ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে
৪ দিন আগে এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ছিল ১২০ টাকা। রাজধানীর ৩টি কাঁচাবাজার সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল সেই দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা।
নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ভোক্তারা ইতোমধ্যে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সুলভ প্রোটিনের উৎস হিসেবে প্রায় প্রতিটি পরিবারের দৈনিক খাদ্যতালিকায় ডিম জনপ্রিয়। এখন সেই ডিমও তাদের বাজেটের অপেক্ষাকৃত বড় একটি অংশ দখল করে নিচ্ছে।
গত ৯ আগস্ট থেকে ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে। যা ১৩ আগস্ট 'রেকর্ড' পর্যায়ে পৌঁছায়। প্রায় ১ দশক আগে বার্ড ফ্লু মহামারির সময় সর্বশেষ ডিমের দাম এত বেড়েছিল।
১৮ থেকে ২৪ আগস্টের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) দেশজুড়ে ডিম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালায়।
এরপর বাজারে ডিমের দাম কমতে শুরু করে।
তবে এই স্বস্তি ছিল ক্ষণস্থায়ী। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ডিমের দাম আবারও বাড়তে শুরু করে।
মিরপুরের বর্ধিত পল্লবী এলাকার খুচরা বিক্রেতা নুরুল আলম শিকদার জানান, গত ৪ দিন ধরে ডিমের দাম বাড়ছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
পাইকারি ও বড় আকারের ব্যবসা পরিচালনাকারী খামারিরা জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ঘাটতি থাকার কারণেই দাম বাড়ছে।
তারা জানান, অনেক খামারি মহামারির সময় লকডাউন থাকায় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সে সময় ডিমের বিক্রি সার্বিকভাবে কমে যাওয়ায় অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন, যার প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে।
এ ছাড়াও, মুরগির খাবারের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সয়াবিন মিল ও ভুট্টার দামও বেড়ে গেছে। গত কয়েক মাসে সয়াবিন মিল ও ভুট্টার দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি ও পরিবহনের খরচ বাড়ার সমস্যা। সব মিলিয়ে দেশের মানুষের প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিমের দাম বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেন।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ দাবি করেন, দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদিত হচ্ছে না।
তিনি আরও দাবি করেন, ডিমের চাহিদা ও উৎপাদনের কোনো সঠিক হিসাব নেই।
তবে, বাংলাদেশ ডিম উৎপাদক সমিতির মতে, দেশে দৈনিক সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। ডিমের একটি বড় অংশ আসে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা খামারগুলো থেকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানান যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ডিম উৎপাদন হয়েছে। আগের দশকের তুলনায় উৎপাদন প্রায় ৩ গুণ হয়েছে।
সরকার ৫ আগস্ট জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর অনেক ট্রাকচালক ২ থেকে ৩ দিন কোনো পণ্য পরিবহণ করেননি। একটি বড় খামারের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সে সময় ট্রাকচালক ও মালিকরা সরকারের সঙ্গে নতুন পরিবহন ভাড়া নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সে সময় ঢাকায় কোনো ডিমবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে না পারায় চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে একটি ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ মুহূর্তে খামারিরা ডিমের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন, যার প্রতিফলন ঘটেছে এ মাসের মূল্যবৃদ্ধিতে।
প্যারাগন পোল্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান দাবি করেন, বর্তমানে ১টি ডিমের উৎপাদন খরচ ৯ টাকা ৬০ পয়সা এবং এটি ভোক্তার কাছে ১১ টাকা ২৫ পয়সায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিএনসিআরপির প্রতিবেদন মতে, আগস্টের মাঝামাঝি সময় প্রধান ডিম ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশে ডিমের দাম 'নজিরবিহীন' পর্যায়ে নিয়ে যান।
প্রতিবেদন মতে, পাইকারি বিক্রেতারা সাধারণত ডিমপ্রতি ১৫ থেকে ২০ পয়সার মতো মুনাফা করলেও ৯ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে তারা ডিম প্রতি ২ টাকা ৭০ পয়সা করে মুনাফা করেছেন।
ফলে ডিমের দাম এক পর্যায়ে ডজনে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় পৌঁছায়।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments