আমদানি বিল পরিশোধে বিলম্ব দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে: বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশি মুদ্রা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হলেও ব্যাংক সময়মত আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছে না, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

বিলম্বে আমাদানি বিল পরিশোধ করলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা। 

গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আমদানি বিল পরিশোধে বিলম্ব ও পরিশোধ করতে না পারায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় বাড়ছে, যা উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাওয়া মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এখন পর্যন্ত বকেয়া আমদানি বিল দাঁড়িয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি বকেয়া আছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকা ও ডলার সংকট, আমদানিকারকদের সহজে ঋণ না পাওয়া এবং ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতির কারণে ব্যাংকগুলো সময়মত আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছে না। 

গত সোমবার এক বৈঠকে ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমদানি বিলম্বের বিষয়ে আলোচনা হয়।

এরপর গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, ঋণ পরিশোধে বিলম্বের কারণে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে এবং আমদানি ব্যয় বাড়ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তারপরও আমদানি পরিশোধে বিলম্ব 'কাম্য নয়'।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিলম্বে বিল পরিশোধের ফলে বাংলাদেশের সুনামের ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এতে কনফারমেশন চার্জ, ট্রেড ক্রেডিট ইত্যাদি কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কিছু ব্যাংক, বিশেষ করে দুই বা তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও কিছু শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ক্রমাগত আমদানি বিল পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে শেষ পর্যন্ত আমদানি ব্যয় বাড়ছে।

তিনি বলেন, 'স্থানীয় কোনো কোনো ব্যাংককে চার শতাংশ পর্যন্ত কনফারমেশন চার্জ দিয়ে আমদানি পরিশোধ করতে হবে, যা আগে ছিল দুই থেকে দুই দশমিক ৫০ শতাংশ।'

তিনি জানান, আমদানি বিল পরিশোধে বিলম্বের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো বেশি কনফারমেশন চার্জ আরোপ করেছে। 

আমদানি কনফারমেশন চার্জ বাবদ বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, দেশের আর্থিক খাতের সুনাম নষ্ট হওয়ায় কিছু বিদেশি ব্যাংক ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে, আবার কোনো কোনো ব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ঋণ স্থগিত করছে।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, দুবাইভিত্তিক মাশরেক ব্যাংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জন্য তাদের ঋণ কমিয়ে দিয়েছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, গ্রাহকভেদে ঋণপত্র নিশ্চিত করার চার্জ ছিল বছরে দুই দশমিক ৫০ থেকে তিন শতাংশের মধ্যে। কিন্তু সময়মত আমদানি বিল নিষ্পত্তি করতে না পারায় তা আরও বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আগে বিদেশি ব্যাংকগুলো আমদানিকারক বা গ্রাহকের পরিচয় নিয়ে মাথা ঘামাতো না, কিন্তু এখন তারা জানতে চায় গ্রাহক কারা।

তার ভাষ্য, 'কোনো কোনো ব্যাংক শুধু বলছে- আমরা এখনো গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো পেমেন্ট পাইনি, তাই আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছি না। কিন্তু আসল কথা হলো, ব্যাংকের এটা বলার অধিকার নেই।'

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'কোনো কোনো ক্ষেত্রে যখন আমদানিকারকরা যখন ব্যাংকে অর্থ পরিশোধ করে না, তখন ব্যাংক গ্রাহকের দায়কে ফোর্স লোন তৈরি করে এবং ব্যাংক এ অবস্থায় আমদানি বিল পরিশোধ করতে চায় না।'

আমদানি বিল পরিশোধে বিলম্বের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ

বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে অবিলম্বে অনিষ্পত্তিকৃত আমদানি বিল পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, ঋণপত্র ইস্যু করার আগে ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের জন্য যথাযথ ঋণের উৎস আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঋণ সুবিধা ছাড়া আমদানিকারকদের পক্ষে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে আমদানি পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ এবং সম্ভাব্য তহবিল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন নির্দেশিকা অনুযায়ী- অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে বা ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে বায়ার ক্রেডিটে আমদানি অর্থায়ন করতে হবে।

ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সতর্ক করেছে, সময়মত আমদানি বিল নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে লেনদেনের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জবাবদিহিতাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh continues to perform poorly in budget transparency

Bangladesh has continued to showcase a weak performance in the open budget rankings among its South Asian peers, reflecting a lack of transparency and accountability in the formulation and implementation of fiscal measures.

15h ago