রোলস রয়েস কাণ্ড: আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৫৬ কোটি টাকা জরিমানা

আমদানি করা বিলাসবহুল রোলস রয়েস গাড়িটি শুল্কায়ন না করেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

আমদানি করা একটি বিলাসবহুল রোলস রয়েস শুল্কায়ন না করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটসকে ৫৬ কোটি টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে অবস্থিত জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস লিমিটেড অনন্ত গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।

যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটির বাজারমূল্য ২৭ কোটি টাকা। গত ৬ জুলাই ঢাকায় জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বাড়ি থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। এর আগে ১৭ মে গাড়িটি গোপনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়েছিল।

শুল্ক বিধি অনুযায়ী, কাস্টমসের শুল্কায়ন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো পণ্যই বন্দর বা কাস্টমস হাউস ছাড়ানোর সুযোগ নেই।

কাস্টমস আইন ১৯৬৯ এর ৯, ১০, ১৬, ১৮, ৮০ ও ১১১ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফায়জুর রহমানের সই করা আদেশে জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটসকে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

গত ১২ অক্টোবরের ওই জরিমানার আদেশের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

আদেশে বলা হয়, রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবেদন করলেও জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। ফলে জরিমানা ছাড়াও তাদের শুল্ক বাবদ দিতে হবে প্রায় ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

যোগাযোগ করা হলে জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আমরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার হচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'তারা আমাদের কোম্পানির বিরুদ্ধে ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ করছে এবং গাড়ি আমদানির জন্য প্রায় ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে বেপজার অনুমতিসহ সব কাগজপত্র আমাদের আছে।'

'আমরাও আইনের আশ্রয় নেবো,' বলেন তিনি।

কাস্টমসের নথি অনুযায়ী, গত ১৭ মে গাড়িটি যুক্তরাজ্যের ভারটেক্স অটো লিমিটেড থেকে আমদানি করে বাংলাদেশের অনন্ত গ্রুপ ও হংকং নাগরিকের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জেড এন্ড জেড ইনটিমেটস লিমিটেড। 

আমদানি নথিতে ৬৭৫০ সিসির গাড়িটির দাম দেখানো হয়েছে ২ লাখ ডলার।

কাস্টমস নথি সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের ১৭০ সিপিসি (কাস্টমস প্রসিডিউর কোড) এর সুবিধায় আনায় প্রতিষ্ঠানটির ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার শুল্ক ছাড় পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও নাম পরিবর্তন করায় এবং এনবিআর এর যথাযথ অনুমোদন না পাওয়ায় শুল্ক ছাড় দিচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। 

বিচার আদেশে বলা হয়েছে, ২০০০ সিসির বেশি গাড়ি এ সুবিধায় আমদানিকৃত সুযোগ না থাকলেও ৬৭৫০ সিসির গাড়ি আমদানি করায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না আমদানিকারক। 

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফয়জুর রহমানকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেটের (সিআইআইডি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিআইআইডি গাড়িটি অবৈধভাবে খালাসের জন্য আটক করে। সম্প্রতি এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে নিয়মানুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

7h ago