ২৫ বছরের কম বয়সী, তাই বাংলাদেশের উচিত শিক্ষায় বিনিয়োগ করা। এর মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা শুধু তৈরি পোশাকের দিকে মনোযোগী হয়ে অন্য ক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে না পড়ে।

পুঁজিবাজার

এর আগে এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে 'লুকানো রত্ন' হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।

তবে এইচএসবিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এর কারণে পুঁজিবাজার দুর্বল হয়ে পড়ছে। শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার প্রক্রিয়া ও তারল্যের স্বল্পতা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্য চরম ঝুঁকি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২০ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো ও ২০২১ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস মেকানিজম চালু করে।

ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নামতে পারে না। এটি শেয়ারের প্রকৃত দাম নির্ধারণে বাধা দেয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। ফলে, খুব স্বাভাবিকভাবেই ২০২১ সালের তুলনায় পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

এইচএসবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কিন্তু, বাজার মূলধন-জিডিপি অনুপাত মাত্র ১৯ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ছিল প্রায় ৪১ শতাংশ। আমরা মনে করি, এখনকার তুলনায় বাংলাদেশ আরও বেশি মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য।'

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ছোট, অপ্রচলিত ও এখানে বিনিয়োগ করা অত সহজ নয়। তবে ৫ বছর আগে ভিয়েতনামের পরিস্থিতিও এ রকমই ছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২ দেশের বাজারের আকার একই ছিল। তবে ভিয়েতনামের বাজার এখন আগের তুলনায় ৪ গুণ বেড়েছে।

একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, ভিয়েতনামের তুলনায় বৈশ্বিক ম্যাক্রো ও ইক্যুইটি থিমের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কম। বাজার বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেন না।

এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের মতে, ২০২০ সাল থেকে অল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। সম্মিলিতভাবে বিনিয়োগ হয়েছে ৯৬ মিলিয়ন ডলার।

ব্যাংকিং খাত

বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে আমানত ও ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের চ্যালেঞ্জ আছে।

এইচএসবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'তবে এসবের বাইরে আমরা আশা করি, বেশি পরিমাণ অবকাঠামো খরচ, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ ও কলকারখানায় উত্পাদনে প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হওয়ায় ব্যাংকগুলো ক্রমবর্ধমান ঋণ প্রবৃদ্ধি থেকে উপকৃত হবে।'

জনসংখ্যা

বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতার মতো ক্ষেত্রগুলোয় বিনিয়োগের মাধ্যমে 'জনসংখ্যার সুযোগ' কাজে লাগানো যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারী পছন্দের স্থান

ক্রমবর্ধমান রপ্তানি ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ, রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্য শৃঙ্খলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

এশিয়ায় সস্তা শ্রম ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ অনেক বিনিয়োগকারীর পছন্দের স্থান বলেও জানিয়েছে এইচএসবিসি।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

8h ago