মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন ক্ষতি করে না: বিটিআরসি

মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নির্ধারিত নিরাপত্তা মাত্রার চেয়ে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন টাওয়ারগুলো থেকে বের হওয়া ক্ষতিকর রেডিয়েশন অনেক কম বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

নয় জেলায় মোবাইল টেলিফোনের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিগন্যাল বহনকারী ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের (ইএমএফ) রেডিয়েশন পরিমাপ করে বিটিআরসি পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে, 'এতে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি নেই।'

জরিপে আরেও বলা হয়েছে—ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, রংপুর, গাইবান্ধা, খুলনা ও যশোরের ৯৯টি স্থানে রেডিয়েশন আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ গুণ কম।

যেমন, গত ২২ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে পরিমাপ নেওয়ার সময় প্রতি বর্গমিটারে শূন্য দশমিক ০১৪৫৩ মিলিওয়াট (এমডব্লিউ/ এম²) রেকর্ড করা হয়েছিল।

ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রোটেকশন, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের (ইএমএফ) সংস্পর্শের জন্য অনুমোদিত সীমা প্রতি বর্গমিটারে দুই দশমিক ১০৬ মেগাওয়াট।

তাই রেডিয়েশনের বর্তমান মাত্রা জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য হুমকি নয় বলে বিটিআরসির জরিপগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, সেলফোনগুলো মূলত রেডিওফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গের মাধ্যমে কাছাকাছি সেল টাওয়ারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে। এটি এফএম রেডিও তরঙ্গ ও মাইক্রোওয়েভের মধ্যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামে শক্তির একটি রূপ।

এফএম রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, দৃশ্যমান আলো ও তাপের মতো এগুলো নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের রূপ।

এর অর্থ তারা সরাসরি কোষের ভেতরে ডিএনএর ক্ষতি করে না। এর ফলে এক্স-রে, গামা রশ্মি ও অতিবেগুনী (ইউভি) রশ্মির মতো শক্তিশালী (আয়োনাইজিং) বিকিরণ ক্যানসারের কারণ হতে পারে বলে মনে করা হয়।

মানবদেহে রেডিও তরঙ্গের কয়েকটি পরিচিত প্রভাবগুলো মধ্যে একটি হলো শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রার খুব সামান্য বেড়ে যাওয়া। তবে এর যে সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নেই তা নিশ্চিত করতে গবেষণা চলছে।

এর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টাওয়ার থেকে যে পরিমাণ বিকিরণ হয় তাতে সমস্যা হবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'আপনি আলো ছাড়া পড়তে পারবেন না এবং একইভাবে খুব বেশি আলো চোখের ক্ষতি করতে পারে। অ্যান্টেনা থেকে ন্যূনতম মাত্রার বিকিরণ দেওয়া হয় এবং সুরক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনা করে সেগুলো ডিজাইন করা হচ্ছে, যাতে ফোনে কথা বলার সময় কারো কোনো সমস্যা না হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'যারা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা হয়ত বিষয়টি জানেন না। পৃথিবীতে যখন ওয়ানজি বা টুজি চালু হয় তখন তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তারা এখনো আতঙ্কে আছেন। এখন বিশ্বে সিক্সজি চালুর প্রস্তুতি চলছে। তারা যদি সঠিক হতেন, তাহলে প্রযুক্তির এত অগ্রগতি হতো না।'

টেলিযোগাযোগ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, ফোন মাস্ট থেকে বের হওয়া রেডিও তরঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকিকে ঘিরে ভিত্তিহীন ভয় উচ্চমানের টেলিকম পরিষেবার অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি টেলিকম ও টাওয়ার পরিষেবা সরবরাহকারীদের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বিশেষ করে, ঢাকা ও অন্যান্য মহানগর এলাকায় ভবন মালিকরা ভবনের ছাদ সার্ভিস প্রোভাইডারদের ইজারা দিতে চাচ্ছেন না।

অ্যান্টেনার কাছে থাকার ফলে বিকিরণের (রেডিয়েশন) সংস্পর্শ বাড়তে পারে এমন ভিত্তিহীন উদ্বেগ থেকে তাদের এই অনীহা। এই ধরনের আশঙ্কা টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও প্রসারে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিটিআরসির কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, টাওয়ার বসানোর জন্য সংস্থাটি প্রতি মাসে বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০টিরও বেশি অনুরোধ পায়। আবার একই সময়ে রেডিও তরঙ্গের ভয়ে টাওয়ার সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ আসে পাঁচ থেকে সাতটি।

রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভিত্তিহীন আশঙ্কার কারণে প্রতি বছর আমাদের বেশ কয়েকটি টাওয়ার সরিয়ে নিতে হয়।'

অপারেটরগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন—মানসম্মত সেবা দিতে, কলড্রপ কমাতে ও ডেটা সরবরাহের গতি বাড়াতে তাদের সারাদেশের শহরগুলোয় শত শত টাওয়ার বসানো প্রয়োজন।

চলতি বছরের শুরুতে শুধু ঢাকার কয়েকটি জায়গায় গ্রামীণফোনের আরও ৩০০ টাওয়ারের প্রয়োজন ছিল। বিটিআরসির সহায়তায় অনেক চেষ্টার পর ৩০টি টাওয়ার বসানো সম্ভব হয়েছে বলে এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'টাওয়ার বসানোর সঙ্গে জড়িত এ ধরনের সমস্যাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখনো রয়ে গেছে।'

একটি নতুন মূল্যায়নের মাধ্যমে রাজধানীতে রবির আরও প্রায় ২৫০ টাওয়ার বসানো খুব জরুরি ছিল।

মোহাম্মদ সাহেদুল আলম জানান, নানা কারণে ঢাকায় টাওয়ার বসাতে প্রতিষ্ঠানটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

তিনি বলেন, 'বাড়ির মালিকরা জায়গা দিতে চান না। তারা রেডিয়েশন এক্সপোজার বিষয়ে অবৈজ্ঞানিক উদ্বেগে ভোগেন। টাওয়ারের অভাব ও নতুন অ্যাপার্টমেন্টের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।'

তার মতে, ভাড়া হিসেবে বেশি টাকা আরেকটি উল্লেখযোগ্য বাধা। অন্যান্য টাওয়ারগুলোয় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সংযোগের জন্য স্পষ্ট লাইন না থাকায় অসুবিধা আরও বেড়েছে।

'কিছু এলাকায় সমন্বয়হীন ও অপরিকল্পিত নগরায়ন টাওয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরেকটি বড় বাধা' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তা সত্ত্বেও রবি ঢাকায় নেটওয়ার্ক প্রসার নিশ্চিত করতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে।'

বাংলালিংকের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানসম্মত সেবার সুবিধার্থে আমাদের কয়েক ডজন টাওয়ার বসাতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

2h ago