ওরিয়ন ফার্মার ১৩২ কোটি টাকার ঋণ বিশেষ অনুমোদনে পুনঃতফসিল

ওরিয়ন ফার্মা, ওরিয়ন গ্রুপ, অগ্রণী ব্যাংক, ঋণ পুনঃতফসিল, বাংলাদেশ ব্যাংক,

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে ওরিয়ন গ্রুপের ওষুধ কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডকে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে ফোর্সড/ডিমান্ড ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

সাধারণত যখন কোনো ঋণগ্রহীতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণপত্রের অর্থ দিতে ব্যর্থ হন, তখন সেই পরিমাণ অর্থ ফোর্সড বা ডিমান্ড ঋণে পরিণত হয়। কারণ সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বিদেশি ব্যাংকের বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের মধ্যে ২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুযায়ী, যে কোনো ফোর্স বা ডিমান্ড ঋণ পুনঃতফসিল ও পরিশোধের সময়সীমা দুই বছর বা তার বেশি সময় বাড়াতে হলে ঋণের বিপরীতে শতভাগ জামানত দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ঋণ আদায়ে ঝুঁকি কমাতে ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ঠেকাতে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংক ওরিয়ন ফার্মার মোট ১ হাজার ৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে ১৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। একইসঙ্গে এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ছয় বছর বাড়ানো হয়। অথচ কোম্পানিটির প্রায় ৫৪৭ কোটি টাকার জামানত ঘাটতি ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত মে মাসে অগ্রণী ব্যাংককে চিঠি দিয়ে জানায়, ওষুধ উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে ওরিয়ন ফার্মার ক্ষেত্রে এই সমঝোতা স্মারকের শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

তবে অগ্রণী ব্যাংকের ওপর দুটি শর্ত আরোপ করেছিল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

একটি হচ্ছে ওরিয়ন ফার্মাকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ৫৪৭ কোটি টাকার জামানত ঘাটতি পূরণ করতে হবে। অন্যটি হচ্ছে প্রতি তিন মাস পর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জামানত সংগ্রহের পরিস্থিতি নিয়ে আপডেট তথ্য জানাতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় বিধি-বিধান থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ অনুমোদন দিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, খাত বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এই অনুমোদন দেওয়া হয়, যেমন বিদ্যুৎ বা ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান।

এদিকে গত মে মাসে অগ্রণী ব্যাংক পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল। তখন দেখা যায়, ১৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকার ডিমান্ড ঋণ তৈরির ফলে ওরিয়ন ফার্মার মোট ঋণ ব্যাংক কোম্পানি আইনের একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা অতিক্রম করেছে।

আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার পরিশোধিত মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি একক গ্রাহককে ঋণ দিতে পারে না।

এর আগে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ওরিয়ন ফার্মার মোট ঋণ একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে পরিদর্শক দল জানতে পারে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে কোম্পানিটির ঋণ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রতিবছর তাদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে আরও বলা হয়ে, এই নথিগুলোর নির্ধারিত শর্ত ব্যাংকের সকল গ্রাহকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তাই কোনো বাছাই করা গ্রাহককে সমঝোতা স্মারকের শর্ত থেকে অব্যাহতি দেওয়া যৌক্তিক নয়।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুরশেদুল কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে অগ্রণী ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া পর্যাপ্ত ডাউন পেমেন্ট সাপেক্ষে ওরিয়ন ফার্মার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

তার ভাষ্য, 'এই সুবিধা দেওয়ার জন্য আমাদের কোনো দোষ নেই।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথিতে দেখা যায়, ওরিয়ন ফার্মাকে যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৯৬৩ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এর একটি অংশ পরে ফোর্সড ঋণে পরিণত হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকে ওরিয়ন ফার্মার মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

যোগাযোগ করা হলে ওরিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, অগ্রণী ব্যাংক নিয়ম-নীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি অনুযায়ী ঋণ পুনঃতফসিল করেছে।

তিনি বলেন, আগে যে জামানত দেওয়া হয়েছিল তাতে নারায়ণগঞ্জে ওরিয়ন ফার্মা পার্কের সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তখন এগুলো সম্প্রসারণের কাজ চলছিল।

'সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে ও ওরিয়ন ফার্মা পার্ক উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'খুব শিগগিরই ব্যাংককে ওরিয়ন ফার্মা পার্কের সম্পদ জামানত হিসেবে উপস্থাপন করে নথি সরবরাহ করা হবে, যা ঋণের জন্য যথেষ্ট হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Are battery-run rickshaws Dhaka’s newest traffic menace? Hear what city dwellers think!

Dhaka's battery-run rickshaws spark debate over efficiency versus safety. Critics cite accidents, recklessness, and safety concerns, while supporters highlight cost-effectiveness. A High Court ban fuels tensions, affecting livelihoods and intensifying calls for regulation over elimination.

2h ago