স্থানীয় আরও দুই প্রতিষ্ঠানকে হ্যান্ডসেট তৈরির অনুমতি দিল বিটিআরসি

বিটিআরসি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, সর্বনিম্ন রিচার্জের সীমা,
ফাইল ফটো

আরও দুই স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও সংযোজনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। হ্যান্ডসেট বাজারে মন্দার মধ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হলো।

প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে স্যালএক্সট্রা লিমিটেড ও হালিমা মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিজ। এই দুই প্রতিষ্ঠান নিয়ে দেশে এখন মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭টি।

তবে এলসি খোলায় সমস্যার কারণে হালিমা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার হালিমা মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিজ এখনো উৎপাদন শুরু করতে পারেনি।

অন্যদিকে, স্যালেক্সট্রা লিমিটেড তাদের গাজীপুর ইউনিটে নকিয়া ব্র্যান্ডের স্মার্ট ও ফিচার ফোন তৈরি করছে।

২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার ও বাংলাদেশের ইউনিয়ন গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড প্রথম নকিয়া ডিভাইস সংযোজনের অনুমোদন পায়।

ইউনিয়ন গ্রুপ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেলুলার মোবাইল (প্রাইভেট) লিমিটেডের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে প্রথম নকিয়া ডিভাইস আমদানি করে।

সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিরোধের কারণে গত বছর স্থানীয়ভাবে নকিয়া ডিভাইস উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

স্যালেক্সট্রাকে দেশীয় প্রযুক্তি-ডিভাইস উৎপাদনকারী স্টার্টআপ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব আরাফাত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সম্প্রতি বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পেয়েছি। এইচএমডি গ্লোবালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমরা এখন দেশে নকিয়া ব্র্যান্ডের প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক।'

নকিয়া ও মাইক্রোসফটের সাবেক নির্বাহীদের প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল ২০১৬ সালে নকিয়ার বাজারজাতকরণ ও উৎপাদনের লাইসেন্স পায়।

সাকিব আরাফাত আরও বলেন, 'আমাদের ৫৪ হাজার বর্গফুটের কারখানায় এখন নকিয়া ফোন সংযোজন করছি। শিগগির উৎপাদনে যাবো।'

তিনি জানান, ২০২০ সালে স্যালএক্সট্রা মাত্র পাঁচ কর্মচারী নিয়ে স্টার্টআপ হিসেবে চালু হয়। এখন সংখ্যাটি প্রায় ৫০০ হয়েছে।

নোকিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টওয়াচ, নেকব্যান্ড হেডফোন, ইয়ারবাড ও অন্যান্য গ্যাজেট তৈরি করছে।

তিনি আরও জানান, তাদের ছয়টি উৎপাদন লাইনে তিন লাখ ফিচার ও স্মার্টফোন তৈরির সক্ষমতা আছে। মোবাইল অপারেশনে কাজ করছেন ৩৭০ জন। তাদের ৪০ শতাংশই নারী।

গত এক মাসে স্থানীয় বাজারে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার নকিয়া হ্যান্ডসেট বিক্রি করেছে স্যালএক্সট্রা।

অন্যদিকে, চার্জার, ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক ও ফিচার ফোনের এক্সেসরিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হালিমা গ্রুপ এখন থেকে নিজস্ব ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন তৈরি করবে।

অনুমোদনের পর প্রতিষ্ঠানটি মূলত ফিচার ফোন উত্পাদনে জোর দেবে। পরে স্মার্টফোন তৈরির পরিকল্পনা করবে।

হালিমা মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিজের মোবাইল অপারেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এজাজ হোসেন খান জয় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা স্মার্টফোন ডিজাইনের পরিকল্পনা করছি।'

প্রতিষ্ঠানটিতে এখন প্রায় ১৩০ জন কাজ করছেন। এর তিনটি অ্যাসেম্বলি লাইনে প্রতিদিন সাত হাজার মোবাইল ফোন উত্পাদন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মীই নারী।'

তবে এলসি খুলতে অসুবিধা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি কাঁচামাল সংকটে ভুগছে। তাই এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, 'প্রয়োজনীয় উপকরণ আনতে একটু সময় লাগবে।'

গত এক বছর ধরে মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে জটিলতায় ভুগছে। এর প্রভাব পড়েছে পুরো সরবরাহ ব্যবস্থায়।

এ ছাড়াও, ২০২৩ সালে স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন কমেছে। ২০১৭ সালে দেশীয় উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। করের পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুসারে, গত বছর দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো দুই কোটি ৩৩ লাখ মোবাইল ফোন তৈরি করেছে। আগের বছরের তুলনায় তা ২৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ কম।

গত দুই বছর ধরে ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতাদের খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এ ছাড়াও, কালোবাজারি এই শিল্পের জন্য আরেকটি বড় হুমকি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিশাল কর সুবিধার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে।

২০১৭ সালের শেষে দেশে যখন বিপুল কর সুবিধা দিয়ে স্থানীয় পণ্য উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়, তখন দেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ৪০ হাজার সেলফোন তৈরি করেছিল।

কিন্তু পরের বছর যখন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে উৎপাদন কারখানার জন্য স্যামসাং, টেকনো ও সিম্ফনিসহ শীর্ষ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে তখন পরিস্থিতি বদলে যায়।

বিটিআরসির তথ্য অনুসারে, ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৫টি কারখানায় ১০ কোটি ৩৫ লাখ হ্যান্ডসেট তৈরি হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Is Motijheel losing its glory as commercial hub?

Motijheel, once the pulsing heart of Dhaka’s trade and commerce, has become a shadow of its former self. Empty office floors now whisper tales of abandoned ambitions.

13h ago